শিক্ষার্থীর আত্মাহুতি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ আগস্ট ২০২৩, ৬:১৭:১০ অপরাহ্ন
আল্লাহকে ডাকতে গিয়ে একজন অপরজনকে কষ্ট দিবে না এবং কারও তেলাওয়াত বা নামাজে তেলাওয়াতের সময় আওয়াজ যেন অন্যজনের কণ্ঠস্বরের চেয়ে উঁচু না হয়। -আল হাদিস
আত্মহত্যায় ঝুঁকছে শিক্ষার্থীরা। প্রায় সময়ই শোনা যায় উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার খবর। পরিসংখ্যানের খবর হচ্ছে, গত বছর সারাদেশে পাঁচ শ’৩২ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এদের মধ্যে ছাত্রি ২৮৫ জন এবং ছাত্র ১৬১ জন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৮৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। এর মধ্যে ৫৪ জন মাদ্রাসা শিক্ষার্থীও রয়েছে।এর আগের বছর (২০২১) দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। তাদের মধ্যে ৬৫ জন পুরুষ ও ৩৬ জন নারী শিক্ষার্থী।যাদের সামনে অপেক্ষা করছে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ, সেই শিক্ষার্থীরা এভাবে আত্মাহুতি দিচ্ছে, বিষয়টি সত্যি উদ্বেগের।
আত্মহত্যার প্রবণতাকে একটি রোগ হিসেবে অভিহিত করেছেন বিশেষজ্ঞগণ। আর এই প্রবণতা শুধু আমাদের দেশেই নয়, সারা বিশ্বে রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র মতে, বিশ্বজুড়ে বছরে প্রায় আট লাখের মতো মানুষ আত্মহত্যার মাধ্যমে মৃত্যুবরণ করে থাকে। আর প্রতি চল্লিশ সেকেন্ডে একজন মানুষ আত্মহত্যা করছে। সর্বশেষ তথ্যানুসারে বর্তমানে বাংলাদেশে বছরে প্রায় ১১ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যা যে কোনো বয়সসীমার মধ্যেই বিদ্যমান হলেও, দেখা গেছে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হচ্ছে আত্মহত্যা। স্বভাবিকভাবেই এদের বেশিরভাগ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। উল্লিখিত পরিসংখ্যানে যাদের কথা উঠে এসেছে, তাদের বেশিরভাগের বয়স ২২ থেকে ২৯ বছরের মধ্য। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আত্মহত্যার পেছনে একটি নয় বরং একাধিক কারণ শনাক্ত হয়। মানসিক স্বাস্থ্যের ধারণাটা এখন পর্যন্ত পৃথিবীর অনেক জায়গায় অবহেলিত এবং অস্পষ্ট। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি অজ্ঞতার দরুণ এটি নিয়ে আমাদের সমাজে বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণা এবং কুসংস্কারও বিদ্যমান। আবার মানসিক সমস্যা এবং মানসিক রোগ সম্পর্কেও আমাদের ধারণা না থাকায় আমরা নানা ধরনের বিভ্রান্তিতে পড়ি। আর মনোবিজ্ঞানীর দ্বারস্থ হওয়া তো আমাদের সমাজের প্রেক্ষাপটে অনেক দূরের বিষয়। আত্মহত্যা প্রবণ ব্যক্তি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভীষণ হতাশাগ্রস্ত বা বিষাদগ্রস্ত থাকে এবং চিন্তা করে যে আত্মহত্যার মাধ্যমে তার সব কষ্ট শেষ হয়ে যাবে। গবেষকগণ বলেন কিছু দীর্ঘমেয়াদী মানসিক অসুস্থতার সঙ্গে আত্মহত্যা সম্পর্কিত। এর মধ্যে অন্যতম বিষণœতা। এছাড়াও ব্যক্তির জীবনে কিছু ঘটনা বা টানাপোড়েন যেমন- জীবনের চাপ মোকাবেলা করতে না পারা, আর্থিক সংকট, একাকিত্ববোধ, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নতা, পারিবারিক কলহ, নেশাগ্রস্ততা, রোমান্টিক সম্পর্কের বিচ্ছিন্নতা, পড়াশোনায় ভালো ফলাফল না করা, দীর্ঘ মেয়াদী মানসিক আঘাত ইত্যাদিও ব্যক্তিকে আত্মহত্যার ঝুঁকিতে ফেলে।
সর্বোপরি প্রত্যেকটি আত্মহত্যা একটি বা ততোধিক পরিবার, সমাজ, দেশ এবং পুরো বিশ্বকে প্রভাবিত করে। আর যারা বেঁচে থাকে তাদের ওপরেও এর একটি দীর্ঘমেয়াদী বিরূপ প্রভাব রেখে যায়। এটা সত্যি যে, শারীরিকভাবে অসুস্থ বা কোনো রোগ হলে সবাই একজন ডাক্তারের কাছে যেতে দ্বিধাবোধ করে না। তবে কোনো মানসিক সমস্যা দেখা দিলে বা মানসিক রোগের ক্ষেত্রে কোনো পেশাদার মনোবিজ্ঞানী বা মনোঃচিকিৎসকের কাছে যেতে চায় না কেউ; সমস্যা এখানেই।