সিলেটে সেমিনারে অধ্যাপক ড. এরশাদ আলী জেপি
নিউজিল্যান্ডে ডিগ্রি শেষে মেলে ওয়ার্ক ভিসা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২১ নভেম্বর ২০২৩, ৩:২১:৩৮ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার অবারিত সুযোগ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সফররত নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড ইন্সটিটিউট অব স্টাডিজের অধ্যাপক ড. এরশাদ আলী জেপি। সেখানে ডিগ্রি শেষে ওয়ার্ক ভিসাপ্রাপ্তির সুযোগ বেশী।
গতকাল সোমবার দুপুরে সিলেট প্রেসক্লাবের আমিনুর রশীদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘অপরচুনিটি এন্ড চ্যালেঞ্জেজ ফর বাংলাদেশি স্টুডেন্টস টু স্টাডি ইন নিউজিল্যান্ড এন্ড অস্ট্রেলিয়া’ শীর্ষক সেমিনারে মূল বক্তার বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ইমিগ্রেশন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান গোয়িং গ্লোবাল এ সেমিনারের আয়োজন করে।
বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের তিনটি বিষয় খেয়াল রাখা উচিত-এমন মন্তব্য করেন। বিষয়গুলো হচ্ছে- খরচ, ডিগ্রির সুযোগ ও জব অপরচুনিটি (কর্মসংস্থানের সুযোগ)। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আপনার ছেলেমেয়ে বিদেশে গেল, ডিগ্রি অর্জন করলো, কিন্তু সুখী হতে পারলো না। কারণ সে ভালোভাবে এই তিনটি বিষয় জেনে যায়নি।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় নিউজিল্যান্ডের সুবিধা হলো এখানে জনসংখ্যা মাত্র ৫০ লাখ-এ তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের চেয়ে দেশটির আয়তন ৩ গুণ বেশি। সেখানে আইন সবার জন্য সমান৷ সেদেশে ফাঁসি নেই। জেলখানাকে জেলখানা বলে না। সেখানে শাস্তি না দিয়ে সংশোধনের সুযোগ দেয়া হয়। শান্তি এবং সততায় গত ৩০ বছর ধরে নিউজিল্যান্ড বিশ্বে প্রথম। সেখানে মিথ্যা বললে কারাদন্ড হয়, মহিলাদের সম্মান না করলেও কারাদন্ড হয়। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একজন নাগরিকের দায়িত্ব সরকারের। চাকরি থাকলেও যে বেতন, না থাকলেও সে বেতন। সেখানে কাজ করলেই যথেষ্ট। মানুষ বেতন জিজ্ঞেস করবে না। যেখানে বাংলাদেশে অনার্স মাস্টার্স শেষ করে শিক্ষার্থীরা প্রেজেন্টেশন তৈরি করে, সেখানে নিউজিল্যান্ডের প্রাইমারীর শিক্ষার্থীরাই পারে প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে। নিউজিল্যান্ডে ৬০ শতাংশ মহিলা। মহিলাদের শাসন সুশাসন।
ছেলেমেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় পাঠানোর ক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ড উত্তম (বেস্ট) কান্ট্রি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে আগে টিউশন ফি দিতে হয় না। ভিসা এপ্রোভালের পরে দিতে হয়। শিক্ষার্থীরা যদি কোনো কারণে ফেরত আসতে চায়, তাহলে তাকে ভার্সিটি কোনো প্রশ্ন করবে না। আপনার টিউশন ফির বাকি টাকা তারা ফেরত দেয়।
তিনি বলেন, নিউজিল্যান্ডে অধ্যয়নরত বিদেশী শিক্ষার্থীদের অনেকে পড়াশোনা করে চাকরি করছে। পিআর (পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি) পাওয়ার জন্য নিউজিল্যান্ডের সুবিধা বেশি। ডিগ্রি শেষেই ওয়ার্ক ভিসা পাবেন। ভিসা পেলেই কাজ করতে পারবেন। সেখানে কোনো ঘুষ লাগে না।
একজন ছাত্র বিদেশে যাওয়ার আগে ৩ ফ্যাক্টর দেখা জরুরী বলে তার পরামর্শ। প্রথমত সাবজেক্ট/ডিগ্রির যোগ্যতা আছে কি না, ইংরেজি বিষয়ে দক্ষতা এবং আর্থিক সঙ্গতি।
প্রফেসর ড. এরশাদ আলী বলেন, এক সময় মানুষ জানতো বিলেতে যেতে হবে। কিন্তু, সেখানে কেন, কোন ডিগ্রি নিবে, সেটা জানতো না। বর্তমানেও এই ধারণাটা কিছু রয়ে গেছে। বাংলাদেশের বেশিরভাগেরই প্রথম চয়েজ ইউকে বা আমেরিকা। বিশ্বে আরও কত ভালো দেশ রয়েছে, সুবিধা বেশি, সেটা সম্পর্কে আমাদের ছেলেমেয়েরা জানে না। সবাই শুধু ইউকে-আমেরিকা নিয়েই ব্যস্ত। পরিবর্তিত বিশ্বে তুলনামূলক কম টিউশন ফি’তে তিনি বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের নিউজিল্যান্ডে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ নেবার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, আইএলটিএসে-ভালো স্কোর থাকলে সেদেশে ভিসাপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা থাকে সবচাইতে বেশী। বিদেশে অভিবাসনের ক্ষেত্রে নিজের উদ্যোগ সবচাইতে বড় বলেও তার মন্তব্য।
গোয়িং গ্লোবালের পরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলামের পরিচালনায় সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন-সিলেট প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, সাবেক সভাপতি ইকরামুল কবির, সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের আইনজীবী পার্থ সারথি রায় ও ব্যারিস্টার ফয়েজ উদ্দিন, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাসুদুর রহমান, লিডিং ইউনিভার্সিটির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. জিয়াউর রহমান, সিলেট বিভাগীয় ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল বাতিন ফয়সল, দৈনিক ভোরের কাগজের ব্যুরো প্রধান ফারুক আহমদ, শাবি শিক্ষার্থী ফজলুল আমিন জামিল ও জাকির আহমদ, এমসি কলেজের শিক্ষার্থী সাংবাদিক লবিব আহমদ প্রমুখ। সূচনা বক্তব্য রাখেন-হেক্সাসের সিইও ও ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টিচার্স এসোসিয়েশন-সিলেট-এর সেক্রেটারি সুলতান আহমদ।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-ইডেন গার্ডেন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফরিদ আহমদ, এক্সেল ইন্সটিটিউটের স্বত্বাধিকারী এডভোকেট খালেদ আহমদ, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক (পাবলিক রিলেশন্স) খসরু মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম, সাংবাদিক কবির আহমদ ও আনাস হাবিব কলিন্স, গোয়িং গ্লোবালের মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ সুপম মল্লিক, ফটো সাংবাদিক এইচএম শহিদুল ইসলাম, কোম্পানীগঞ্জ ছাত্র পরিষদের (কোছাপ) সভাপতি হেলাল আহমদ প্রমুখ। শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন কোছাপ সেক্রেটারি মারজান আহমদ।