সিলেটের ডাক-কে শাহীনূর পাশা চৌধুরী
নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দল বহিষ্কার করলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবো
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ৮:৩০:০৩ অপরাহ্ন
ফায়যুর রাহমান :
প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচিত জমিয়ত নেতা এডভোকেট মাওলানা শাহীনূর পাশা চৌধুরী বলেছেন, ‘আমি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ কারণে দল যদি আমাকে বহিষ্কার করে, তাহলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করবো।’
গতকাল শুক্রবার রাতে সিলেটের ডাকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে দল আমার সদস্যপদ স্থগিতের কথা জানিয়েছে। কিন্তু নিয়ম হলো অভিযুক্তকে চিঠি দিয়ে তার বক্তব্য শোনা। অথচ আমাকে কারণ দর্শানোর কোনো নোটিশ না দিয়ে গণমাধ্যমে পাঠানো বার্তায় আমার পদ স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনী ও গঠনতন্ত্রবিরোধী। দুই-একদিনের মধ্যে আমার সিদ্ধান্ত জাতিকে জানাবো। এখন নির্বাচনী এলাকায় আছি।’
তবে, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুসারেই শাহীনূর পাশা চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সিলেটের ডাককে তিনি বলেন, পাশার বিরুদ্ধে দলের শৃঙ্খলাবিরোধী অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গঠনতন্ত্রের ৫১(১) ধারা মোতাবেক দলের সভাপতি নির্বাহী ক্ষমতাবলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দলের আগামী কার্যনির্বাহী বৈঠকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।’
তিনি বলেন, ‘গঠনতন্ত্রের কোথাও উল্লেখ নেই পদপদবী স্থগিত করতে হলে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে হবে। বহিষ্কারের ক্ষেত্রে সেই প্রশ্ন আসতে পারে। কিন্তু তাকে তো বহিষ্কার করা হয়নি, পদ স্থগিত করা হয়েছে।’
গত বৃহস্পতিবার গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহের কথা জানান ইসলামপন্থী নয়টি দলের ১৪ নেতা। তাদের মধ্যে শাহীনূর পাশা চৌধুরীও ছিলেন। এর একদিন পর গতকাল শুক্রবার শাহীনূর পাশার দল জমিয়ত তার সদস্যপদ স্থগিতের ঘোষণা দেয়। দলটি নীতিগতভাবে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে।
এদিকে, শাহীনূর পাশা চৌধুরীর সিদ্ধান্তে তার দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। গতকাল থেকে তাকে নিয়ে দল ও দলের বাইরে তোলপাড় চলছে। শাহীনূর পাশা জমিয়তের কেন্দ্রীয় সহসভাপতির পাশাপাশি সুনামগঞ্জ জেলা জমিয়তের সভাপতি ছিলেন। গতকাল সুনামগঞ্জ জেলা জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক তৈয়বুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘শাহীনূর পাশার কর্মকান্ডে আমরা হতাশ। তাকে দেখে দলের কর্মীরা উৎসাহ পেতো। কিন্তু তিনি যা করেছেন, তা এককথায় দুঃখজনক। তিনি কারো সাথে পরামর্শ না করে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সকলেই হতাশ। দল তার বিরুদ্ধে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা যথাযথ মনে করি।’
শাহীনূর পাশা চৌধুরীর নির্বাচনী এলাকা শান্তিগঞ্জ উপজেলা জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাই বলেন, ‘পাশা ভাই তার নির্বাচনী এলাকার কোনো নেতাকর্মীর সাথে পরামর্শ না করে এককভাবে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের লজ্জায় ফেলে দিয়েছেন। দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে তার বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, সে ব্যাপারে আমরা দলের সাথেই থাকবো।’ জগন্নাথপুর উপজেলা জমিয়তের সভাপতি মসরুর আহমদ কাসেমী বলেন, ‘এখন মন্তব্য করবো না, কাল শনিবার সুনামগঞ্জে আমাদের মিটিং আছে। মিটিংয়ের পরে মন্তব্য করবো।’
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদের সঙ্গে ধানের শীষ প্রতীকে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে সারাদেশে পরিচিতি পেয়েছিলেন শাহীনূর পাশা চৌধুরী।
এরপর ২০০৫ সালে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে ৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হয়ে ধানের শীষ প্রতীকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এডভোকেট শাহীনূর পাশা চৌধুরী ১৯৯২ সাল থেকে জমিয়তের রাজনীতিতে যুক্ত। তিনি ছাত্রজমিয়তের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী, যুব জমিয়তের কেন্দ্রীয় সভাপতি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও সর্বশেষ দলটির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ছিলেন। ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি সুনামগঞ্জ-৩ আসন থেকে জমিয়তের খেজুর গাছ প্রতীকে নির্বাচন করেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট্রের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে পরাজিত হন।
এদিকে, শাহীনূর পাশা চৌধুরী গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকের এক পোস্টে লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নয়টি দলের সাক্ষাতে জমিয়তের নামটিও মিডিয়ায় এসেছে। তাতে আমার শুভাকাঙ্খী ও জমিয়তপ্রেমীরা মনে কষ্ট পেয়েছেন। আমার বক্তব্য বৃহস্পতিবার রাতেই পরিষ্কার করেছি। আমি জমিয়ত নেতা হিসেবে যাইনি। আমার মামলাগুলো উইথড্রো করার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে গিয়েছিলাম। এরপরেও যারা কষ্ট পেয়েছেন, আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।’