গরীরের পাওনা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১:১১:০৭ অপরাহ্ন
মুন্সি আব্দুল কাদির :
করিম আমাকে বিশ হাজার টাকা দাও, আমি এই টাকা একটা এতিমের বিয়েতে দেব। রহিম সাহেবের পড়ন্ত বিকেল। যে কোন সময় পরকালের ডাক এসে যেতে পারে। চুল দাঁড়ি এক্কেবারে সাদা ধবধবে। আগে তিনি ধর্ম কর্ম করতেন না। এখন যেন দ্বীনের কাজই তার মূল। মসজিদের কাজে প্রয়োজনে সব সময় ব্যস্ত থাকেন। কৈশোর, যৌবন, চাকুরী জীবন এর ধারে কাছেও তিনি ছিলেন না। শুধু টাকার পিছনে ছুটেছেন। ছেলেদেরকে এরকম করে গড়ে তুলেছেন।
আজকাল অন্য দশজন বাবা মা যেভাবে সন্তানদের গড়ে তুলছেন, গড়ে তুলতে চাচ্ছেন যে ছেলে মেয়েদের মাথার হর হামেশা এই কথাটাই ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে থাকেন। তুমি লেখাপড়া করে বড় হবে। বড় হয়ে তুমি অনেক টাকা কামাই করবে। রহিম সাহেব ছেলেদের বুঝিয়েছেন তোমার জীবনের আসল উদ্দেশ্য শুধু টাকা। তুমি বড় হবে, ভাল মানুষ হবে, মানুষের উপকার করবে কথা আগে ছেলেদের বলেন নাই বললেই চলে। এতে করে ছেলেরা মানবতা ভুলে গেছে। দিন দিন আত্মকেন্দ্রিক হয়েছে। মাথা নামক মেমোরিতে টাকা ছাড়া আর কোন কিছুই নেই। সেখানে দ্বীনের বিধান, হালাল হারামের প্রশ্ন অবান্তর। তবে রহিম সাহেব ভাগ্য খুব ভাল ছেলেদেরকে দ্বীন শিক্ষা না দিলেও ছেলেরা পিতা মাতার অবাধ্য হয়নি হয়েছে খুব অনুগত।
করিম বাবার দিকে চেয়ে বাবাকে প্রশ্ন করে, বাবা এত টাকা দিয়ে দিবে? বাবা বলে হ্যাঁ আমাদেরকে তো আল্লাহ অনেক টাকার মালিক করেছেন, আমাদের উচিত মানুষের বিপদে তাদের পাশে দাঁড়ানো। বাবা মানুষের পাশে দাড়াতে গেলেতো টাকা খরচ হয়ে যাবে করিম জবাব দেয়। এই যে ছোট কাল থেকে তোমরা আমাদের শিক্ষা দিয়েছ, গড়ে তুলেছ, অনেক টাকা চাই। তুমিও এই টাকার পিছনে ছুটেছ। তোমাদের শিক্ষা পেয়ে আমরা দুই ভাইও টাকার পিছনে ছুটছি। আমাদের কোন অবসর নেই। আরাম আয়েশ নেই। ঘুমানোর আগ পর্যন্ত শুধু টাকার জন্য কাজ করছি। বাবা তুমি দ্বীনের পথে ফিরেছ। সারাক্ষন দ্বীনের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাক। তোমার মধ্যে এখন আরো টাকা চাই আরো টাকা চাই, এই ভাব নেই। তোমার জমানো সব টাকা তুমি আমাদেরকে দিয়ে দিয়েছ। এখন আমাদের কাছ থেকে নেও। এটা তোমার ইচ্ছা। তুমি আমাদেরকে সব না দিয়ে দিলেও পারতে। এখনও নিয়ে গেলে পার। তুমি আমাদেরকে অনেক ভালবাস। বিশ্বাস কর। এইখানে বাবা তুমি সফল। কিন্তু আজকের এই দ্বীনদারী তুমি যদি আগে থেকেই করতে তাহলে আমরা তোমাদের দেখে দ্বীন অনুসরণ করতাম। এই টাকার পিছনে এত ছুটতাম না। এই দেখ তোমারই বন্ধু ঐ বাড়ির আকবর চাচা চাকুরী থেকে অবসরে আসার কয়েকদিন পর মারা গেলেন। তোমার মত তিনিও টাকার পিছনে ছুটেছেন। তোমার মত সময় পেলেন না। দ্বীনের পথেও ফিরে আসলেন না। পরকাল চাচার কেমন হবে। আমরা দোয়া করি আল্লাহ চাচাকে মাফ করে দিন।
হ্যাঁ করিম। আমি চাকুরী থেকে অবসরের বেশ কিছু দিন হল। বেঁচে আছি, সুস্থ আছি, দ্বীনের পথে চলার চেষ্টা করার বুঝ মহান আল্লাহ দিয়েছেন, এর জন্য তাঁর কৃতজ্ঞতা। আসলে হেদায়েত দ্বীনের বুঝ আল্লাহর বিশেষ এক দান। আগে আমি টাকার পিছনে ছুটতে গিয়ে দ্বীনকে টাকা রুজির পথে বাঁধা মনে করতাম। আসলে দ্বীন প্রত্যেক কাজে একটি গাইড লাইন দিয়ে দেয় সেটা বুঝতাম না। এখানে মানুষের হক, আল্লাহর হক, সেবা প্রত্যাশীদের হক, কাস্টমারের হক, চাকুরীজিবির অধিকার, চাকুরীদাতার অধিকার সব কিছুর সীমা রেখা এঁকে দেয়। এই সীমার মধ্যে চললে কোন বাঁধা নেই। সীমা অতিক্রম করা অর্থাৎ হক নষ্ট করার অধিকার কারো নেই।
এতদিন টাকার পিছনে ছুটেছি, আল্লাহ অনেক টাকা দিয়েছেন। এখন এই টাকা যেন তাঁর মর্জি মোতাবেক খরচ করতে পারি, তোমরা খরচ করতে পার এই চেষ্টা করতে হবে। দেখ আমাদের আল্লাহ টাকা দিয়েছেন। এর মধ্যে আবার অভাবগ্রস্ত, ফকির মিসকিনদের হক রেখেছেন। অর্থাৎ তাদের টাকাটাও আমাদের হাতে দিয়েছেন। আমরা এখন পাওনাদারকে পাওনা দেব কি না। সেটা আমাদের ইচ্ছা। কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি চাইলে আমাদের পাওনা পরিশোধ করতে হবে। এই দান তাদের প্রতি দয়া নয়। তাদের পাওনা পরিশোধ। কত সুন্দর মহান রবের ব্যবস্থাপনা। তোমরা বুঝদার, তোমাদেরকে নিয়েই আমার ভুলগুলো আমি শোধরাতে চাই। আমি তোমাদেরকে টাকার পিছনে ছুটিয়ে আমিও ভুল করেছি। হ্যাঁ এই ভুলটাও আমাদের জন্য কল্যাণকর হবে। যদি আমরা রবের দিকে ফিরে আসি। ভাল কাজে বেশি বেশি অর্থ খরচ করতে পারি। যেহেতু তোমরা তোমার পিতার মাতার অনুগত। আজ জীবনের পড়ন্ত বিকেলে আমরা চাই তোমরা দুই ভাই পুরোপরি দ্বীন মেনে চল। অসহায়দের পাশে দাড়াও। মানুষকে সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে জীবনকে উপভোগ করো। পরকালের জন্য প্রস্তুতি নাও।
রহিম সাহেবের নসিহত শোনে করিম ছোট ভাই আকিব তাদের মা, দুই ভাইয়ের বউ সকলেই দ্বীন মেনে চলার চেষ্টা করছে। সাথে নাতী নাতনীদের শিক্ষিত করার পাশাপাশি সৎ মানুষ বানানোর চেষ্টা করছে। সমাজের মানুষের কাছে তাদের দাওয়াত পৌছে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
একদিন বিকালে করিম সাহেব সকলকে নিয়ে দ্বীন শেখার আড্ডা দিচ্ছেন, বিভিন্ন কথার ফাকে আকিব বলে বাবা আমি একটি কথা পড়েছি, সরল অর্থে আপনি যদি আপনার সন্তানকে তিনটি (আর) শেখান পড়া, লেখা এবং গণিত শেখান, কিন্তু চতুর্থ (আর) রিলিজিয়ন ধর্মটা বাদ দেন, না শেখান তাহলে তাহলে আপনি একটা ৫ম (আর) মানে তাকে একটা রাসক্যাল বা বদমাশ হিসেবে পাবেন। অর্থাৎ আপনার সন্তান মানুষ হবে না। বাবা অতিতে যাহাই করেছি, এখন মানুষ হতে চাই। আল্লাহকে চিনতে চাই। মহান রব আমাদের সাহায্য করুন।