সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২১ মে ২০২৩, ৫:৪২:০০ অপরাহ্ন
তোমার বন্ধু হচ্ছে সে, যে তোমার সব খারাপ দিক জানে; তবুও তোমাকে পছন্দ করে। -অ্যালবার্ট হুবার্ড
বিশ্বে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের অবদানকে স্বীকৃতি দেয়ার লক্ষে আজ দেশে পালিত হচ্ছে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য দিবস। জাতিসংঘের আহ্বানে প্রতি বছর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। দিবসটির ধারণা সর্বপ্রথম আসে ইউনেস্কো থেকে। ২০০১ সালের নভেম্বরে ইউনেস্কো সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বিষয়ক সর্বজনীন ঘোষণা দেয়। ঘোষণাটির গুরুত্ব বিবেচনায় জাতিসংঘ সে বছরই তা অনুধাবন করে। এই ধারাবাহিকতায় পরের বছর ২০০২ সালে দিবসটি পালনের আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। এরপর থেকে প্রতি বছর সারা বিশ্বে পালিত হয়ে আসছে সংলাপ ও উন্নয়নের জন্য সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য দিবস। খুব অল্প সময়েই আমেরিকা থেকে ওশেনিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার প্রায় প্রতিটি দেশে এই দিবসের বার্তা পৌঁছে যায়। বিশ্বের সব মানুষকে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের গুরুত্ব ও সাদৃশ্য সম্পর্কে অবহিত করা এই দিবসের উদ্দেশ্য। যুদ্ধ বিগ্রহ এড়িয়ে শান্তির সঙ্গে বসবাস এবং মিলেমিশে জীবন গড়ার অনুপ্রেরণা দেয় এই দিবসটি।
সংস্কৃতি একজন মানুষকে প্রকৃত মানুষে পরিণত করে। গবেষকদের মতে- ভাষা, সাহিত্য, রীতিনীতি, মূল্যবোধ, মানবিকতা, জ্ঞান, শান্তি, শৌর্য, বিশ্বাস, সৌন্দর্য, চিরাচরিত প্রথা, মনোভাব প্রস্তুতির সমাহার হচ্ছে সংস্কৃতি। রয়েছে বস্তুগত সংস্কৃতিও। চারু, কারু শিল্প, স্থাপত্য, পোশাক-আশাক, খাবার-দাবার, আবাস, ব্যবহার্য উপকরণ ইত্যাদি বস্তুগত সংস্কৃতির অংশ। অর্থাৎ জীবনের অন্তর্গত সব বিষয়, কর্ম, চর্চা ও সাধনাই সংস্কৃতি। এটাই বাস্তবতা যে, মানবসমাজকে ভালোভাবে জানতে হলে বিশদভাবে বুঝতে হলে, তাদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের খোঁজ খবর নেয়া জরুরি। বিভিন্ন বর্ণ, গোত্র, ভাষা সৃষ্টি হয়েছে এই বৈচিত্র্যের ফলে। [অনন্তকাল ধরে এসব সংস্কৃতি একটির সঙ্গে অন্যটির সংযোগ ছিলো এবং তা আগামিতেও থাকবে। এর মধ্য দিয়ে দারিদ্র্য বিমোচন, মানুষের ক্ষমতায়ন ও জাতীয় উন্নয়নে সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের ভূমিকা জানা যাবে। তাই এমনটি বললে ভুল হবে না যে, যে অঞ্চলে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য যতো বেশি, সেখানকার জীবন প্রণালী ততো সহজ। এই সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের কারণেই একটি সমাজ মৌলিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। সংস্কৃতির এই বর্ণিলতা উপভোগ করার অধিকার সবার। একটি জাতির সার্বিক পরিচিতিই ফুটে ওঠে তার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের মাধ্যমে। তাই ইউনেস্কো এই দিবসটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে এর তাৎপর্য সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে ব্যাপকভাবে অবগত করার উদ্যোগ নিয়েছে। তারা সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি বিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদ প্রস্তুত করেছে। সব সরকারকে এ সনদে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়নে অনুরোধও জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ২০০৭ সালে এই সনদে অনুস্বাক্ষর করেছে। সনদের মূল বিষয় হলো- মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও নান্দনিক বিকাশে সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তিগুলো চিহ্নিত করে সংরক্ষণ ও ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত করা। এ দায় কেবল সরকারের নয়, এ ব্যাপারে সবাই মিলে সমন্বিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। তাছাড়া, আমাদের রয়েছে হাজার বছরের ঐতিহ্য লালিত সংস্কৃতি। সাংস্কৃতিক ও উদ্ভাবনীমূলক বিভিন্ন শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে আমরা সার্বিক অবস্থার উত্তরোত্তর উন্নতি ঘটাতে পারি।