সিলেট বিভাগের চার জেলায় হরতালের প্রথম দিন অতিবাহিত
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ নভেম্বর ২০২৩, ৮:৫১:৩৯ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: পাঁচ দফা অবরোধের পর ‘একতরফা’ তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে বিএনপির ডাকা হরতালের প্রথম দিন সিলেট বিভাগের চার জেলায় বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে। সিলেটে বিচ্ছিন্ন কিছু এলাকায় পিকেটিং ছাড়া সব জায়গায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালিত হলেও সুনামগঞ্জে পুলিশের সাথে হরতাল সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে হরতালে তেমন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে দূর পাল্লার কোন বাস ছেড়ে যায়নি। নগরীর বিপণী বিতানগুলো ছিল বন্ধ। যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে ছিল।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ‘একতরফা’ তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে সারা দেশে গতকাল রোববার সকাল থেকে বিএনপির ৪৮ ঘণ্টার হরতাল পালিত হচ্ছে। গতকাল রোববার সকাল ছয়টা থেকে আজ মঙ্গলবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত হরতাল চলার কথা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রথম দিনে সিলেটে যানবাহনের চলাচল অন্যান্য দিনের চেয়ে কিছুটা কম ছিল। গতকাল রোববার সকাল থেকে সিলেট নগরীর সড়কগুলোতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা, লেগুনা, মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত কার চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে এর পরিমাণ অবরোধের দিনগুলোর চেয়েও কম ছিল। সিলেট থেকে গতকাল রোববার দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি।
বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা রোববার সকালে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সুলতানপুর, সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের মোগলাবাজার, নগরীর চৌকিদেখী এলাকা, সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের টুকেরবাজার এলাকা ও বিমানবন্দর এলাকার সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ ও পিকেটিং করেছেন। মেডিকেল রোড এলাকায়ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে হরতাল সমর্থকরা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রোববার সকাল আটটার দিকে দক্ষিণ সুরমার সুলতানপুর এলাকায় সিলেট-সুলতানপুর সড়কে অবস্থান নিয়ে হেলমেট পরা কয়েকজন যুবক পিকেটিং করেন। এ সময় একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার কাচ ভাঙচুর করা হয়। সকাল সাতটার দিকে নগরীর চৌকিদেখী এলাকায় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন একদল যুবক। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসার খবরে ওই এলাকা ত্যাগ করেন তারা। এ ছাড়া, নগরীর ওসমানী মেডিকেল কলেজ রোড, বিমানবন্দর এলাকা এবং সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের টুকেরবাজার সড়কে বিক্ষোভ ও পিকেটিং করেছেন স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, গতকাল রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত সিলেট মহানগর এলাকায় কোনো সহিংসতার খবর পাননি তিনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানান তিনি।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘অবৈধভাবে তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে একদলীয় ভোটের যে ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেটি প্রত্যাহার করা না পর্যন্ত চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’
সুনামগঞ্জ : হরতাল সমর্থনে করা মিছিলকে কেন্দ্র করে সুনামগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পাঁচ পুলিশ সদস্য ও দুইজন সংবাদকর্মী আহত হন। গতকাল রোববার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শহরের পুরাতন বাস-স্টেশন এলাকার বিএনপির কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, সুনামগঞ্জের পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট পুরাতন বাস-স্টেশন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করতে চাইলে পুলিশ ধাওয়া করে। এতে শহরের দুই দিক থেকে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে বিএনপি নেতাকর্মীরা। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজন দাস বলেন, পুলিশ ও বিএনপির সংঘর্ষে পাঁচ পুলিশ সদস্য ও দুজন সংবাদকর্মী আহত হয়েছেন। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি ছুঁড়েছি। এতে বিএনপি নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়। তাদের আটক করতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
হবিগঞ্জ : হরতাল সমর্থনে হবিগঞ্জ শহরের বাইপাস সড়কে পিকেটিং করেছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এসময় দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাক ভাংচুর করেছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। গতকাল রোববার বিকেল ৫টার দিকে আধুনিক স্টেডিয়ামের সামনে এ ঘটনাটি ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হরতাল সমর্থনে মিছিল নিয়ে স্টেডিয়ামের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসের গ্লাস ভেঙে দিয়েছে হরতাল সমর্থকরা। এরপর কিছু সময় ওই এলাকায় পিকেটিং করে পুলিশ আসার আগেই সেখান থেকে সটকে পড়ে তারা।
অন্যদিকে, মৌলভীবাজারেও হরতালের সমর্থনে বিচ্ছিন্নভাবে পিকেটিং করেছে হরতাল সমর্থকরা। তবে কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।