বন্যায় ক্ষতবিক্ষত কোম্পানীগঞ্জের শিমুলতলা গ্রাম
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ জুন ২০২৪, ১:২৩:৫৬ অপরাহ্ন
আবিদুর রহমান, কোম্পানীগঞ্জ থেকে : পিয়াইন নদীর তীরের ছোট্ট একটি গ্রাম শিমুলতলা। ঢলের পানিতে গ্রামটি এখন ক্ষতবিক্ষত। ঘরদুয়ার ভেঙে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে গেছে। ঘর থেকে পানি নেমেছে। মেঝেতে এখনও থিকথিকে কাঁদা। থাকা-খাওয়ার উপায় নেই। গ্রামের সবাই দরিদ্র। ঘর ঠিক করার মতো সামর্থ্যও নেই। খাদ্য সহায়তা জুটেছে। খেয়েপরে না হয় বাঁচা যাবে। কিন্তু ঘর হবে কীভাবে, এই চিন্তায় এখন দিশেহারা তাঁরা।
শিমুলতলার কৃষক মো. আক্তার হোসেন (৪২) জানান, সম্বল বলতে তার তিন বস্তা সরিষা ছিল। ঢলের পানি ঘরে ঢুকলে বস্তাগুলো বেঁধে রাখেন বরইগাছে। কিন্তু গলা সমান পানিতে ভিজে সরিষাগুলো নষ্ট হয়ে যায়। ঘরের বেড়া ভেঙেছে। আসবাবপত্র পানিতে ভেসে গেছে। এখন কি করবেন- ভেবেই দিন যাচ্ছে তার।
একই অবস্থা হয়েছে দিনমজুর আমির আলীর (৪৫)। ঈদের দিন সাঁতরে গ্রামের পাশের বালির স্তূপে গিয়ে উঠেন। গরু-বাছুর নিতে পেরেছিলেন। বৃষ্টিতে ভিজে পলিথিন, বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে ছাপরা বানিয়ে বালুর স্তূপে পরিবার নিয়ে থাকেন। পানি নেমে গেলে ঘরে ফিরেছেন। কিন্তু ভাঙা ঘরে সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে।
শিমুলতলার পাশের এই বালুর স্তূপে ছাপরা বানিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলো ১২টি পরিবার। তাদের মধ্যে আফিয়া (৫৪) নামের আরও একজন জানান, ‘৯ মণ ধান বন্যার পানিতে ভিজেছে। এখন রোদ ওঠার পর ধান শুকাতে দিয়েছি। ঘর থেকে পানি নামলেও ঘরে থাকার মত আর পরিস্থিতি নেই। এখন কি করব, কই যাব সেই চিন্তায় আছি।’
সরেজমিনে দেখা যায়, ১৪৬টি ঘর নিয়ে শিমুলতলা গ্রাম। ঢলের পানিতে প্রতিটি ঘরই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি নামলেও ঘরের মেঝে-বারান্দায় এখনো কাঁদা। ধসে গেছে কিছু ঘর। হেলে পড়েছে গাছপালা। গ্রামের ভেতরের রাস্তা এবং মাঠজুড়ে কাঁদা লেপ্টে আছে। হেলে পড়েছে গ্রামের একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়টি।
কোম্পানীগঞ্জের ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়নের শিমুলতলায় ২০০০ সাল থেকে বসতি শুরু হয়। সরকারি উদ্যোগে এখানে ভূমিহীনদের ঘর করে দেওয়া হয়। তাই স্থানীয় লোকজন একে গুচ্ছগ্রাম নামে চেনেন। গ্রামের বেশিরভাগ লোকই দিনমজুর। অবস্থান নদীর তীরবর্তী নিচু এলাকায় হওয়ায় বন্যা হলেই গ্রামটি ডুবে যায়। চলতি বছর দুই দফায় ডুবেছে গ্রামটি।
স্থানীয়রা বলছেন, সবার ঘরে কম বেশি খাদ্য আছে। খাদ্যের চেয়ে এখন জরুরি ঘর সংস্কার করা। তাই ঘর নির্মাণের সামগ্রী তাদের বেশি প্রয়োজন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো: দেলোয়ার হোসেন জীবন বলেন, এ গ্রামের প্রতিটি ঘরই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারও বেড়া ভেসে গেছে। কারও ঘরের মেঝের মাটি সরে গিয়ে দেবে গেছে। কোনো কোনো ঘর হেলেও পড়েছে। ত্রাণের পরিবর্তে ঘর মেরামতের উপকরণ পেলে তারা খুশি হতেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুনজিত কুমার চন্দ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামটিতে ত্রাণসহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এই গ্রামের ঘরগুলো পুননির্মাণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটা প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।