একটা বাচ্চা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২১ মে ২০২৩, ৫:৪৪:৪৩ অপরাহ্ন
আবিরুল ইসলাম আবির
ঘুম থেকে উঠে দেখি, আমি সম্পূর্ণ নগ্ন। সামনে গিয়ে দেখলাম নিজের প্রতিচ্ছবি। অদূরে দেখা যাচ্ছে সমুদ্র। শাশা করে বাতাস বইছে। হঠাৎ চোখে পড়লো একটা বাচ্চা শিশু গড়িয়ে গড়িয়ে সমুদ্রের কিনারার দিকে যাচ্ছে। তাই তাড়াতাড়ি কিছু একটা পরে দৌড়ে গেলাম। বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিলাম। বাচ্চাটাও নগ্ন। সুন্দর নীলা চোখ এবং সোনালী চুল। বয়স ৩-৪ বছর হবে নিশ্চয়ই। ওর গঠন দেখে বোঝা যায় এটা কোন ইউরোপিয়ান লোকের বাচ্চা এবং বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে এটা একটা মেয়ে বাচ্চা। তাড়াতাড়ি ফিরে গেলাম। আসার সময় খেয়াল করিনি এই সুন্দর একটা বিলাসবহুল বাড়ি তাও আবার সমুদ্রের কাছে। নিজের এপার্টমেন্ট বলে বিশ্বাসই হচ্ছে না। যাই হোক, বাচ্চাকে একটু গোসল করালাম। আমার কাছে বাচ্চাদের কোন কাপড় না থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু অবাক করে দেওয়া বিষয়, আমার আলমারিতে কিছু বাচ্চাদের কাপড় আছে। এটা কি করে সম্ভব। যাই হোক, বাচ্চাটাকে কাপড় পরালাম। বাচ্চাটা চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকাচ্ছে আর ডা… ডা বলে ডাকছে। খুবই মায়া লাগছে। কার বাচ্চা হতে পারে। এভাবে বিচে এলো কিভাবে?
অতঃপর আমি পুলিশকে খবর দিলাম। তারা বলল আধা ঘন্টার ভিতরে চলে আসবে। বাচ্চাকে কিছু একটা খাওয়ালে ভালো হয়। কিচেনে গেলাম। আবারও হবাক হলাম। টেবিলের উপরে খালি ফিডার রাখা। কি হচ্ছে আমার সাথে? কে জানে। ফ্রিজ থেকে দুধ বের করে গরম করলাম এবং ফিডারে ভরে নিলাম। সামান্য মুখে নিয়ে দেখলাম দুধ ঠিক আছে কিনা। বাচ্চাকে তো আর বেশি গরম দুধ দিতে পারি না। বাচ্চাটাকে খাওয়াতে শুরু করলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ল। কি নিষ্পলকভাবে ঘুমিয়ে পড়েছে। খুবই মায়া লাগছে। হৃদয়হীন ব্যক্তিকেও ভালো করে ফেলতে পারে। ঘরের বেল বাজলো। বাচ্চাটাকে বিছানার উপর রেখে, দরজা খুললাম।
হ্যালো, প্রফেসর আতিক। অফিসার বললেন।
হ্যালো, স্যার কেমন আছেন? এটা কি আমার নাম।
তা আপনি কি খাবেন চা না কফি?
ওয়েল, আমার কিছু লাগবে না। তো আপনার শরীর কেমন। আস্তে আস্তে কি সব কিছু মনে পড়ছে?
সরি, কি মনে পড়তে বলছেন?
ও আচ্ছা। আশা করি, আপনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবেন। আচ্ছা, আপনার বাচ্চা কেমন আছে?
কি বলছেন আমার বাচ্চা? লোকটা জানলো কি করে আমার কাছে বাচ্চা আছে।
ভিক্টোরিয়া। আপনার মেয়ে ভিক্টোরিয়া।
আপনি কি বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আপনি কি আমাকে একটু স্পষ্ট ভাবে বলবেন।
আপনি চাইলে আপনাকে মেডিকেল রিপোর্ট দিতে পারি। আপনার জন্য ভালো হবে যদি আপনার ঘরে মানুষ রাখেন।
প্লিজ, আমাকে একটু খুলে বলুন না।
দেখুন আপনাকে বললে আপনি আবার ভুলে যাবেন। আপনি নিশ্চয়ই এখনো আপনার নাম ও মনে রাখতে পারছেন না।
আচ্ছা, দেখুন আমি চাইলে আপনার কাছ থেকে একটা টেপ রেকর্ড করে রাখবো। কিন্তু, প্লিজ বলুন।
তা করতে হবে না। আপনাকে বলেই দেই। দেখুন, গতমাসে আপনি এবং আপনার স্ত্রী আর আপনার বাচ্চাকে নিয়ে হোলিডের জন্য জন্য ওয়েলেসে যাচ্ছিলেন। কিন্তু পথে আপনার গাড়ি লরির সাথে ধাক্কা লেগে যায় এবং এক্সিডেন্ট হয়। দুর্ভাগ্যবশত, আপনার স্ত্রী সাথে সাথেই মারা যান। আপনি এবং আপনার বাচ্চা বেঁচে যায়। কিন্তু আপনার মাথায় যথেষ্ট আঘাত লেগেছে। আপনি সেখানে অজ্ঞান ছিলেন। পরের দিন আপনাকে বা আপনার বাচ্চাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। মেডিকেল রিপোর্টে জানা যায় আপনার স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে এবং নিজেকে মনে করতে পারছেন না। আপনার স্ত্রীকে দাফন করা হয়েছে। দুসপ্তাহ পর আপনাকে আপনার বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়া হয় এবং আপনার বাচ্চাকে দেখাশোনা করার জন্য একজন বিবি সিটার দেওয়া হয়।
আচ্ছা, আমি কি আমার স্ত্রীর ছবি দেখতে পারি। অফিসার উঠে গিয়ে ঘরের কোণে টেবিলের উপর রাখা ফ্রেম নিয়ে আমার কাছে এলেন। সানগ্লাস মাথায় রাখা মহিলা এবং আমি ও আমার কোলে ওই বাচ্চা নিয়ে একটা সেলফি তোলা হাস্যজ্জল ছবি। চোখের কোনা দিয়ে অশ্রু চলে এলো। অফিসার উঠে দাঁড়ালেন।
ওকে, প্রফেসর। আপনার সাথে আবার দেখা হবে। খেয়াল রাখবেন। কোন প্রয়োজন হলে জানাবেন।
উনি চলে গেলেন। আমি অনেকক্ষণ ছবিটির দিকে তাকিয়ে ছিলাম। নিজের ঘরে গেলাম। বাচ্চাটার দিকে তাকালাম। কাছে গিয়ে বললাম, আমাকে ক্ষমা করে দিও, মা।