অতিরিক্ত তাপদাহ ॥ আশানুরুপ ফলন না হওয়ায় ছাতক-দোয়ারার লিচু চাষীরা হতাশায়
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২১ মে ২০২৩, ৫:২১:২৪ অপরাহ্ন
মহাজনের ঋণ শোধ নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তায়
তাজুল ইসলাম, দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) থেকে : অতিরিক্ত তাপদাহ ও খরায় এবার আশানুরূপ ফলন না হওয়ায় চরম হতাশায় ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার লিচু চাষিরা। টিলাবেষ্টিত এই উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে ভরা মৌসুমে ভরপুর থাকতো লিচুতে। এবার দেখা যাচ্ছে, এর ব্যতিক্রম। উপরন্তু, মহাজনের ঋণ পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় চাষিরা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ছাতকের মানিকপুর, গোদাবাড়ী, চাঁনপুর, রাজারগাঁও, বড়গল্লা এবং দোয়ারাবাজারের লামাসানিয়া, টেংরাটিলা ও পাইকপাড়া গ্রামে রয়েছে অধিকাংশ লিচু বাগান। ছাতক শহর থেকে সুরমা নদী পাড়ি দিয়ে প্রায় ৩ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে টিলা বেষ্টিত নোয়ারাই ইউনিয়নের চৌমুহনী বাজার ও লিচুর গ্রাম হিসেবে পরিচিত মানিকপুর গ্রাম। একটু এগুলেই দোয়ারাবাজার উপজেলার লামাসানিয়া গ্রাম। মানিকপুর এলাকার প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে লিচুর গাছ। বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষ করেছেন এলাকার শতাধিক পরিবার। বর্তমান সময়ে ওই এলাকার বাগানগুলোর গাছে-গাছে ঝুলছে পাকা রসালো লিচুর ছড়া। যা দেখলেই চোখ-মন জুড়িয়ে যায়। লিচুর বাগান দেখতে আসা দর্শনার্থীদের ভিড় এখানে কম নয়।
লিচু চাষি আবু তাহের জানান, চারা রোপণের তিন বছরের মাথায় ফল ধরা শুরু হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে এবার ফলন কম হলেও অতীতে একটি বড় গাছ থেকে বছরে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, লিচুর গ্রাম হিসেবে পরিচিত মানিকপুরসহ অন্যান্য গ্রামের সাথে সড়ক যোগাযোগ অত্যন্ত নাজুক। ফলে চাষিরা এ অঞ্চলে তাদের উৎপাদিত লিচু সঠিক সময়ে বাজারজাত করতে পারছেন না। যে কারণে চাষীরা আশানুরুপ লাভের মুখ দেখতে পারছেন না।
লিচু চাষি ফরহাদ মিয়া বলেন, গত বছর লিচুর ফলন ভালো হয়েছিলো। কিন্তু, ভয়াবহ বন্যায় সেগুলো বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। আশা ছিল এ বছর লিচু বিক্রি করে গত বছরের লোকসান পুষিয়ে নেব। কিন্তু, চলতি মৌসুমে অতিরিক্ত খরার কারণে অন্যান্য বছরের মতো লিচুর ফলন ভালো হয়নি। গত বছরের তুলনায় এবার অর্ধেকের কম লিচুর ফলন হয়েছে। অনেক গাছে লিচুর মুকুল একেবারেই আসেনি। আর আসলেও লাগাতার খরায় তা ঝরে গেছে।
তিনি আরোও জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে লিচু চাষে তাদেরকে পরামর্শ ও সহযোগিতা করলে তারা স্বাবলম্বী হতে পারবেন। এছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে কম খরচে বাজারে লিচু সরবরাহ যাবে। পাশাপাশি বেশী বাইরের পাইকাররাও এখানে আসছেন।
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেড়াতে আসা সিলেট জেলা বারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বলেন, ছাতক উপজেলার ঐতিহ্যবাহী গ্রাম মানিকপুর। মানিকপুরের লিচু সিলেট অঞ্চলে বেশ সুনাম কুঁড়িয়েছে। দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল পরিবার পরিজন নিয়ে মানিকপুর এসে নিজ হাতে লিচু পেরে খাবো। আলহামদুলিল্লাহ লিচু খেয়েছি। তবে আশানুরূপ লিচু চোখে পড়েনি। এখানকার লিচু চাষিরা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় এ বছর লিচুর ফলন অন্য বছরের চেয়ে কম হয়েছে। এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর মে মাসের শুরু থেকে গাছে গাছে পাকা লিচুর সমাহার ঘটে। সারাবছর পরিচর্যা করার পর ঠিক ওই সময়টিতে লিচু কিনতে আসেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। চাহিদা থাকায় ছাতক-দোয়ারাবাজারে বেড়েছে লিচুর বাণিজ্যিক চাষাবাদ। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ওই এলাকার লিচু এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। তবে এবার খরা আর তীব্র তাপপ্রবাহে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকেরও কম ফলন হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
ছাতক উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তৌফিক হোসেন খান ও দোয়ারাবাজার উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মহসিন আলী জানান, পরামর্শ দিয়েই এখানকার অনেককে লিচু চাষে উদ্যোগী করা হয়েছে। লিচুর ফলন ভালো রাখার জন্য সরকার থেকে অনেককে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে লিচুর ফলন কিছুটা কম হলেও চাষিরা পাচ্ছেন ভালো বাজারমূল্য। টিলা বেষ্টিত এ অঞ্চল লিচু চাষের উপযোগী হওয়ায় এখানে লিচুর বাগান করতে আগ্রহীদের সরকারি সকল সহযোগিতা দেয়া হবে বলে জানান ওই কর্মকর্তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চলতি মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে স্থানীয় হাট-বাজারগুলোতে লিচুর বেচাকেনা। বর্তমানে ১শ’ লিচু ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।