সিলেটে ভ্যাপসা গরমে তাল শাঁসের চাহিদা বাড়ছে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ মে ২০২৩, ৯:০৬:৩৯ অপরাহ্ন

সুনীল সিংহ
গ্রীষ্মের দাবদাহ থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেতে কঁচি তালশাঁস খুবই জনপ্রিয়। তালের কঁচি শাঁসই আলাদাভাবে তালশাঁস ফল হিসেবে পরিচিত। এটি খেতে খুবই সুস্বাদু। এখন বাজারে গ্রীষ্মকালীন নানান ফলের ভিড়ে পাওয়া যাচ্ছে তাল শাঁস। এতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। যা অনেকটা ডাবের পানির মতো। এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, ফাইবার এবং খনিজ উপাদান পাওয়া যায়।
গতকাল সোমবার নগরীর সর্বোচ্চ তাপমাত্র ছিল ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রায় দিনমজুরদের বিশেষ করে রিক্সাচালকদের রিক্সা চালানো খুবই কষ্টকর ছিল। এ থেকে বাঁচতে অনেককে ছায়া খুঁজে বিশ্রাম নিতে দেখা যায়।
গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে তালের শাঁস। প্রচন্ড গরমে তালের কঁচি শাঁস এবং এর ভেতরের মিষ্টি পানি তৃষ্ণা মিটিয়ে শরীরে এনে দেয় প্রশান্তি।
পুষ্টিবিদদের মতে, ডাবের পানি এবং তালের শাঁসের গুণাগুণ একই রকমের। দু’টিই থাকে খোলসের ভিতরে। ডাবের পানির পুরোটাই তরল, অন্যদিকে তালের শাঁসে কিছুটা শক্ত অংশ থাকে।
নগরীতে গত ক’দিন ধরে ভ্যাপসা গরম পড়ছে। এই গরমে স্বস্তি এনে দিতে নগরীর ভিন্ন এলাকায় ও রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিক্রি হয়েছে তালের শাঁস।
দুপরে নগরীর উপশহর ই ব্লকের মোড়ে তালের শাঁস বিক্রি করেন আফতাব মিয়া। তিনি তালের শাঁস বিক্রি করেন ১০ টাকা দরে। আফতাব আরো জানান, তালের শাঁস রাজশাহী থেকে আসে। প্রতি বছর তিনি এসময় তালের শাঁস বিক্রি করে সংসার চালান। এগুলো বিক্রি করে তিনি প্রশান্তি পেয়ে থাকেন, তালের শাঁস বেশি বিক্রি হয় দিনমজুর ও শিশুদের মধ্যে। কারণ এই গরমে দিনমুজর কাজ করে তৃষ্ণা মেটাতে ডাবের পরিবর্তে এই শাঁস খেয়ে থাকেন। ক্রেতারাও অনেক আগ্রহে তা কিনে নিয়ে যান।
লামাবাজারের বাসিন্দা সুমন দাস জানান, সকালে বাসা থেকে বের হয়ে সারা দিন কাজ সেরে এই গরমে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। তাই, শরীরের ক্লান্তি দূর করতে তালের শাঁস খাচ্ছেন। তিনি জানান, ডাবের দাম বেশি হওয়ায় গরীরের ডাব হিসেবে আমরা এই তালের শাঁসে ভরসা করি।
রিক্সাচালক আজিজ জানান, এমনিতেই শরীর দুর্বল, তার উপর প্রখর রোদ। এতে রিক্সা চালানোয় দায়। তাই একটা ট্রিপ দিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছি। আর তালের শাঁস খাচ্ছি যাতে করে শরীরে একটু প্রশান্তি আসে।
নগরীর লালদিঘীর পাড় এলাকায় ফারুক নামের তালের শাঁস বিক্রেতা জানান, গরম পড়লে তালের শাঁস বিক্রি ভালো হয়। তিনি আড়ৎ থেকে প্রায় ৩ হাজার টাকার তালের শাঁস নিয়ে এসেছেন। এ থেকে যা লাভ হবে, তা দিয়ে সংসারের খরচ নিবেন তিনি। তিনি জানান, একটা তালের ভিতর ২টা বা ৩টা শাঁস থাকে। ২টা শাঁস ২০ টাকা ও ৩টা ৩০ টাকায় বিক্রি করেন। আর কেউ বেশি নিলে বিবেচনা করে দাম নেন।
পুষ্টিবিদরা জানান, তাপমাত্রার কারণে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, চুল পড়া ইত্যাদি রোধ করতে সাহায্য করে এটি। অতিরিক্ত ঘামের ফলে শরীর থেকে যে পানি বেরিয়ে যায় তা পূরণ করতে সাহায্য করে তালের শাঁস। গরমের কারণে ত্বকে কোন ধরনের র্যাশ বা ব্রণ দেখা দিলে তালের শাঁস মুখে লাগাতে পারেন। এতে ত্বকের সমস্যা কমে যাবে। আলসার এবং অ্যাসিডিটি দূর করতেও সাহায্য করে এটি। গভর্বতী নারীদের হজমের জন্য এটি বেশ উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকায় এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে।
রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. সত্যজিত সিংহ জানান, পাকস্থলীর বিভিন্ন সমস্যা এবং হজমের সহায়ক হিসেবে প্রাকৃতিক ওষুধের মতো কাজ করে তালের শাঁস। এটা হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। ক্যালরির পরিমাণ কম থাকায় এটি ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে।
তিনি আরো জানান, তালশাঁসে থাকা ভিটামিন সি ও বি কমপ্লেক্স যা শরীরের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। তালশাঁসে থাকা ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি প্রখর করতে সাহায্য করে। তালশাঁসে থাকা নানা রকম উপাদান লিভার সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমায়। তালশাঁস লিভার থেকে ক্ষতিকর এবং দূষিত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে।
শরীরে আয়রণের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেলে অ্যানিমিয়ার সমস্যা দেখা দেয়। এই ঝুঁকি এড়াতে তালশাঁস খেতে পারেন বলেও জানান তিনি।