যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচন
কেন আগাম নির্বাচন দিলেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জুন ২০২৪, ৪:১০:৪৬ অপরাহ্ন
মোঃ রহমত আলী, লন্ডন থেকে : এবারে যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচন নিয়ে জল্পনাকল্পনা ছিল সব মহলেই। কারণ, নিকট অতীতে যারাই প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তাদের অনেকেরই অবস্থা ছিল ক্ষণস্থায়ী। এমনও হয়েছে যে, কোন কোন প্রধানমন্ত্রীর একমাসের সামান্য অধিক সময় ক্ষমতায় টিকে থাকার নজির রয়েছে। সে হিসাবে কিছুটা দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকলেও অনেকটা হঠাৎ করেই দেশে সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। যা নিয়ে নতুন করে কৌতূহল দেখা দিয়েছে সব মহলে। তাদের আগ্রহের বিষয় হলো- কেন আগাম নির্বাচনের ডাক দেয়া হলো আর কেনইবা নির্বাচনের জন্য এই সময়টাকে বেছে নেয়া হল, আর এ জন্য কি গাজা বা ফিলিস্তিন ইস্যু অন্যতম কারণ?
গত ২২ মে লন্ডনে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে খোলা আকাশের নিচে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে সুনাক বলেন, পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন রাজা দ্বিতীয় চার্লস। তাই ৪ জুলাই হবে যুক্তরাজ্যের জাতীয় নির্বাচন। ঘোষণাটি দেবার সময় সুনাককে বেশ হতাশই দেখাচ্ছিল। কারণ, নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে। মূলত, ক্ষমতাসীনদের নড়বড়ে পরিস্থিতির জন্যই আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন সুনাক। এ সময় তিনি বলেছেন, এখন ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ বেছে নেওয়ার সময় এসেছে। এজন্য ঘোষণা দেয়ার সাথে সাথে কালবিলম্ব না করে ভোটের জন্য লড়াই করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি। এরপর দেশটির সংবিধান অনুযায়ী পার্লামেন্টের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তবে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার আগে কয়েকদিন তা মূলতবি রাখা হয়। সে হিসাবে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের ঘোষণা অনুযায়ী, ২৪ মে শুক্রবার পার্লামেন্ট মুলতবি রাখা হয় এবং ৩০ মে বৃহস্পতিবার তা বন্ধ করে দেয়া হয়।
পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পর পদ হারিয়েছেন সংসদ সদস্যরা। এমতাবস্থায় যারা আবার নির্বাচন করতে চান, তারা নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় ফিরে গিয়ে প্রচারে নামবেন। তবে তারা এমপি হিসেবে নন, কেবলমাত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে থাকবেন। তবে, নির্বাচনের আগ পর্যন্ত মন্ত্রীরা আগের মতোই দায়িত্ব পালন করে যাবেন। এ সময় সরকারি কর্মকান্ড সীমিত থাকবে। রাজনৈতিক উদ্দেশে প্রচারে কোনোভাবেই রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় করা যাবে না।
যুক্তরাজ্যে বর্তমান ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি ২০১০ সাল থেকে টানা তিনবার ক্ষমতায় আছে। এ সময়ে দলটি পাঁচবার প্রধানমন্ত্রী পদে পরিবর্তন এনেছে। কিন্তু দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা এখনও নড়বড়েই রয়ে গেছে। মুদ্রাস্ফীতির কারণে দেশটির সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় যেন আকাশচুম্বী। এমন পরিস্থিতিতে গত ২ মে অনুষ্ঠিত হয় স্থানীয় কাউন্সিল নির্বাচন। আর এই নির্বাচনে ব্যাপক ভরাডুবি হয় কনজারভেটিভ পার্টির। সে প্রেক্ষিতে সরকার দলের জনসমর্থন কমে গেছে বলে আগাম জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল বিরোধী দল লেবার পার্টি।
কনজারভেটিভ পার্টি এখন অনেকটাই বিভক্ত। দলটির নেতাকর্মীরাও হতাশ। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার বিষয়টি নিয়েও কনজারভেটিভ পার্টির একাংশের মধ্যে বেশ দ্বিধা কাজ করছিল। এরইমধ্যে সুনাক নির্বাচনের ‘দিন’ নির্ধারণ করায় বিরক্তি প্রকাশ করেছেন দলটির অনেকেই। তাই দলটির এই নড়বড়ে পরিস্থিতির কারণে, টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পর এবার তাদের পরাজয় হতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকেই।
এদিকে, লেবার পার্টির নেতা কেইর স্টারমার নির্বাচনের এ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘এ মুহূর্তটির জন্যই দেশ অপেক্ষা করছে।’ তিনি আরও বলেন, পরিবর্তনের এটাই সময়। এদিকে সাম্প্রতিক জাতীয় জনমতে লেবার পার্টি বেশ বড় ব্যবধানে এগিয়ে আছে বলে তথ্যে উঠে এসেছে। তাই এখন তারাও পূর্ণ প্রচারণায় নেমে পড়েছেন।
অন্যদিকে, আগাম নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলে গুঞ্জন চলছে যে, প্রধানমন্ত্রী সুনাকের কাছে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হওয়ার প্রমাণ রয়েছে। এখন তিনি যেসব বিষয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন, তাতে জনগণের সায় আছে কিনা, তা যাচাই করে নিতে চাইছেন। আর স্থানীয় নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হলেও বর্তমান সময়কেই ভোটের জন্য উপযুক্ত ভাবছেন সুনাক, কেননা সামনের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে এবং সে পরিস্থিতি তার হাতে নাও থাকতে পারে। এমনও সম্ভাবনার কথা রয়েছে বলে কেউ কেউ অভিমত প্রকাশ করছেন যে, পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব তাদের বিরুদ্ধে আসতে পারতো। তখন তারা আরও শোচনীয় অবস্থায় বিদায় নেয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো। তাই এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন এই দলটির আবারও ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা খুবই কম।