অপরাধে ‘কিশোর দল’
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ অক্টোবর ২০২৩, ৪:০৩:০৯ অপরাহ্ন
তারাই সুখি যারা নিজেদের ভাঙনের আওয়াজ পায় আর মেরামত করে নিতে পারে। – শেক্সপিয়ার।
‘কিশোর দল’এর অপতৎপরতায় অতিষ্ঠ মানুষ। এলাকাভিত্তিক গড়ে ওঠা ‘কিশোর দল’ বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। নগরির বিভিন্ন এলাকায় এরা ছিনতাই চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে। কেউ এর প্রতিবাদ করতে চাইলে সে ও আক্রান্ত হচ্ছে তাদের হাতে। এছাড়া নগরির বাইরেও কিশোর গ্যাংয়ের যন্ত্রণা বেড়ে চলেছে। বলা যায়, শহর নগরসহ সারা দেশে বিস্তার করেছে কিশোর অপরাধ। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভ থেকে সরে এসে নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে কিশোরেরা। ‘কিশোর দল’ হয়ে ওঠেছে ‘কিশোর গ্যাং’।
দেখা গেছে, মাদক চোরাচালান, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার ও বহনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা। অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের ছেলেরাও এই ধরণের অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় অভিভাবকদের পক্ষেও সন্তানের খোঁজ-খবর রাখা সম্ভব হয় না। প্রযুক্তির সঙ্গে অনেক অভিভাবক তাল মিলিয়ে চলতে না পারায় সন্তানের খোঁজ-খবর নিতে ব্যর্থ হন। টিকটক আসক্তির মাধ্যমে গ্যাং তৈরি করা কিংবা অনলাইন গেম থেকে অস্ত্র চালনায় অনুপ্রাণিত হয়ে জঙ্গিগোষ্ঠীতে নাম লেখানোর মতো ঘটনাও আছে। সবচেয়ে বড় কথা, সাধারণ মানুষের কাছে এখন আতঙ্কের নাম কিশোর গ্যাং। কিশোরেরা শিক্ষক, বয়স্ক, তরুণ কাউকেই তোয়াক্কা করছে না। রাজনৈতিক দলের পদ-পদবির জন্য কিশোরেরা নেতাদের অনুসারি হচ্ছে এবং এলাকাভিত্তিক দ্বন্দ্বে তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। সাধারণত কয়েকজন কিশোর একত্রিত হলে তাকে কিশোর দল বলা হয়ে থাকে। সেটা নেতিবাচক কিছু নয়। কিন্তু তাদেরকে ‘কিশোর গ্যাং’ বললে একটা আতংকের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আর সত্যি সত্যিই তারা এখন সমাজের আতংক হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছে। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে, একজন অপরাধি কিশোরের অপরাধের দায় ভোগ করতে হয় পুরো পরিবারকেই। পাশাপাশি কিশোর অপরাধ আইনে দুর্বলতার কারণে বড় অন্যায় করেও পার পেয়ে যাচ্ছে অনেকে। ছাড়া পেয়ে আবার যুক্ত হচ্ছে নতুন অপরাধে। পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষ অপরাধ করলে তার জন্য প্রচলিত আইনে উপযুক্ত শাস্তির বিধান রয়েছে। আর কিশোর অপরাধির শাস্তি তুলনামূলক কম। অপরদিকে কিশোর গ্যাং এর দ্বারা সংঘটিত ঘটনার তিন ভাগের এক ভাগও থানায় রেকর্ড হয় না। কারণ পুলিশের কাছে অভিযোগ দিতে গিয়ে মানুষ চরম হয়রানির শিকার হয়।
কিশোর গ্যাং কে থামানোর দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আর কেউ যাতে তাদের ব্যক্তিস্বার্থে নির্মল কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। এব্যাপারে পরিবার ও সমাজের দায়িত্ব রয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, প্রশাসনের নাকের ডগায় দিনে দিনে কিশোর অপরাধের সংখ্যা বাড়ছে। ইতোপূর্বে সিলেট নগরিতে কিশোর অপরাধির তালিকা করার উদ্যোগ নেয়া হয়। পুলিশের পক্ষে বলা হয়েছিলো, কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতার বিরুদ্ধে পুলিশ জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করবে। সেই উদ্যোগ সফল হবে বলেই আমরা আশা করছি।