টুঙ্গিপাড়ার খোকা: মুক্তির অগ্রদূত
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ মে ২০২৩, ২:১৮:৩৩ অপরাহ্ন
মো. দিলওয়ার হোসেন বাবর
নদীমাতৃক দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। অসংখ্য নদ-নদী, খাল-বিল, এই দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে জালের মত। বাংলাদেশের অন্যতম জেলা গোপালগঞ্জের শেষ প্রান্তের একটি নদীর নাম বাইগার নদী। এটি মূলত মধুমতি নদীরই একটি শাখা। আকা বাঁকা পথ বেয়ে ¯্রােতের টানে মিশে গেছে মধুমতির সঙ্গে। তারই তীর ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে পাটগাতি ইউনিয়ন। এই পাটগাতি ইউনিয়নের অন্তর্ভূক্ত শান্ত-সুন্দর-¯িœগ্ধ একটি গ্রাম টুঙ্গিপাড়া। সবুজ-শ্যামল ছায়ায় নদীর কলকল ধ্বনিতে, বাতাসের সুরের শব্দে মুখরিত এই ছবির মত গ্রাম যেন পল্লী বাংলার এক অপরূপ সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান, যা দেখা মাত্রই সবাইকে আকৃষ্ট ও বিমোহিত করে হৃদয়ে সৃষ্টি করে এক অনাবিল শান্তি ও তৃপ্তি।
ইংরেজি ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ বাংলা ১৩২৭ এর ৩ চৈত্র, রোজ মঙ্গলবার রাত ৮ ঘটিকা। বসন্তকালের এক চাঁদনী রাত। এমনি এক সুন্দর রাতের কোন এক শুভলগ্নে পাখি ডাকা ছায়া ঘেরা সুনিবিড় শান্তির নীড় এই টুঙ্গিপাড়া গ্রামের ঐতিহ্যবাহী শেখ বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন বাঙালি জাতির মুক্তির অগ্রদূত, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালি জাতির গর্বিত সন্তান, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাবা শেখ লুৎফুর রহমান, মাতা শেখ সায়রা বেগম। বঙ্গবন্ধুর জন্মের পর নানা আব্দুল মজিদ আকিকা করে প্রিয় নাতির নাম রাখেন শেখ মুজিবুর রহমান। আর তার মা-বাবা আদর করে ডাকতেন খোকা বলে। যিনি পরবর্তীতে বড় হয়ে হন বঙ্গবন্ধু থেকে বিশ্ববন্ধু, বাঙালি জাতির মুক্তির অগ্রদূত, মুক্তির মহানায়ক এবং জগৎবিখ্যাত মহান নেতা। চার কন্যা ও দুই পুত্রের সংসারে তিনি ছিলেন তৃতীয় সন্তান এবং পুত্রদের মধ্যে প্রথম। বাবা শেখ লুৎফুর রহমান ছিলেন একজন সরকারি চাকুরে। তিনি ছিলেন তৎকালীন সময়ে মাদারীপুর মহকুমা আদালতের একজন সেরেস্তাদার।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২৭ সালে ৭ বৎসর বয়সে টুঙ্গিপাড়ার কাছে গিমা ডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু করেন। বাবা শেখ লুৎফুর রহমান ছেলেকে নিয়ে বড় বড় স্বপ্ন দেখতেন। তাই তিনি ছেলের লেখাপড়ার ব্যাপারে ছিলেন অত্যন্ত সচেতন। তিনি বাড়িতে গৃহশিক্ষক হিসেবে প-িত সাখাওয়াত উল্লা পাটোয়ারী ছাড়াও আরও দুই জন শিক্ষক রেখে দেন। কাজী আব্দুল হামিদ এবং আরও একজন মৌলভী। এই শিক্ষকদের দ্বারা বঙ্গবন্ধু বড় হয়ে গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন।
১৯২৯ সালে বাবা শেখ লুৎফুর রহমান শেখ মুজিবকে গোপালগঞ্জের সীতানাথ একাডেমিতে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেন। ১৯৩৪ সালে বঙ্গবন্ধু যখন ৭ম শ্রেণিতে পড়েন তখন শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং এই অসুস্থাজনিত কারণে বঙ্গবন্ধুর লেখাপড়ায় দুই বৎসর পাঠ বিরতি ঘটে। বাবার বদলিজনিত কারণে পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু মাদারিপুর ইসলামিয়া হাইস্কুলে ও গোপালগঞ্জ মিশন হাই স্কুলে লেখাপড়া করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরবর্তীতে গোপালগঞ্জ মিশন হাই স্কুল থেকেই ১৯৪২ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মেছেন গ্রাম বাংলার আলোবাতাস কোলে। আবহমান বাংলার আলো বাতাসে লালিত হয়ে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠেছেন। তিনি শ্বাশত গ্রামীণ সমাজের মানুষের সুখ দুঃখ, হাসি-কান্না, ব্যথা-বেদনা ছোট বেলা থেকেই তাদের কাছ থেকে গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন। প্রত্যক্ষ করেছেন, তাদের সাথে মিশেছেন এবং প্রাণ খুলে কথা বলেছেন। তিনি মনের অজান্তেই গ্রাম বাংলার মানুষকে আপন করে নিয়েছেন। তাদের ভাবনা নিজের ভাবনা করে নিয়েছেন। তাই গ্রাম বাংলার মাটি ও মানুষ তাকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করে শৈশবকাল থেকেই। তৎকালীন গ্রামীণ সমাজ জীবনে জমিদার, তালুকদার, মহাজনদের নিষ্ঠুর অত্যাচার, শোষণ ও প্রজানিপীড়ন তিনি শৈশবকাল থেকেই স্বচক্ষে দেখেছেন, যা তাঁর পরবর্তী জীবনের চিন্তা চেতনা ও রাজনৈতিক জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শৈশবকাল থেকেই ছিলেন অত্যন্ত ডানপিটে, চঞ্চল ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন এক প্রতিবাদী কণ্ঠ। তাই আমরা দেখতে পাই, পরবর্তী জীবনে অন্যায় ও অত্যাচার যতই শক্তিশালী হোক না কেন তার কাছে তিনি জীবনে কখনও মাথানত করেননি কিংবা আপোষ করেননি। বরং কঠোর হস্তে তিনি ঐসব মোকাবেলা করেছেন। প্রতিবাদ করেছে। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য তিনি আমৃত্যু লড়াই করেছেন, সংগ্রাম করেছেন, কারা জীবন ভোগ করেছেন। জীবন ও যৌবনের সোনালী ও মধুময় দিনগুলো কাটিয়েছেন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্টে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছোট বেলা থেকেই ভালবাসতেন এই দেশকে, তাঁর এই প্রিয় মাতৃভূমিকে। তিনি ভালবাসতেন গ্রামবাংলাকে, গ্রামবাংলার সরল সহজ মানুষকে। গ্রাম বাংলার সরল সহজ মানুষ ছিল যেন তার আত্মার পরম আত্মীয়। তিনি অনেক সময় নিজে না খেয়ে অন্যকে খাইয়েছেন, তিনি না পড়ে অন্যকে পড়িয়েছেন, অকাতরে মানুষকে দান করেছেন, বিলিয়েছেন। তিনি ভাই বোন সহ পাড়া প্রতিবেশী সবার কাছেই ছিলেন খুবই প্রিয়, গ্রহণযোগ্য ও আস্থাশীল একজন মানুষ। তিনি ছিলেন বালকদের রাজা, সকল কাজের নেতা, মা-বাবার প্রিয় খোকা, ভাই বোনদের প্রিয় মিয়া ভাই, সহপাঠী ও বন্ধু বান্ধবদের প্রিয় মুজিব ভাই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন অধিকার সচেতন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার, আপোষহীন ও বলিষ্ট কন্ঠস্বর। তিনি ছিলেন উদার, প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনার অধিকারী ও বিশ্বাসী। তাই আমরা দেখতে পাই বড় হয়ে তিনি বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের জন্য আজীবন লড়াই সংগ্রাম করেছেন। আমৃত্যু লড়াই সংগ্রাম করে তিনি প্রিয় মাতৃভূমিকে পাকহানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত করে দেশ জাতির কাছে হয়েছেন বিজয়ী বীর, হয়েছেন বাঙালি জাতির প্রাণপ্রিয় নেতা, হয়েছেন বাঙালি জাতির পিতা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি ১৯৩৯ সালেই মহকুমা ছাত্রলীগ গঠন করেন এবং জেলা ও মহকুমা ছাত্রলীগের কাউন্সিলর মনোনীত হন। তিনি ১৯৪০ সালে অলবেঙ্গল মুসলিম ফেডারেশনে যোগদান করেন এবং নিখিল ভারত ছাত্র ফেডারেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু ১৯৪০ সালেই নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের এবং নিখিল বঙ্গমুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪২ সালে ম্যাট্রিক পাশ করে তার রাজনৈতিক গুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পরামর্শে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। থাকতেন ঐতিহাসিক বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষে। তিনি কলকাতার বেকার হোস্টেলের ও ইসলামিয়া কলেজের সবার মন জয় করে তাদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ রাজনৈতিক প্রতিভা ও সাংগঠনিক ক্ষমতার ফলে ১৯৪২ সালে বেকার হোস্টেলের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৪৬ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইসলামিয়া কলেজের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু ১৯৪৩ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে একই সাথে ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কলকাতায় গিয়ে তাঁর ছাত্রজীবনেই গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, আবুল হাশিম প্রভৃতি তৎকালীন সময়ের খ্যাতনামা রাজনীতিবিদদের ঘনিষ্ট সান্নিধ্যে থেকে রাজনীতি শেখার ও করার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি ১৯৪২ সালে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর নেতৃত্বে হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণ আন্দোলনে, ১৯৪৩ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষের সেবা করে, ১৯৪৬ সালে বঙ্গীয় আইন সভায় নির্বাচনী প্রচার কাজে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বঙ্গবন্ধু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মহাত্মাগান্ধীর নেতৃত্বে ১৯৪৬ ও ১৯৪৭ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে কঠোর পরিশ্রম করে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন।
বঙ্গবন্ধু ১৯৪৭ সালে ইসলামিয়া কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভক্তির পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব বাংলায় চলে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন শাস্ত্রে ভর্তি হন। এই সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি গঠন করেন মুসলিম লীগ বিরোধী প্রথম ছাত্র সংগঠন, ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’। পরবর্তীতে তৎকালীন সময়ের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সাথে নিয়ে মৌলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ১৯৪৯ সালের ১৩ জুন গঠন করেন পূর্বপাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। তৎকালীন সময়ে জেলখানায় বন্দী অবস্থায় তিনি ঐ সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি ক্রমান্বয়ে ঐ দলের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি মনোনীত হন।
১৯৪৮ ও ১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্যান্যদের সাথে নিয়ে অনশন কর্মসূচি পালন করেন এবং বন্দী অবস্থায় থেকেই ভাষা আন্দোলনের সার্বিক দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করেন, কারাবরণ করেন। ১৯৫৮ সালের আয়ুব খানের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা সংকোচন নীতি ও শাসনতন্ত্র বিরোধী আন্দোলন পরিচালনায় নেতৃত্ব প্রদান করেন। ১৯৬৬ সালে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ছয় দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে কারাবরণ করেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে ১৯৬৯ সালে দেশব্যাপী গণঅভ্যুত্থান শুরু হলে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি মুক্তি লাভ করেন। পরবর্তীতে ২৩ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় দেশ ও জাতির পক্ষ থেকে তাঁকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানের উভয় অংশে অনুষ্ঠিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা ও ক্যারেশমেটিক নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে দেশ শাসনের বৈধ অধিকার অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানী শাসক চক্র বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে শুরু করে গোপন চক্রান্ত। শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব অসহযোগ আন্দোলন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর এক ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণের সার্বিক দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। ২৫ মার্চ রাত্রে পাকবাহিনী বাঙালিদের উপর সশস্ত্র আক্রমণ শুরু করলে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে সমগ্র বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশকে শত্রুমুক্ত করার আহ্বান জানান। শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রাম। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পর ৩০ লক্ষ শহীদ, ২ লক্ষ মা বোনের ইজ্জত ও এক সাগর রক্তে বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি অর্জন করে স্বাধীন ও সার্বভৌম লাল সবুজের বাংলাদেশ।
যার নেতৃত্বে পাকিস্তান ও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, যার আজীবন লড়াই সংগ্রামের ফসল আমাদের এই সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা, লাল সবুজের স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ, তিনি হলেন আমাদের টুঙ্গিপাড়ার খোকা, আমাদের মিয়া ভাই, সবার প্রিয় মুজিব ভাই, আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের এক গ্রামে জন্মগ্রহণ করে, গ্রামীণ সমাজে বড় হয়ে এই দেশের মাটি ও মানুষকে ভালবেসে, তাদের অধিকার আদায়ের জন্য আজীবন লড়াই সংগ্রাম করে, জেল জুলুম ও প্রাণভয়কে উপেক্ষা করে দেশ ও জাতির নেতৃত্ব দিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে তিনি আজ বাঙালি জাতির প্রাণপ্রিয় নেতা, আমাদের প্রিয় বঙ্গবন্ধু। তিনি আজ বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, বাংলার অবিসংবাদিত নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বাঙালি জাতির মুক্তির অগ্রদূত।
লেখক: শিক্ষক ও কলামিস্ট