ফিলিস্তিনে রক্ত ঝরছে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ নভেম্বর ২০২৩, ৫:৪৫:০২ অপরাহ্ন
রফিকুর রহমান লজু
ফিলিস্তিন জ্বলছে, ফিলিস্তিন মরিয়া হয়ে উঠছে। ফিলিস্তিনে ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, হাজার হাজার দেশপ্রেমিক ফিলিস্তিনি মহিলা-শিশু শাহাদাতবরণ করছে। আকাশে বাতাসে শুধু ধুঁয়া আর বারুদের গন্ধ। এমতাবস্থায় ইসরায়েলের এত শক্তি জেনেও হামাস ইসরায়েলকে আক্রমণ করেছে প্রতিশোধ নিতে, প্রতিরোধ করতে। বড় শক্তি বড় মারণাস্ত্র তাদের নেই। তবুও আল আক্সা মসজিদে হামলা এবং অবৈধ বসতি স্থাপনের জবাব দিতে গিয়ে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হাসান গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভেতরে ঢুকে বিভিন্ন স্থাপনার উপর প্রায় ৫ হাজার রকেট ছুড়েছে। এটা জান-মাল নিজ ভূমি, বাসস্থান রক্ষার যুদ্ধ, মাতৃভূমি রক্ষার, উদ্ধার করার যুদ্ধ। এটা সন্ত্রাসী আক্রমণ নয়। অপরদিকে ইসরায়েলের নিরস্ত্র জনবসতির উপর আক্রমণ মানবতাবিরোধী জঘণ্য কাজ। ইসরায়েল হিংসায় উন্মুখ হয়ে অন্যায়ভাবে মানুষ মারছে। ইসরায়েল ভাবতে পারেনি হামাস বা ফিলিস্তিনিরা এমন আক্রমণ করতে পারে, তাই তারা হতভম্ব হয়ে পড়েছে। হামাস ইসরায়েলের মনোবল ভেঙে দিয়েছে, হামাস ইসরায়েলের বাহাদুরি চুরমার করে দিয়েছে। দুর্বল ফিলিস্তিনিরা সন্ত্রাসী ইসরায়েলের দেমাগ আরো দুর্বল করে দিয়েছে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিদের সাহস ও মনোবল বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। হামাসের আক্রমণের অজুহাতে ইসরায়েল অকাতরে মানুষ মারছে শিশু-মহিলা-পুরুষদের বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের। নিরপরাধ-নিষ্পাপ কচি দুধের বাচ্চাদের মারছে মায়ের কোলে। মৃত বাচ্চাকে আঁকড়ে বুকে ধরে মাও পরপারে চলে যাচ্ছে।
ইসরায়েলিরা এত নিষ্ঠুর, এত বর্বর, এত অমানুষ। এত অমানুষ দুনিয়াতে আছে বলে জানতাম না। ফায়ুম নামের এক ফিলিস্তিনি শিশুকে বর্বর ইসরাইল নির্মমভাবে হত্যা করে, হত্যার পর যোসেফ নামের ওই খ্রিস্টান শিশুটিকে ২৬ বার আঘাত করে। ঘাতক যোসেফ শুধু যুদ্ধরত সৈনিক নয়। সে পশুরূপী মানুষ। ইসরায়েলি ঘাতক। যীশু খ্রিস্ট তো শান্তির ডাক দিয়েছেন, হত্যা, অশান্তি পরিহার করেছেন।
মহাশক্তিধর আমেরিকা ইসরাইলিদের সমর্থন করছে, শক্তি যুগাচ্ছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, মি. বাইডেন অন্যসময় অন্যত্র শান্তির কথা বলেন। বিশ্ববাসীকে তিনি বোকা বানাতে চান। তিনি নিজেকে শান্তি ও উন্নয়নের প্রবক্তা ও রক্ষক বলে জাহির করতে চান। তিনি শান্তি সভ্যতার মোড়ল সেজে বিশ্ববাসীকে ধোকা দিতে চান। তার কদর্য চেহারা তিনি কি আড়াল করতে পারছেন? ফিলিস্তিনি মুসলমানরা লড়ছেন ন্যায়ের জন্য ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের জন্য, মসজিদুল আকসা ইহুদীদের নিয়ন্ত্রণ থেকে উদ্ধারের জন্য। মসজিদুল আকসা এবং আরও যত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সবগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে, নিজেদের হিফাজতে আনার জন্য লড়ছেন ফিলিস্তিনি মুসলমানরা। এদিকে গাজায় ইসরাইলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। ইসরাইল প্রতিদিন গাজায় বোমা ফেলছে, মানুষ মারছে। দখলদার বাহিনীর হামলা থেকে অ্যাম্বুলেন্স, স্কুল, হাসপাতাল রক্ষা পাচ্ছে না। গাজায় ইসরায়েলি আক্রমণ অব্যাহত থাকায় সেখানে কোনো জায়গাই নিরাপদ নয়। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ বলেছেন ইতিহাস থেকে ফিলিস্তিনিদের মুছে ফেলার সবচেষ্টা তুরস্ক প্রতিরোধ করবে। যুদ্ধ শেষ হলে গাজাকে অবশ্যই স্বাধীন
ফিলিস্তিনের অংশ করা হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও অঞ্চলটিতে অবৈধ দখলদারিত্বের অবসান দাবি করেছেন।
পৃথিবীর দুই প্রান্তের দুই রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান-সরকার প্রধানের উদ্যোগ ও আশাবাদের সঙ্গে সারা দুনিয়ার শান্তিকামী ও উন্নয়নকামী মানুষ রয়েছেন। সবাই আশাবাদী যে, অচিরেই দখলদারি ও দস্যুপনার পতন ঘটবে এবং গাজা ফিলিস্তিন স্বাধীন হবে। এই আশাবাদ সারা দুনিয়ায় ঘোষিত হোক, দুনিয়ার মানুষ জেগে উঠুক, ইহুদী-ইসরায়েলের বিনাস ত্বরান্বিত হোক। শান্তির দীপশিক্ষা আলো ছড়াক সবখানে।
সর্বশেষ এক তথ্যে জানা যায়, মাত্র একদিনে অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ৫৮৪ জন নিহত হয়েছেন বর্বর ইসরায়েলিদের হাতে। টানা একমাস ধরে চালানো ইসরায়েলের হামলায় নারী-শিশুসহ ১০ হাজার ৩২৮ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৪২৩৭ জন শিশু, ২৭১৯ জন নারী এবং ৬৩১ জন বয়স্ক মানুষ রয়েছেন।
আগামীতে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা যদি বাড়তে থাকে, যুদ্ধ বন্ধ করার কোন ব্যবস্থা যদি না হয়, তাহলে অশান্ত মধ্যপ্রাচ্যে তথা সারা বিশ্বে কি দুর্যোগ ঘটবে তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি যুদ্ধ নিয়ে বিশ্ববাসীর দুশ্চিন্তার শেষ নেই।
লেখক: সিনিয়র কলামিস্ট