স্বাস্থ্যসেবায় দালালচক্র
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১:৩৫:১৯ অপরাহ্ন
যুদ্ধের সবচেয়ে সেরা কৌশল হলো, লড়াই করা ছাড়াই শত্রুকে পরাজিত করতে পারা। – সান জু।
খবরটি একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার। আমাদের স্বাস্থ্যসেবায় একটি পরিচিত চিত্র হচ্ছে দালালদের উৎপাত। খবরে বলা হয়, হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যসেবা অনেকাংশে বন্দি দালালদের শক্তিশালী সিন্ডিকেটের হাতে। সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগিদের বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়াই তাদের মূল কাজ। রোগি আর তাদের স্বজনদের ভোগান্তির মুখে ফেলছে দালালদের উৎপাত। দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগিদের নানাভাবে বুঝিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রিত ক্লিনিকে নিয়ে যাচ্ছে তারা। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রান্তিক অঞ্চলের সাধারণ মানুষ।
প্রান্তিক জনপদের একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এমন দশা হলে বড় বড় শহরের হাসপাতালগুলোর কী অবস্থা, সহজেই অনুমেয়। বলা যায়, সারা দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাই দালালচক্রের দখলে। হাসপাতালে যেমন, প্রাইভেট চেম্বার কিংবা ক্লিনিকেও তেমনি দালালদের উৎপাত। দেখা যায়, সরকরি হাসপাতালগুলোতে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা রোগি ও তাদের স্বজনরা প্রধান ফটকে প্রবেশের পরই নানাভাবে বুঝিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বেসরকারি ক্লিনিকে। এর জন্য জরুরি বিভাগসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওৎ পেতে থাকে দালালচক্র। শুধু তাই নয়- দালাল, প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর মধ্যে যোগসূত্র থাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও কমিশনের লোভে একশ্রেণির সরকারি চিকিৎসক রোগিদের বেসরকারি ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে দিচ্ছে। রোগি ভাগিয়ে নেয়া থেকে শুরু করে সিট বাণিজ্য, পরীক্ষা, আইসিইউ, সর্বত্রই দালাল। দালালদের পাল্লায় পড়ে রোগিদের সরকারি সুবিধা নিতেও গুনতে হচ্ছে টাকা। দালালরা সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থার খারাপ চিত্র তুলে ধরে রোগিদের ভাগিয়ে নিচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালে। চিকিৎসকরা রোগিদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিলে সেগুলোও তারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়ে করাচ্ছে। শুধু তাই নয়, রোগিদের জন্য প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে বিপুল পরিমাণ ওষুধ বাইরে থেকে কিনিয়ে আনা হয়; পরে আবার সেই ওষুধ দোকানে ফেরৎ দিয়ে টাকা মেরে দেয় হাসপাতালের কর্মচারি ও দালাল চক্র।
এমনিতেই সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রত্যাশিত সেবা পায় না সাধারণ মানুষ,তার ওপর দালালদের অপতৎপরতায় বলা যায় সরকারি হাসপাতালের প্রতি অনীহা বেড়ে চলেছে। এই অবস্থায় সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে, সাধারণ রোগিদের সচেতন করা। সেইসঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এই অপকর্মে সম্পৃক্তদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সর্বোপরি, সরকারি হাসপাতালে যাতে রোগিরা সুচিকিৎসা পায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।