‘মার্চ ফর গা জা’ ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে : ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ৬:২১:২৬ অপরাহ্ন

অনলাইন ডেস্ক : ঢাকার ‘মার্চ ফর গাজা’ সমাবেশ ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ ওয়াই রামাদান। গতকাল শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘ঢাকা তার অতুলনীয় আন্তরিকতা দিয়ে বিশ্বকে অবাক করে চলেছে। ১২ এপ্রিল বিশ্ব যা প্রত্যক্ষ করেছে তা ইতিহাসের পাতায় ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সমর্থন ও সংহতির অন্যতম সেরা ঘোষণা হিসেবে লিপিবদ্ধ থাকবে, যা সীমান্ত এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে প্রতিধ্বনিত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের প্রাণশক্তি একটি অকাট্য সত্যকে নিশ্চিত করে। বাংলাদেশ, তার পুরুষ ও নারী, তরুণ ও বৃদ্ধ উভয়ের মাধ্যমে, ফিলিস্তিনি জনগণকে স্বাধীনতা ও স্বাধীনতার সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য শক্তি, উৎসাহ এবং নৈতিক প্রতিরোধ প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ বাংলাদেশিদের মতো মহান জাতি খুঁজে পাওয়া বিরল। এই মহৎ জাতি একটি অপরিবর্তনীয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, একটি ঘোষণা, যা কেবল কথায় নয় বরং নীতিগতভাবে খোদাই করা হয়েছে- বাংলাদেশ ইতিহাসের সঠিক দিকে থাকা ছাড়া আর কিছুই মেনে নেবে না। ফিলিস্তিন এবং এর জনগণের ন্যায্য সংগ্রামের পাশে দাঁড়ানো ছাড়া আর কিছুই গ্রহণ করবে না। এই পৃথিবীর প্রতিটি সম্মানিত আত্মার গভীরে বসবাসকারী এই নীতির সঙ্গে তারা কখনো আপস করবে না।’
‘সমগ্র ফিলিস্তিন থেকে সমগ্র বাংলাদেশের কাছে, আমরা এমন এক জনগোষ্ঠীকে আমাদের শুভেচ্ছা জানাই যাদের মাহাত্ম্য এবং সাহসী অবস্থানকে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ফিলিস্তিন তার বাংলাদেশের ভাইবোনদের কাছ থেকে এটাই প্রত্যাশা করে, আমাদের জনগণ তাদের পূর্ণ অধিকার, তাদের স্বাধীনতা এবং তাদের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার না করা পর্যন্ত তাদের সমর্থনে অনুগত এবং অটল থাকবে।’
বিবৃতিতে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এই মহান জনগণের প্রতি, আমরা আমাদের স্থায়ী অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করি। ফিলিস্তিন এবং এর জনগণ আপনাদের প্রতি অনুগত থাকবে, যতক্ষণ না এটি তাদের পূর্ণ অধিকার, তাদের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করে। আমরা আপনাদের সম্মানজনক অবস্থান কখনও ভুলব না। আমরা বাংলাদেশের জন্য আপনাদের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং অব্যাহত অগ্রগতির জন্য ক্রমাগত প্রার্থনা করি।’
‘ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে, আমরা লাল এবং সবুজ রঙের সমুদ্রের উত্থান প্রত্যক্ষ করেছি। ফিলিস্তিনের পতাকার পাশে বাংলাদেশের পতাকা উড়ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক রাজু স্মৃতি ভাস্কর্যটি এই অসাধারণ দৃশ্যের পটভূমি হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের জাতীয় রং ফিলিস্তিনের সঙ্গে মিশে আছে, সাহসের দুটি পতাকা পাশাপাশি উড়ছে। হাজার হাজার কণ্ঠস্বর, যার মধ্যে শিক্ষার্থী, মা, ইমাম, শিল্পী এবং আরও অনেকে স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের জন্য একযোগে ধ্বনি তুলেছেন।
ঢাকার কণ্ঠস্বর চিৎকার করে উঠবে এবং কখনো নীরব থাকবে না, যতক্ষণ না ফিলিস্তিনি ভাই-বোনেরা দখলদারিত্ব এবং অবিচারের শিকার হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত হিসেবে আমি গত কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের অবিচল সংহতির জন্য কৃতজ্ঞতায় ভরা হৃদয় নিয়ে লিখছি। মিছিল করা প্রতিটি ছাত্র, চিত্রশিল্পী, প্রার্থনাকারী, ইমাম এবং কণ্ঠস্বর তুলে ধরা প্রতিটি বাংলাদেশিকে ধন্যবাদ। গাজার শরণার্থী শিবির থেকে পশ্চিম তীরের জলপাই গাছ পর্যন্ত আপনার সংহতি অনুভূত হয়। ন্যায়বিচারের জয় হবে এই বিশ্বাসকে আপনারা বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করেছেন।
আমার হৃদয় থেকে এবং ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে আপনাদের ধন্যবাদ। আপনারা কেবল সমর্থক নন। আশা, মর্যাদা এবং সংগ্রামে আমাদের ভাই ও বোন। ফিলিস্তিন-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবী হোক। ন্যায়বিচারের জন্য আমাদের যৌথ সংগ্রাম দীর্ঘজীবী হোক।’
প্রসঙ্গত, গতকাল শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণজমায়েত কর্মসূচি ‘মার্চ ফর গাজা’য় ছিল মানুষের ঢল। বেলা তিনটার কিছু পরে এই গণজমায়েত শুরু হয়। বিকেল চারটার কিছু পরে ঘোষণাপত্র পাঠের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শেষ হয়।
গণজমায়েতে বিপুল মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে। সেখানে ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লোগান দেন উপস্থিত জনতা। মঞ্চে এই কর্মসূচিতে সংহতি জানানো বিভিন্ন দলের নেতারা উপস্থিত হন। আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ও বক্তব্য দেন।
ফেসবুকে ‘মার্চ ফর গাজা’ নামে একটি ইভেন্ট পেজ তৈরি করেছে প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট, বাংলাদেশ। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, বিভিন্ন সংগঠন, ইসলামি বক্তা ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ইতিমধ্যে ‘মার্চ ফর গাজা’ শীর্ষক এই কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
এর আগে সকাল থেকেই ‘মার্চ ফর গাজা’ গণজমায়েত কর্মসূচিতে যোগ দিতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুল মানুষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যেতে শুরু করেন। শাহবাগ ও আশপাশে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
দুপুরে মিরপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, বাংলামোটর ও শাহবাগ এলাকা হয়ে খ- খ- মিছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যেতে দেখা গেছে। পিকআপ ভ্যানে করে তরুণদের স্লোগান দিতে দিতে উদ্যানের দিকে যেতে দেখা গেছে।
তেজগাঁও ও খিলগাঁও এলাকায় প্রচুর মানুষকে ট্রেনের ছাদে চড়ে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার জন্য আসতে দেখা গেছে। দুপুরের আগেই পুরো উদ্যান পরিণত হয় জনসমুদ্রে। জন¯্রােত ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। সোহরাওয়ার্দীতে জায়গা না পেয়ে রমনা পার্কসহ আশেপাশের এলাকায় অবস্থান নেন অনেকে। গণসমাবেশে অংশ নেন নারী-শিশু-বয়স্করাও। ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে দাঁড়ান দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা।
‘তুমি কে আমি কে, ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন’ স্লোগানের পাশাপাশি ‘গাজা উই আর উইথ ইউ’, ‘স্টপ জেনোসাইড ইন গাজা’সহ বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড বহন করেন মানুষজন। পাশাপাশি তারা ফিলিস্তিনের পতাকা উড়িয়ে প্রতীকী প্রতিবাদ জানান।
এরপর পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে বিকেল সোয়া ৩টার দিকে ‘মার্চ ফর গাজা’র আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
মার্চ ফর গাজার ঘোষণাপত্র
‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি থেকে ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে জায়নবাদী ইসরায়েলের গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে নিশ্চিত করা; যুদ্ধবিরতি নয়, গণহত্যা বন্ধে কার্যকর সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী ভূমি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এটি পাঠ করেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
তিনি বলেন, আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি পরাক্রমশীল, যিনি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেন, যিনি মজলুমের পাশে থাকেন এবং জালিমের পরিণতি নির্ধারণ করেন। আজ আমরা বাংলাদেশের জনতা, যারা জুলুমের ইতিহাস জানি, প্রতিবাদের চেতনা ধারণ করি। আজকে আমরা সমবেত হয়েছি মৃত্যু ভয়হীন ফিলিস্তিনের গাজার জনগণের পাশে দাঁড়াতে।
গণসমাবেশে অংশ নিয়ে ইসলামিক স্কলার ড. মিজানুর রহমান আজহারী বলেন, জনতার এই মহাসমুদ্র ফিলিস্তিন ও আল আকসার প্রতি আমাদের ভালোবাসার প্রকাশ। ভৌগোলিকভাবে আমরা তাদের থেকে দূরে থাকলেও আজকের এই বিপুল উপস্থিতি প্রমাণ করে আমাদের প্রত্যেকের হƒদয়ে বাস করে একটি করে ফিলিস্তিন।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা কামনায় মোনাজাতে কাঁদেন লাখো মানুষ
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও শান্তি কামনায় ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব আবদুল মালেক পরিচালিত মোনাজাতে অংশ নেওয়া লাখো মানুষের চোখে ছিল অশ্রু। ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলা, শিশু ও নারীদের মৃত্যু, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজা উপত্যকার করুণ বাস্তবতা হƒদয়ে নিয়ে মানুষ প্রার্থনা করেন শান্তির জন্য। বিকেল সোয়া ৪টার দিকে এই বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে বলা হয়, ইসরায়েল ফিলিস্তিনে যে নৃশংসতা চালাচ্ছে, তা মানবতার ওপর চরম আঘাত। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, যেন তিনি নির্যাতিত মুসলমানদের রক্ষা করেন এবং ফিলিস্তিনকে স্বাধীনতার আলো দেখান। একইসঙ্গে মোনাজাতে গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হওয়া, ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়াদের উদ্ধার ও আহতদের সুস্থতা, শিশু ও নিরীহ নাগরিকদের জীবন রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ, বিশ্ব নেতাদের বিবেক জাগ্রত হওয়া, নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর অব্যাহত আগ্রাসনের বিচার চেয়ে দোয়া করা হয়।
ইসরায়েলি পণ্য বর্জনে লিফলেট বিতরণ
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া মানুষের কাছে ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের আহ্বানে লিফলেট বিতরণ করছে বিভিন্ন সামাজিক ও ছাত্র সংগঠন। লিফলেটে সবাইকে ইসরায়েলি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পণ্য বর্জনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
‘মার্চ ফর গাজা’য় অংশ নেন রাজনৈতিক দলের যেসব নেতারা
‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে লাখো মানুষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গণসমাবেশে অংশ নেন। গণসমাবেশে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন।
এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আব্দুস সালাম আজাদ, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ, উত্তরের রেজাউল করিম; বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক; লেবার পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান; গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর; গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান; জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ; এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জুসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন। এক সময় তাদের মঞ্চে দাঁড়িয়ে হাতে হাত ধরে একাত্মতা প্রকাশ করতে দেখা যায়।
‘আহত ফিলিস্তিনি’ হয়ে যোগ দেয় শিশুরা
সব বয়সী মানুষের এই গণজমায়েতে সবার দৃষ্টি কাড়ে একদল শিশু। তারা কেউ মাথায় ব্যান্ডেজ, কেউ হাত-পা বেঁধে , কেউবা হাতে করে নিয়ে এসেছিল ছোট কফিনে মোড়ানো ‘শিশু লাশ’। এভাবেই ‘আহত ফিলিস্তিনি’ সাজে মিছিলে অংশ নেয় সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী নামক একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিশু শিল্পীরা। শিশুরা সাদামাটা অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তুলে ধরে গাজার শিশুদের যন্ত্রণাদায়ক বাস্তবতা। একজন শিশু ‘বাবা’ সেজে কাঁধে করে নিয়ে আসেন নিজের সন্তানের প্রতীকী মরদেহ। এসব দৃশ্য দেখে অনেক পথচারী আবেগে কেঁপে ওঠেন, কেউ কেউ ফেলেছেন চোখের পানি। আবার এমন দৃশ্যে কেউ বা গগনবিদারী চিৎকারে দিয়েছেন ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর’ স্লোগান।
হুইল চেয়ারে করে মিছিলে জুলাই বিপ্লবে আহতরা
এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন জুলাই বিপ্লবে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীনরাও। ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে মিছিল-সমাবেশে যোগ দেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন জুলাই বিপ্লবে আহতরা। এসময় সাধারণ মানুষদের সঙ্গে তাদেরকেও নারায়ে তাকবিরসহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়। আহতদের একজন জরিফুল ইসলাম, মাথায় ফিলিস্তিনের পতাকা বেঁধে হুইল চেয়ারে করে শাহবাগে এসেছিলেন। নিজে আহত হয়েও কেন এসেছেন, জানতে চাইলে জরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা হয়তো হাঁটতে পারছি না, কিন্তু গাজার মানুষের পাশে দাঁড়াতে শরীর নয়, লাগে মন। সেই মন আমাদের এখানে এনেছে। ফিলিস্তিনবাসীর জন্য আমরা আমাদের জীবনটাও উৎসর্গ করে দিতে পারি। মীর সারওয়ার হোসেন নামের আরেকজন বলেন, হাসপাতালের বেডে শুয়ে ছিলাম। কিন্তু পাশেই গাজবাসীদের পক্ষ নারায়ে তাকবির স্লোগান শুনে আর শুয়ে থাকতে পারলাম না। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে একবার আহত হয়েছি, এবার সুযোগ পেলে ফিলিস্তিনের পক্ষে যুদ্ধ করে শহীদ হয়ে যাবো।
মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দীতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে ডাকা ‘মার্চ ফর গাজা’য় কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসেছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থী। দুপুর সোয়া ২টায় মিছিল নিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থী ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে ফিলিস্তিন ও বাংলাদেশের পতাকা দেখা যায়। মুখে মুখে ছিল প্রতিবাদী স্লোগান। রাজধানীর আফতারনগর থেকে মিছিল নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ফিলিস্তিনের সমর্থনে ঐতিহাসিক গণজমায়েতে অংশ নেন। ব্র্যাক, নর্থ-সাউথ, ইমপেরিয়াল, ইস্ট-ওয়েস্ট, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে মিছিল নিয়ে ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদ জানাতে কর্মসূচিতে অংশ নেন।
ঢাকার রাস্তায় ট্রাম্প-নেতানিয়াহু, হাতে রক্তের দাগ
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যা, ট্রাম্প প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা এবং আরব বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানদের হামলায় নিশ্চুপ থাকার ঘটনা নিয়ে প্রদর্শনী করেছেন কয়েকজন ছাত্র। প্রদর্শনীতে দেখা যায়, নেতানিয়াহুর মুখোশ পরা একজন রক্তের বাটি হাতে নিয়ে হাঁটছেন যার পুরো শরীরে ফিলিস্তিনি মানুষের রক্ত। তার পাশেই ট্রাম্পের মুখোশ পরা একজন নেতানিয়াহুকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। তারও শরীরজুড়ে রক্তের দাগ। অন্যদিকে আরব নেতারা তাদের দু’জনের আশপাশে ঘোরাফেরা করছেন এবং তাদের হাতে চুমু খাচ্ছেন, আনুগত্য প্রকাশ করছেন। তাছাড়া, তাদের ঠিক পেছনেই সাদা কাফনে মোড়ানো অসংখ্য লাশের প্রতিকৃতি রাখা হয় যা নেতানিয়াহু, ট্রাম্প ও তার সহযোগী আরব বিশ্বের নেতারা টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
আয়োজকদের একজন বলেন, আমরা দেখছি ফিলিস্তিনে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী গণহত্যা চালাচ্ছে যার প্রত্যক্ষ মদদ দিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। তাছাড়া আরব বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানরা এসব দেখেও একেবারে নিশ্চুপ। অর্ধ লক্ষাধিক নিরীহ মুসলিমের রক্তেও তাদের ঘুম ভাঙছে না। তাই আমরা এর প্রতিবাদ হিসেবে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছি।