ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোচ সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ মে ২০২৩, ২:২২:৪৩ অপরাহ্ন

রফিকুর রহমান লজু:
অন্যান্য নৃ-গোষ্ঠীর মতো কোচ একটি নৃ-গোষ্ঠী। এটি বাংলাদেশে বসবাসকারী অন্যতম প্রাচীন একটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী। কোচদের জন্মভূমি বা মাতৃভূমি ভারতের কোচবিহার। একসময় কোচরা মাতৃভূমি কোচবিহার পরিত্যাগ করে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায় আবাস গড়ে তোলে। বর্তমানে শেরপুরের ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ি ও শ্রীবর্দী উপজেলায় তাদের বসবাস। কোচদের জনসংখ্যা বেশি নয়, পাঁচ হাজারের মতো হবে।
কোচ সম্প্রদায় আটটি দলে বিভক্ত। এরা হলো ১. ওয়ানাং ২. হরিগাইয়া ৩. সাতপাড়ি ৪. দশগাইয়া ৫. চাপ্রা ৬. তিনথেকিয়া ৭. শংকর ও ৮. মারগান। কোচরা এদলগুলোকে ভাগ বলে। প্রতি ভাগের রয়েছে অনেক গোত্র। কোচরা গোত্রকে নিকিনি বলে। কোচ সমাজ পিতৃপ্রধান। তা সত্ত্বেও কোচদের সন্তান সন্ততি মায়ের গোত্র নামে পরিচিত হয়। পুত্র সন্তানরাই পারিবারিক সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়। কোচদের বিয়ে হয় নিজ গোত্র বা নিকিনির বাইরে। নিজ গোত্রের মধ্যে বিয়ে নিষিদ্ধ। পূর্বে কোচদের মধ্যে যৌথ ও একক পরিবার থাকলেও বর্তমানে একক পরিবারের সংখ্যাই বেশি। তাদের গোত্রের মধ্যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে সাধারণত সামাজিকভাবে তা নিরসন করে তারা।
কোচ সমাজে এক বিবাহ ব্যবস্থা প্রথাই প্রচলিত। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে একজন পুরুষ একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করতে দেখা যায়। কোচদের প্রধান খাদ্য বাঙালিদের মতো ভাত। অধিকাংশই আমিষভোজী। তারা শাক-সবজি, ডাল, মাছ, ডিম ও মাংস আহার করে। তারা গোমাংশ খায় না। কিন্তু শূকরের মাংস তাদের খুব প্রিয়।
পানির মাছ ছাড়াও কচ্ছপ, কুঁচিয়া প্রভৃতি কোচদের প্রিয় খাদ্য। রান্নার কাজে তারা শুঁটকি মাছ ব্যবহার করে। চালের গুঁড়া ও সোডা সহযোগে রান্না করা শূকরের মাংস তারা খুব ভালো পায়। বাঙালির মত তাদের পালা-পার্বণে তারা নানা ধরনের পিঠা তৈরি করে খায়। কোচরা মদ্যপান করলেও যারা গুরুর কাছে দীক্ষামন্ত্র গ্রহণ করেছে, তারা মাছ মাংস পরিহার করে চলে। কোচ পুরুষরা ধুতি, লুঙ্গি, জামা, গেঞ্জি প্রভৃতি পরিধান করে। মহিলারা নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী পোষাক ব্যবহার করে। তারা জামা, গেঞ্জির সঙ্গে তাদের নিজস্ব পোষাক লেফেন পরে। কোচরা একদিকে যেমন দুর্গা পূজা, কালী পূজা, সরস্বতী পূজা, লক্ষ্মী পূজা উদযাপন করে তেমনি আদি ধর্মের দেবদেবীরও পূজা করে। কোচদের আদি ধর্মের প্রধান দেব-দেবী হলো ঋষি এবং পতœী যোগমায়া। ধর্মের বিষয়ে অন্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী যা করে না, কোচরা তা করে। তারা ঋষি ও তার পতœী যোগমায়াকে বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তারূপে বিশ্বাস করে। দেবী কামাখ্যাও কোচ সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান দেবী। কোচদের আদিধর্মের দেবদেবীর পূজা তাদের নিজস্ব পুরোহিতরাই করে থাকে। তারা পুরোহিতদের দেঊষী ও আজেং নামে অভিহিত করে থাকে।
লেখক : সিনিয়র কলামিস্ট।