তথ্যপ্রযুক্তি ও বাংলাদেশ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২২ মে ২০২৩, ৪:০৬:০৯ অপরাহ্ন

রঞ্জিত কুমার দে :
তথ্যপ্রযুক্তি হলো কম্পিউটার কিংবা টেলিযোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে তথ্য সংরক্ষণ, গ্রহণ প্রেরণ তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদি কাজের জন্য ব্যবহৃত প্রযুক্তি। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যতিরেখে আধুনিক সভ্যতার কথা চিন্তা করা যায় না। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার মানুষকে সুখ স্বাচ্ছন্দময় জীবন এনে দিয়েছে। ফলে মানুষ উন্নত চিন্তা ও চেতনার প্রতিফলন ঘটিয়ে নব নব আবিষ্কারে পৃথিবীকে নতুনভাবে সাজানোর কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আধুনিক যুগে প্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তির বিস্ময়কর বিকাশে পৃথিবী জুড়ে নবচেতনার সঞ্চার হয়েছে এবং তা পৃথিবীকে দ্রুত উন্নয়নের দিকে পরিচালিত করছে। তথ্যপ্রযুক্তি সেই অগ্রযাত্রাকে করছে আরও গতিশীল। মানুষের মানবিক চাহিদা পূরণের প্রয়োজনীয় উপাদানের জোগানে তথ্যপ্রযুক্তি নানাভাবে সহায়তা দান করছে। যেমন- ১. মানুষের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতামত ও পরামর্শ সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করা। ২. বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাথে পরিচয় ঘটিয়ে নিজস্ব সংস্কৃতির উন্নতি ও সমৃদ্ধি সাধনে সহায়তা করা। ৩. দেশ-বিদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও উন্নয়নের অন্তরায়কে তুলে ধরা। ৪. মানুষকে কাজের ক্ষেত্রে অনুপ্রাণিত করা। ৫. আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে প্রেরণা জোগানো। ৬. বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আগাম তথ্য সরবরাহ ও পরিবেশন করা। ৭. অতীত ঐতিহ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য পরিবেশন করে প্রতœতাত্ত্বিক গবেষণায় বিশেষ ভূমিকা ইত্যাদি। ৮. শিক্ষা বিস্তার, মানবীয় মূল্যবোধ সৃষ্টি এবং সহিষ্ণুতা বিষয়ে মানুষের মধ্যে আত্মসচেতনতাবোধ সৃষ্টি করা।
এক সময় আধুনিক প্রযুক্তি হিসেবে ছিল টেলিগ্রাফ। সময়ের আবর্তে তা এখন আর টিকে নেই। বর্তমানে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ছোয়ায় যোগাযোগের জন্য এসেছে টেলিফোন, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, ই-মেইল। বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে পৃথিবীর এক প্রান্তের মানুষের সাথে অন্য প্রান্তের মানুষের যোগাযোগ রক্ষার জন্য ফোন করা যায়, কম্পিউটারে বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে বক্তা ও ¯্রােতার ছবি এবং তার অবস্থান, মুভমেন্ট ইত্যাদি দেখা যায়।
আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম হচ্ছে ইন্টারনেট। এর মাধ্যমে পৃথিবীর এক প্রান্তের কম্পিউটার থেকে অন্য প্রান্তের আর একটি কম্পিউটারে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ ও প্রেরণ করা যায়। পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িয়ে আছে ইন্টারনেট। রাজনীতি, অর্থনীতি সব ক্ষেত্রেই ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ অবারিত হচ্ছে। ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ অনলাইনে বই পড়ে। দেশ বিদেশের সাহিত্য সংস্কৃতির সাথে জ্ঞানের যোগাযোগ রক্ষা করছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তির এক বিশাল জগতে প্রবেশ করেছে।
বিজ্ঞান প্রযুক্তির কল্যাণে শিক্ষা ও চিকিৎসাক্ষেত্রে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে তার সুফল বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিচ্ছে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি। চিকিৎসাক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে আছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষ অল্প সময়ে অধিক কাজ করছে। বর্তমানে প্রায় সব মোবাইল সেটেই বিবিসি সহ দেশি-বিদেশি বহু রেডিও স্টেশন থেকে প্রচারিত অনুষ্ঠান শোনা যায়। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশও সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে এই প্রযুক্তির সহায়তায় কাজ করে যাচ্ছে। সরকার প্রযুক্তি নির্ভর একটি আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সারাদেশের জেলাগুলোর সমস্ত তথ্য এবং প্রতিদিন ঘটে যাওয়া তথ্য জানার জন্য সরকার জেলা তথ্য বাতায়ন নামে একটি ওয়েবসাইট চালু করছে। শুরু হয়েছে ডিজিটাল কৃষিব্যবস্থা।
ব্যবসায়, বিপণন, ভার্চুয়াল যোগাযোগ এ তিন পথই এখন তথ্যপ্রযুক্তির প্রধান প্রযুক্তি, ইন্টারনেটের দখলে। পরবর্তী সময়ে এই তথ্যপ্রযুক্তিই বিশ্বের পুরো কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণ করবে। গবেষকরা জানিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তির বৈপ্লবিক উন্নতির মাধ্যমে বিশ্বের অনুন্নত জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠবে।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।