ছাতকে ৩১টি মন্ডপে উদযাপিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব প্রতিমায় রং তুলির কাজে ব্যস্ত শিল্পীরা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ৪:১০:০৬ অপরাহ্ন

ছাতক (সুনামগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা ঃ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসব আগামী ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে শুরু হচ্ছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পালনে ছাতকের পাড়া-মহল্লায় চলছে সাজ-সাজ রব। চলছে আকর্ষণীয় পূজা মন্ডপ তৈরির কাজ। বরাবরের মতো এ বছরও পূজা মন্ডপ তৈরীতে ভিন্নতা আনার চেষ্টা করছেন স্ব-স্ব পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দ।
এবছর ছাতক উপজেলার ৩১টি পূজা মন্ডপে উদযাপিত হতে যাচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব। পূজার সময় ঘনিয়ে আসার সাথে-সাথে প্রতিমা শিল্পীদের ব্যস্ততাও বাড়ছে লক্ষণীয়ভাবে। বাঁশ, খড় ও মাটির কাজ শেষ করে চলছে প্রতিমা রংয়ের কাজ। প্রতিমা শিল্পীদের শেষ আঁচড় পড়ার সাথে-সাথেই শঙ্খ ও উলু ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠবে প্রতিটি পূজা মন্ডপ। এ লক্ষেই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রতিটি মন্ডপে চলছে সাজ-সজ্জা ও প্রতিমা তৈরির কাজ। শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে এ মুহূর্তে সনাতন ধর্মালম্বীদের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। উপজেলার ৩১টি পূজা মন্ডপের মধ্যে ১২টি পূজা মন্ডপ পৌরসভার অভ্যন্তরে। এছাড়া, ইসলামপুর ইউনিয়নে ১টি, ছাতক সদর ইউনিয়নে ১টি, নোয়ারাই ইউনিয়নে ১টি, গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নে ১টি, দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের ৪টি, সিংচাপইড় ইউনিয়নে ৩টি, জাউয়াবাজার ইউনিয়নে ৩টি, দোলারবাজার ইউনিয়নে ২টি ও ছৈলা-আফজালাবাদ ইউনিয়নে ৩টি মন্ডপে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে শারদীয় উৎসব পালনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও উপজেলা প্রশাসন, পৌর প্রশাসক এবং থানা প্রশাসনের উদ্যোগে ইতোমধ্যেই পৃথক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব বৈঠকে ৩১টি পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, ইমাম, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এসব বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উৎসব চলাকালে অন্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম পালনে যেন কোনো ব্যাঘাত না ঘটে এমন কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। এ ছাড়া, আজান-নামাজের নির্ধারিত সময়ে গান-বাজনা, উচ্চ শব্দ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজানো এবং আতশবাজী ফোটানো বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়। প্রতি পূজা মন্ডপে নারী-পুরুষদের জন্য পৃথক রাস্তা, সিসি টিভি, নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক টিম রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়। পৌর পূজা উদযাপন পরিষদে সভাপতি অরুণ অধিকারী এবং সাধারণ সম্পাদক দুলন তরফদার জানান, প্রশাসনের বৈঠকের আলোচনা ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে দেয়া নির্দেশনা সকল পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দকে মেনে চলার জন্য স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। বরাবরের মতো এ বছরও ধর্ম-বর্ণ সকলের সার্বিক ও আন্তরিক সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণভাবে শারদীয় উৎসব উদযাপন হবে বলে তারা আশাবাদী। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া হাসান জানান, পূজায় সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে ইতোমধ্যে সকল পূজা কমিটি নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। প্রতিটি মন্দিরে থানা পুলিশের পাশাপাশি আনসার, গ্রাম পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক টিম ও মোবাইল টিম কাজ করবে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবক টিম সড়কে ট্রাফিক পুলিশকে সহায়তা করবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মোস্তাফা মুন্না সকলকে শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব পালনের পরামর্শ দিয়ে বলেন, উৎসব চলাকালীন সময়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব সময়ই নজরদারী থাকবে। ছাতক হচ্ছে উল্লেখযোগ্য সম্পীতির শহর। গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন তিনি। ছাতক সেনাবাহিনী ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর জাবির বলেন, শারদীয় উৎসব উপলক্ষে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সেনাবাহিনী নিয়মিত টহল পরিচালনা করবে। দুর্গোৎসব পালনে রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা মেনে চলার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান তিনি।