তফসিল ঘোষণা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ৭ জানুয়ারি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ নভেম্বর ২০২৩, ১১:০৪:২৮ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। ওইদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ করা হবে।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার জন্য জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এ তথ্য জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
ভাষণে সিইসি জানান, সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১-৪ ডিসেম্বর। আপিল ৬-১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচারণা চলবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি ২০২৪ সকাল ৮টা পর্যন্ত।
তফসিল ঘোষণাকালে সিইসি জানান, এবারের সংসদ নির্বাচনে ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে।
ভাষণে সিইসি সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। এ সময় তিনি সংবিধান ও আইনের আলোকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বলে ব্যক্ত করেন।
নির্বাচন সফল ও ফলপ্রসূ করতে সবার সহযোগিতা চেয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমাদের বিশ্বাস, স্ব স্ব অবস্থান থেকে সংশ্লিষ্ট সকলের দায়িত্বশীল আচরণ ও আবশ্যক ভূমিকা পালনের মধ্য দিয়ে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ হবে । দেশে ও বহির্বিশ্বে প্রশংসিত ও বিশ্বাসযোগ্য হবে। দেশের জনশাসনে জনগণের জনপ্রতিনিধিত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। গণতন্ত্র সুসংহত হবে।
এর আগে বিকেল ৫টায় ভোটগ্রহণের দিন ঠিক করতে বৈঠকে বসেছিল কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন।
বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমান এবং ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম উপস্থিত ছিলেন।
গত ৯ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর সিইসি প্রথমবারের মতো জানান, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ অথবা দ্বিতীয় সপ্তাহে ভোট হতে পারে।
এছাড়াও সূত্র জানায়, গত বছর দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই বর্তমান নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনসহ সার্বিক কর্মপরিকল্পনার খসড়া রোডম্যাপ তৈরি করে। সেখানে ২০২৪ সালের ৪ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের সম্ভাব্য দিন হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। ওই তারিখটি ধরেই ইসির পরবর্তী কর্মকা- এগিয়ে নেওয়া হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কমিশনাররাও ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট এবং নভেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল হবে বলে নানা সময় বক্তব্য দিয়েছেন। ৪ জানুয়ারি একটি বৃহৎ ছাত্রসংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী হওয়ায় ভোটের তারিখ এক দিন এগিয়ে ৩ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়। প্রায় দেড় বছরে পরিবর্তিত রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ভোটের সেই তারিখ থেকে সরে আসে কমিশন। এসব জল্পনা-কল্পনা শেষে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হলো।
ইতোমধ্যে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করেছে ইসি। এবার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন ভোটার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন এবং নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন। আর হিজড়া ভোটার ৮৫২। এর আগে একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় ভোটার ছিলো ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০ ভোটার। এরমধ্যে পুরুষ ৫ কোটি ২৫ লাখ ৪৭ হাজার ৩২৯ জন ও নারী ৫ কোটি ১৬ লাখ ৪৩ হাজার ১৫১ জন।
সারা দেশে ভোটকেন্দ্রের খসড়াও প্রস্তুত করা আছে। খসড়া অনুযায়ী এবার ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ১০৩টি। এতে ভোটকক্ষ রয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজারের মতো। প্রায় ৫ শতাংশের মতো ভোটকেন্দ্র এবার বাড়ছে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্র ছিল ৪০ হাজার ১৮৩টি। আর ভোট কক্ষ ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৩১৯টি। বিধান অনুযায়ী তফসিলের পর রিটার্নিং কর্মকর্তা ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করবেন। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, মার্কিং সিলসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের সিল ছোট-বড় চটের বস্তা ও নির্বাচনের অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের বেশির ভাগ ইতোমধ্যে জেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
এদিকে, এমন এক সময় সিইসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলেন, যখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন দুই শিবিরে বিভক্ত। সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সারা দেশে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার অবস্থানে অনড়।
সামনে কী হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে জনমনে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। দশ বছর আগের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের স্মৃতি ফিরে ফিরে আসছে।
২০১৪ সালে সেই নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে নির্বাচনে জিতে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।
এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও ভোটের ফলে তাদের ভরাডুবি হয়। সে সময় ‘আগের রাতে’ ভোট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ তুলে ফল প্রত্যাখ্যান করে দলটি। সংসদের মেয়াদের শেষ দিকে এসে তাদের নির্বাচিত এমপিরা সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন।
এবার ২০১৪ সালের মতো একই দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ প- হওয়ার পর থেকে রাজনীতিতে ফিরে এসেছে সহিংসতা। তাতে ডজনখানেক মানুষের প্রাণ গেছে। যানবাহনে অগ্নিংযোগ আর নাশকতার ঘটনায় জনমনে বাড়ছে শঙ্কা।
যুক্তরাষ্ট্র দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে নিঃশর্ত সংলাপের আহ্বান জানালেও বিবদমান পক্ষগুলো তাতে সাড়া দেয়নি। বিএনপি এই সংলাপে কোনো ফায়দা দেখছে না। আর আওয়ামী লীগ বলেছে, এখন আর সংলাপের ‘সময় নেই’।
দেশের এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বিরোধের মীমাংসা না করে তফসিল ঘোষণা না করার আহ্বান জানিয়েছিল কয়েকটি রাজনৈতিক দল। তবে নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট করে বলেছে, নির্বাচনের না আসার এখতিয়ার রাজনৈতিক দলের থাকলেও ইসির সামনে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের বিকল্প নেই।