এমসি কলেজ ছাত্রলীগ ॥ দুই দশকের নেতৃত্বের খরা কাটবে কি ?
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ মে ২০২৩, ৪:৫৪:৩৬ অপরাহ্ন
কর্মীসভা কাল
লবীব আহমদ, এমসি কলেজ প্রতিনিধি ॥ দীর্ঘ ২০ বছর পরে নতুন নেতৃত্ব আসার খবরে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে এমসি কলেজ ছাত্রলীগ। নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্য আগামীকাল সোমবার এমসি কলেজ ও সিলেট সরকারি কলেজে কর্মীসভার আয়োজন করেছে সিলেট মহানগর ছাত্রলীগ। এই কর্মীসভা এমসি কলেজে অনুষ্ঠিত হবে। গত শুক্রবার সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশওয়ার জাহান সৌরভ ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ নাঈম আহমদ এই কর্মীসভার ঘোষণা দেন। ঐদিনই নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে পদপ্রত্যাশীদের জীবন বৃত্তান্ত আহবান করা হয়। এতে করে প্রাণচাঞ্চল্যে সৃষ্টি হয়েছে এমসি কলেজ ও সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মাঝে। নেতৃত্ব পেতে আগ্রহীরা এরই মধ্যে উর্ধ্বতন মহলে লবিং শুরু করেছেন।
জানা গেছে, এমসি কলেজ ছাত্রলীগ নেতৃত্বের রয়েছে গৌরময় ইতিহাস। এই কলেজে নেতৃত্বদানকারীরা দলের শীর্ষ পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বতর্মান জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতাই এমসি কলেজ ছাত্রলীগের সৃষ্টি। ফলে বরাবরই এমসি কলেজের ছাত্রলীগের পদ পেতে প্রত্যাশী থাকেন তৃণমূল কর্মীরা। কিন্তু বিগত দুই দশকে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, নিজেদের মধ্যে খুনোখুনিসহ নানা কারণে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে এ প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম। বিশেষ করে নিজেদের মধ্যে কোন্দলে একাধিক হত্যাকান্ডের পর নতুন কমিটি দিতে উৎসাহ হারান ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। ফলে নেতত্ব শুন্য হয়ে পড়ে এমসি কলেজ ও সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ।
দলীয় সূত্র জানায়, ২০০৩ সালে তাজিম উদ্দিনকে সভাপতি ও সাইফুল ইসলাম টিপুকে সাধারণ সম্পাদক করে এমসি কলেজ ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরে ২০১০ সালের ১৩ জুলাই ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে কলেজের গণিত বিভাগের ছাত্র ছাত্রলীগ নেতা উদয়েন্দু সিংহ পলাশ খুন হওয়ার পর কমিটি বাতিল করা হয়। এরপর থেকেই কমিটি বিহীন রয়েছে এমসি কলেজ ছাত্রলীগ। বিভিন্ন সময়ে সিলেট জেলা ও মহানগরের কমিটি আসলেও এমসি কলেজ ছাত্রলীগ পায়নি নতুন কোনো নেতৃত্ব। নতুন কমিটি আসবে, আসবে বলেই পার হয়ে যায় দীর্ঘ তেরোটি বছর। ২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারি এমসি কলেজকে বাংলাদেশের ‘সম্পদ’ উল্লেখ করে এমসি ও সিলেট সরকারী কলেজে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি দেয়া হবে বলে নেতা-কর্মীদের আশ্বাস দেন তৎকালীন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন। তখন তাঁর নেতৃত্বে কলেজের জারুলতলা থেকে মিছিল শুরু করে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে ছাত্রলীগ। তবে ক্যাম্পাসে নিজেদের মধ্যে কথায় কথায় অস্ত্রের মহড়া, এমনকি শত বছরের পুরনো ছাত্রাবাস পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগসহ এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় ছাত্রলীগের নাম জড়ালে উদ্যোগ নিয়েও নতুন কমিটি দেয়া থেকে পিছু হঠেন সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
অন্যদিকে, ২০২১ সালে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষিত হলে আশায় বুক বাঁধেন এমসি কলেজ ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ। সেই আশা আর নিরাশায় রূপ নেয়নি। এর অংশ হিসেবে আগামীকাল ১৫ মে’র ক্যাম্পাসে কর্মীসভার আয়োজন করেছে। খুব শিগগিরই নতুন কমিটি দেওয়া হবে বলে জানান সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশওয়ার জাহান সৌরভ ও সাধারণ সম্পাদক মো: নাঈম আহমদ।
অপরদিকে নতুন নেতৃত্ব পাওয়ার ব্যাপারে অনেকেই আশাবাদী। এরমধ্যে এমসি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব বলেন, কর্মীসভার তারিখ ঘোষণার পর থেকেই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ঈদের ন্যায় আনন্দ বিরাজ করছে। আশা করছি রাজপথের কর্মীদের মূল্যায়ন করে সুন্দর একটি কমিটি ঘোষণা করা হবে।
এমসি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা দিলোয়ার হোসেন রাহী বলেন, ২০ বছর পরে এমসি কলেজ ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সিভি নেওয়া হবে। দীর্ঘদিন ধরে যারা ছাত্রলীগের সকল প্রোগ্রামে ঘাম ও শ্রম দিয়েছে, তাদের মূল্যায়ন করে সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য একটি কমিটির আশা করি।
সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: নাঈম আহমদ বলেন, দীর্ঘদিন পর এমসি কলেজ ছাত্রলীগের কর্মীসভা হচ্ছে। সেদিনই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীদের সিভি নেয়া হবে এবং সিভি যাচাই-বাছাই করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটি দেওয়া হবে।
সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশওয়ার জাহান সৌরভ বলেন, সিলেট মহানগরীর দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট এমসি কলেজ ও সিলেট সরকারি কলেজ। ১৫ তারিখের কর্মীসভায় সিভি নেওয়ার পরে তা যাচাই-বাছাই করে নৌকার বিজয় নিশ্চিতে সিটি নির্বাচনের পূর্বেই কমিটি দেয়া হবে। আশা করি আমরা সঠিক নেতৃত্ব বাছাই করতে পারবো।