ধূমপান বর্জন দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ মে ২০২৩, ২:১৮:৩০ অপরাহ্ন
জীবন হলো পেন্সিলে আঁকা এক ছবির নাম, যার কোন অংশ রাবার দিয়ে মুছে ফেলা যায় না। -জন ডব্লু গার্ডনার
ধূমপানের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে আজ দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব ধূমপান বর্জন দিবস। বিশ্বের অন্যান্য স্থানের মতো নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে দিবসটি আমাদের দেশেও। যখন দেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে তখন এখানে ধূমপায়ির সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। জরিপের তথ্য হচ্ছে, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের ৭২ শতাংশ ধূমপানে আসক্ত। এর মধ্যে ৪৪ শতাংশ ধূমপান শুরু করে ১৮ বছরের কম বয়সে। পাবলিক প্লেসে ধূমপায়িদের ৯০ শতাংশ এখনও কোনো ধরণের জরিমানার শিকার হয়নি। এছাড়া, তামাকজাত পণ্য ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট নানা রোগে প্রতি বছর দেশে ৫৭ হাজার লোক মারা যায়। পঙ্গুত্ব বরণ করে ছয় লাখ ৮২ হাজার মানুষ। আর ধূমপানজনিত সৃষ্ট রোগের চিকিৎসা করতে সরকারের ব্যয় হয় প্রতি বছর কমপক্ষে ১১ হাজার কোটি টাকা। অপরদিকে সিগারেট কোম্পানিগুলো কৃষিজমিতে তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছে কৃষকদের। এতে কৃষকেরা খুব একটা লাভবান না হলেও লাভবান হচ্ছে সিগারেট কোম্পানিগুলো। আর এতে মানুষের স্বাস্থ্য, পরিবেশসহ সার্বিক অর্থনীতির সর্বনাশ হচ্ছে।
ধূমপান যে মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর, এটা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। দেশে বছরে ১২ লাখ লোক তামাক ব্যবহারজনিত ছয়টি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাছাড়া, দেশে অপুষ্টির কারণে প্রতিদিন যে সাতশ’ শিশু মারা যায় তার অর্ধেক বাঁচানো সম্ভব যদি পিতা-মাতা তামাকের পেছনে যে অর্থ ব্যয় করেন তার ৬৪ শতাংশ খাবারের জন্য ব্যয় করতেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, সারা দেশে তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি মানুষ কোন না কোনভাবে তামাক ব্যবহার করছে। ধূমপানে আসক্ত মহিলারাও। ধূমপায়ি মহিলাদের সংখ্যা বাড়ছে। চর্বনযোগ্য তামাক ব্যবহার করে দুই কোটির বেশি নারী-পুরুষ। এছাড়া, ধূমপায়িদের কারণে অধূমপায়ি কোটি কোটি মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তামাক থেকে ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ধূমপানের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু ও গর্ভবতী নারী। সিগারেটের কারণে প্রতি বছর বিভিন্নভাবে দু’শ ৬৮ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। ধূমপানের বিরুদ্ধে আইন রয়েছে। আইনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে প্রকাশ্যে ধূমপান। কিন্তু বাস্তবে এই আইনের কোন প্রয়োগ নেই বললেই চলে। ফলে আইনটি থেকে যাচ্ছে শুধু কাগজে কলমে। অপরদিকে দিনের পর দিন বেড়ে চলেছে তামাক চাষ। জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতি বছর দুই হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে তামাক চাষ হয়। তামাক উৎপাদন হচ্ছে
বছরে ৬৪ হাজার মেট্রিক টনের বেশি। আর বছরে পাঁচ হাজার মেট্রিকটনের বেশি তামাক বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে। যে জমিতে তামাক চাষ করা হয়, সেই জমির উর্বরা শক্তিও কমে যায়। তামাক যেমন- আর্থিক ও জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে, তেমনি ক্ষতি করছে পরিবেশের। তামাক শোকানোর জন্য হাজার হাজার বৃক্ষ কেটে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া, সিগারেট তৈরির বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় নির্গত রাসায়নিক পদার্থ দূষিত করছে বাতাস।ধূমপান শুধু আমাদের দেশের জন্যই নয়, সারা বিশ্বের জন্য মারাত্মক সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বিশ্বে বছরে কমপক্ষে অর্ধলক্ষ মানুষ মারা যাচ্ছে ধূমপানের কারণে। বিশেষজ্ঞগণ আশঙ্কা করছেন এই শতাব্দীর শেষ দিকে তামাক মহামারিতে বিশ্বে একশ’ কোটি লোকের মৃত্যু হবে। বর্তমানে বিশ্বের একশ’ ৭৯টি দেশের মানুষ ব্যাপকভাবে ধূমপান করছে। আন্তর্জাতিকভাবে প্রতি বছর প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলারের সিগারেট চোরাচালানের মাধ্যমে বিক্রি হয়। যে কারণে সিগারেটের মূল্য তুলনামূলকভাবে বাড়ছে না।
যদিও দেশের বুদ্ধিজীবীগণ সিগারেট-বিড়ির ওপর কর বাড়ানোর জন্য জোরালোভাবে দাবি জানিয়ে আসছেন। কর বাড়ানোও হচ্ছে, দামও বাড়ছে সিগারেটের। কিন্তু কর বা দাম বাড়লেই যে সিগারেট বিড়ি কেনা বন্ধ করে দেবে ধূমপায়িরা, সেই নিশ্চয়তা কতোটুকু? আজকের এই ধূমপান বর্জন দিবসে আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে, ধূমপান বিরোধি আইন আরও কড়াকড়ি করার পাশাপাশি একে শতভাগ কার্যকর করা হোক।