‘জুলিও কুরি’ শান্তিপদক
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ মে ২০২৩, ৭:০৫:৫৭ অপরাহ্ন
মানুষ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে যেই ব্যবহারটা করে সেটাই তার আসল চরিত্র। -রেদোয়ান মাসুদ
আজ ঐতিহাসিক ২৩ শে মে,ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন।আজ থেকে ৫০ বছর আগে আজকের এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘জুলিও কুরি’ শান্তিপদক লাভ করেন। ১৯৭৩ সালের এ দিনে বঙ্গবন্ধুর হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেওয়া হয় জুলিও কুরি পদক। বাঙ্গালি জাতির এই পদকপ্রাপ্তি অত্যন্ত গৌরবের। আজ উদযাপিত হচ্ছে এই শান্তিপদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন বরাবরই শান্তির পক্ষে। নির্যাতিত মজলুম মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, অনুভব করেছেন তাদের কষ্ট-দুঃখ। হাজার বছর ধরে নিপীড়িত- শোষিত বাঙ্গালি জাতির মুক্তির স্বপ্নকে তিনি বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। জাতিকে স্বাধীনতা নামক স্বস্তি তথা শান্তির স্বাদ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, বিশ্বের যেকোন অঞ্চলে শান্তি বিঘœ করার যেকোন কার্যক্রমের বিরোধি ছিলেন বঙ্গবন্ধু। মানবতার অবক্ষয় দেখলেই তিনি সোচ্চার হয়েছেন। জাগিয়েছেন বিশ্ব বিবেককে। শান্তির জন্য এই ব্যাকুলতা বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনের অপরিহার্য অংশ হয়ে ওঠে। তাই তিনি শান্তিপূর্ণ পথেই রাজনৈতিক লক্ষ অর্জনের চেষ্টা করেছেন। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু তাঁর হাতে ক্ষমতা না দিয়ে জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়।এই প্রক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু শুরু করেন শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলন। পয়লা মার্চ থেকেই বাংলাদেশ ভূখ-ের প্রশাসন, অর্থনীতি, আইনশৃঙ্খলা সবকিছু চলতে থাকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে। আর এমনি অবস্থায় ‘অপারেশন সার্চলাইট’ এর মাধ্যমে পাকিস্তানি বর্বর আর্মিরা বাঙ্গালিদের হত্যা করতে থাকে নির্বিচারে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় বাঙ্গালিদের। তারা প্রতিরোধ শুরু করে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। স্বাধীন সার্বভৌম দেশের মূলনীতি হিসেবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদকে ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুর্নগঠন করেন। একইসঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংঘাতময় পরিস্থিতি উত্তরণে তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন জোরালোভাবে। এতে উপমহাদেশে শান্তির সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়। পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াশীল নীতির বিপরীতে বঙ্গবন্ধু সরকার জোট নিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ করেন। তিনি শান্তি ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। তাই ১৯৭২ সালের চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোয় অনুষ্ঠিত বিশ্বশান্তি পরিষদের প্রেসিডেন্সিয়াল কমিটির সভায় ১৪০টি দেশের প্রায় ২০০ সদস্যের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়কত্বের প্রেক্ষাপটে তাকে ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদক দেওয়ার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়।
জুলিও কুরি হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশে কোন রাষ্ট্রনেতার প্রথম আন্তর্জাতিক পদক লাভ এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান। এ অর্জন বিশ্বসভায় বঙ্গবন্ধুকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছিল এবং উজ্জ্বল করেছিলো বাংলাদেশের ভাবমূর্তি। বঙ্গবন্ধু বলেন, পৃথিবীর বৃহত্তম শক্তি যে অর্থ ব্যয় করে মানুষ মারার অস্ত্র তৈরি করছে, সেই অর্থ গরিব দেশগুলোকে সাহায্য দিলে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা হতে পারে। যে কারণে বিশ্বনেতাদের অনেকে বঙ্গবন্ধুকে ‘বিশ্ববন্ধু’ বলে অভিহিত করেন। আজকের এই ঐতিহাসিক দিনে বঙ্গবন্ধুর দেখানো শান্তির পথেই এগোনোর শপথ নিতে হবে।