পরিবারের চার প্রতিবন্ধী নিয়ে পানিবন্দি অসহায় ফজর বানু
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ জুন ২০২৪, ১:১৭:৩৮ অপরাহ্ন
শহীদনূর আহমেদ, সুনামগঞ্জ থেকে : পরিবারের দুই ছেলে ও এক মেয়ে প্রতিবন্ধী। উপার্জনক্ষম বৃদ্ধা অসুস্থ হয়ে প্যারালাইসড। বন্যার ভয়াবহতা আর হাওরে ঢেউয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মাথা গোঁজার ঠাঁই বসতঘর। টানা ১০ দিন ধরে অক্ষম পরিবারটি বন্যার পানির সাথে যুদ্ধ করলেও সাহায্য করতে আসেনি কেউই।
বলছিলাম দেখার হাওর পাড়ের গ্রাম পাটানবাড়ীর ফজর বানু আর তিতু মিয়া দম্পতির কথা। চলতি বন্যায় অভাব অনটনে দুর্বিসহ সময় কাটছে প্রতিবন্ধী এই পরিবারটির।
বসতভিটার চারদিকে থৈ থৈ করছে বানের পানি। হাওরের উত্তাল ঢেউ আঘাত করছে ঘরের টিনের বেড়ায়। বন্যা চলাকালীন টানা প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ফজর বানু ও তিতু মিয়া দম্পতি দুই প্রতিবন্ধী ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। পরিবারটি এখনো কোনো সরকারি সহায়তার আওতায় আসেনি বলে অভিযোগ করেন তারা।
জানা যায়, ফজরবানু ও তিতু মিয়া দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে দুই ছেলে হাবিবুর রহমান (২৪) ও আতাউর রহমান (২২) পঙ্গু। দুজনই ঠিকমতো কথা বলতে পারে না। ছোট মেয়ে শাহানা বেগম (২০) ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। তারা কেউই সাঁতার জানে না। বাড়িতে বানের পানি ছুঁই ছুঁই করে। চারপাশে বন্যার পানি দেয়ালের মতো বাড়ির সীমানা ঘিরে রেখেছে। কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। যেখানে সুস্থসবল মানুষ বানের পানির তোড় জোর ভয় পেয়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে সেখানে প্রতিবন্ধী সন্তানদের নিয়ে পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। হাওরের উত্তাল ঢেউ আর বন্যায় প্রতিনিয়ত আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের। পরিবারে কোনো উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় খেয়ে না খেয়ে কষ্টে অনিশ্চিত সময় পার করছে অসহায় পরিবারটি।
ফজর বানু জানান, প্রতি বন্যায় সন্তানদের নিরাপদ আশ্রয় নিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয় তাকে। বন্যা মুক্ত নিরাপদ ঘর নির্মাণ করে দিতে সরকার সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি তার। তিনি বলেন, খাস জায়গায় ঘর তুলে কোনোভাবে জীবনযাপন করছি। দুই ছেলে ও স্বামীর ভাতা পাই। মাঝে মাঝে দুয়েকটা এনজিও সহযোগিতা করে। প্রতি বছর বন্যায় আমার বসতঘরের ক্ষতি করে। এবারও বন্যায় ঘরের এক পাশ ভেঙে নিয়েছে। সরকার যদি একটা ঘর নির্মাণ করে দেয় তাহলে ঝুঁকিমুক্তভাবে থাকা যাইতো। না হলে পানি আসলেই পরিবার নিয়ে সার্বক্ষণিক ভয়ের মধ্যে থাকতে হয়।
তিতু মিয়া জানান, আগে লাকড়ি বিক্রি করে পরিবার চালাতাম। এখন হাত পা অবস হওয়ায় কাজ করতে পারি না। সরকার যদি আমাদের দিকে না তাকায় তাহলে আমরা কই যাবো।
স্থানীয় বাসিন্দা লুৎফুর রহমান জানান, পরিবারটি খুবই অসহায়। গ্রামবাসী প্রায় সময় তাদের সাহায্য সহযোগিতা করেন। দিন দিন তাদের অবস্থা খারাপ হচ্ছে। সরকার এতো মানুষকে ঘর দেয়। এই পরিবারটিকে একটা ঘর নির্মাণ করে দিলেও তাদের বড় উপকার হয়।
পৌর মেয়র নাদের বখত জানান, পৌরসভার পক্ষ থেকে এই পরিবারটিকে সবসময় সহযোগিতা করা হয়। প্রতিবন্ধী সন্তানকে ৫০০ টাকা করে ভাতা দেয় পৌর কর্তপক্ষ। দ্রুতই তাদের কাছে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেয়া হবে। বন্যায় ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হলেও টিনের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে বলে জানান তিনি।