হবিগঞ্জে প্রকল্প অনুমোদনের আগেই গাছ কাটার প্রতিবাদে মানববন্ধন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ জুন ২০২৩, ৪:২৭:৩৮ অপরাহ্ন
হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে চারদিকে চলছে প্রচ- গরম। এই গরম মোকাবেলায় যখন চারদিকে রব উঠেছে বেশি করে গাছ লাগানো ও বনাঞ্চল রক্ষা করার, তখন হবিগঞ্জে প্রয়োজন ছাড়াই কেটে ফেলা হয়েছে হাজার হাজার গাছ। বন বিভাগ সামাজিক বনায়নের অজুহাতে এই গাছ কেটেছে। সড়ক বিভাগে রাস্তায় থাকা গাছগুলো এখনই কাটার কোনো প্রয়োজন না থাকলেও গাছগুলো কাটায় পরিবেশে সৃষ্টি হয়েছে বিরূপ প্রভাব। বন বিভাগের এই গাছ কাটার প্রতিবাদে হবিগঞ্জে আন্দোলনে মুখর হয়েছে হবিগঞ্জবাসী। গতকাল সোমবার বিশ্ব পরিবেশ দিবসে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে বিভিন্ন ব্যানারে। দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের উদ্যোগে পরিবেশ দিবসের অনুষ্ঠানে গাছ কাটার বিষয়টি তুলে ধরে বক্তৃতা করেন বাপা হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল ও সহ-সভাপতি কবি তাহমিনা বেগম গিনি। গতকাল সোমবার দুপুরেও ‘গাছ কাটা যাবে না’ প্ল্যাকার্ড নিয়ে হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ সড়কে কাটা গাছ রাস্তার পাশ থেকে নিয়ে রাস্তার ওপর ফেলে সেটিতে কাফনের কাপড় পরিয়ে রাস্তায় বসে প্রতিবাদ করা হয়। হবিগঞ্জের বিশিষ্ট নারী নেত্রী মাহমুদা খার আহ্বানে এই প্রতিবাদের আয়োজন করা হয়। সেখানে কোনো কোনো প্ল্যাকার্ডে উল্লেখ করা হয় ‘গাছ কেটে তথাকথিত উন্নয়ন চাই না’। এ সময় রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ থাকে। মাহমুদা খা জানান, ‘গাছ কাটা যাবে না’ স্লোগান নিয়ে আমরা হবিগঞ্জবাসী আন্দোলন করেছি। মঙ্গলবারও আমরা কর্মসূচি পালন করব। আর যাতে গাছ কাটা না হয় তার জন্য আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামব। এদিকে, গতকাল দুপুরে জেলা প্রশাসকের অফিসের সামনে গাছ কাটার প্রতিবাদে হবিগঞ্জবাসীর ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে শত শত তরুণ-তরুণী অংশগ্রহণ করে। বন বিভাগ, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ সড়কের কলিমনগর থেকে পুরানবাজার পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ২০০৪-০৫ সালে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে লাগানো হয়েছিল কয়েক হাজার আকাশমনি, শীল করই, ম্যানজিয়াম, লোহা, মেহগনি জাতীয় গাছ। এই গাছের জন্য রাস্তাটি হয়ে ওঠে অপরূপ। গাছে বসে পাখিরা আশ্রয় নিতো। পথচারীরা বিশ্রাম নিতেন গাছের নিচে। মনোরম পরিবেশে ওই রাস্তা দিয়ে হবিগঞ্জ থেকে ঢাকা ও সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকার গাড়ি চলাচল করে। কিন্তু দুই সপ্তাহ আগে হঠাৎ করেই কেটে ফেলা হয় বড় বড় গাছ।
এমনকি ছোট গাছগুলোও রক্ষা পায়নি কাটার হাত থেকে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সড়ক বিভাগ হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ সড়কটি ডাবল লেন করার উদ্যোগ নিয়েছে। এ ব্যাপারে একটি প্রকল্প তৈরি করে অনুমোদনের জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হলেও এখনও সেটি অনুমোদন হয়নি। অনুমোদন হওয়ার পর জমি অধিগ্রহণসহ আনুষঙ্গিক কাজে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। কিন্তু কোনো প্রয়োজন ছাড়াই গাছগুলো কাটা হয়েছে বলে দাবি করেন পরিবেশ আন্দোলনের সাথে জড়িতরা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, এই উষ্ণায়নের সময়ে যখন গাছ রক্ষার জন্য আমরা আন্দোলন করছি তখন বন বিভাগ এভাবে গাছ কেটে ফেলে শুধু পরিবেশের ক্ষতি করে নাই। রাস্তার সৌন্দর্যও নষ্ট হয়েছে। আশ্রয়হীন হয়েছে পাখি। বন বিভাগ এ ব্যাপারে লুকোচুরি করছে। ছোট গাছগুলোও কেটে ফেলা হয়েছে রাস্তার পাশ থেকে। তিনি আরো বলেন, ক্রমাগতভাবে তাপমাত্রা যখন বাড়ছে, বেশি বেশি করে গাছ লাগানোর কথা যখন বলা হচ্ছে ঠিক সেই সময় বন বিভাগ গাছগুলো না কেটে বিকল্প কোনো চিন্তা করা উচিত ছিল। যেহেতু এখনই রাস্তা প্রশস্ত হচ্ছে না তাই একসাথে না কেটে ভাগ করে কাটলে পরিবেশ রক্ষা পেত। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কেটে ফেলা গাছগুলোর বিক্রি মূল্য থেকে বন বিভাগ পাবে ৪৫ ভাগ। ৪৫ ভাগ পাবেন যারা গাছ রোপণ করেছিলেন এবং বাকি ১০ ভাগ টাকা দিয়ে বন বিভাগ আবারও বনায়ন করবে। কত টাকায় গাছ বিক্রি হয়েছে এবং কি পরিমাণ জানতে চাইলে বনবিভাগ শায়েস্তাগঞ্জ রেঞ্জের অফিসার শাহ আহমদ বলেন, টেলিফোনে সব তথ্য দেওয়া যাবে না। সামনা-সামনি আসলে তথ্য দেওয়া যাবে। তবে তিনি জানান, ৫০ জন উপকারভোগী এই সামাজিক বনায়ন করেছিলেন। হবিগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সল বলেন, ৮ কিলোমিটার সড়কে বন বিভাগ সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে গাছ লাগায়। সড়ক বিভাগে তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালে একজন উপকারভোগী সড়ক বিভাগের সাথে চুক্তি করে সামাজিক বনায়ন করেন। আর বন বিভাগের সামাজিক বনায়নের কাগজে দেখা যায় এটি ২০১১ সালের লাগানো। বন বিভাগ এই গাছ কাটার জন্য জেলা বন ও পরিবেশ কমিটি বরাবর আবেদন করলে ওই কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গাছগুলো কাটা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তিনি আরো বলেন, হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ সড়কটি ডাবল লেন করতে একটি ডিপিপি (ডেভেলপম্যান্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। তবে, সেটি এখনও অনুমোদন হয়নি।