দিরাইয়ে শুকনো মৌসুমে কর্মব্যস্ততা বেড়েছে কৃষকদের
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০২:৪১ অপরাহ্ন

দিরাই (সুনামগঞ্জ) থেকে উবাইদুল হক : মাছ আর ধান, সুনামগঞ্জের প্রাণ। একথা গর্ব করেই বলেন হাওরাঞ্চলের মানুষ। হাওর হচ্ছে ঋতু বৈচিত্র্যের চারণভূমি, লীলা নিকেতন। বাংলার আদি ও আসল রূপ একমাত্র হাওরেই দেখা সম্ভব। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সম্পদে ভরপুর, লোক সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের লালন, পালন, ধারণ ও বাহন করছে হাওর এলাকা। এই হাওরাঞ্চল বছরের বারো মাসের পাঁচ মাস থাকে বর্ষার পানিতে ডুবে। এরই মধ্যে অথৈ পানিতে ডুবে থাকা হাওর শুকিয়ে এখন রূপ নিয়েছে চাষযোগ্য জমিতে। শুরু হয়েছে কৃষকদের কর্ম ব্যস্ততা।
যারা বর্ষায় নৌকা নিয়ে মাছ শিকার করতেন, তারাও আগামী ছয় মাস (অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন, চৈত্র ও বৈশাখ) জমিতে কৃষিকাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। এদের কেউ নিজের জমিতে ফসল ফলাবেন, আবার কেউ অন্যের জমিতে খাটবেন বর্গা।
দিরাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবছর উপজেলার ৩০ হাজার ১৯২ হেক্টর জমিতে বোরোধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ১৩০০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হবে। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বোরোধানের আবাদ করা হবে।
এবার যথাসময়ে হাওর থেকে পানি নামছে, সেই সাথে আবহাওয়া ভালো রয়েছে। তবে কৃষকরা একটু চিন্তিত ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিসহ কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধির কারণ নিয়ে।
গত কয়েকদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন হাওরে সরেজমিনে দেখা যায়, কেউ পাওয়ারটিলার দিয়ে জমি চাষ দিচ্ছেন, কেউ সেচ পানি দিচ্ছেন, কেউ জমির আইল বাঁধছেন, বীজতলা সমান করছেন, কেউ বীজ বপন করছেন। এভাবেই ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
দিরাই উপজেলায় ১৬টি হাওর রয়েছে। এ হাওরগুলো প্রতিবছর বর্ষায় (জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন) পানিতে ডুবে থাকে। এসময় জেলেরা নৌকায় জাল নিয়ে হাওরে মাছ শিকার করেন। পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বর্তমানে হাওরে মাছের আকাল চলছে। তবু কেউ কেউ এখনো সেখানে ছুটছেন মাছ ধরতে।
উপজেলার রফিনগর ইউনিয়নের কৃষক সুমন বর্মন জানান, আমরা বর্ষায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করি। শুকনো মৌসুমের সময় জমিতে হাল-চাষ করে সংসার চালাই।
করিমপুর ইউনিয়নের কৃষক বাবুল মিয়া, মাসুক মিয়া, রাসেল আহমদসহ কয়েকজন কৃষক জানান, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে বেড়েছে সার, ডিজেল ও কীটনাশকের দাম। পাশাপাশি দাম বেড়েছে কৃষি শ্রমিক, হালচাষ মজুরি। এতে গত বছরের তুলনায় ধান রোপণ, পরিচর্যা, সেচমূল্য, ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত বাড়তি টাকা গুণতে হবে কৃষকদের।
উপজেলার সরমঙ্গল, তাড়ল, জগদল ইউনিয়নসহ অন্যান্য এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বোরো ধানের বীজতলা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সহ¯্রাধিক কৃষক। জমির পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চলছে বীজ বপনের কাজ। তবে রাতদিন পরিশ্রমের পর ধানের ভালো ফলন ও ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে কৃষকরা শঙ্কায় রয়েছে। তারপরও সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে ন্যায্যমূল্য পাওয়ার প্রত্যাশা তাদের।
দিরাই উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মনোরঞ্জন অধিকারী জানান, উপজেলায় চলতি অর্থবছরে বোরো মৌসুমে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ৪ হাজার ৪৫০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও যে কোনো বিষয়ে কৃষকের সোনালী ফসল রক্ষায়, উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সার্বক্ষণিক কৃষকের পাশে থাকবে।