ঢাকাদক্ষিণ বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের সাফল্যের একশ’ ২৫ বছর
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৫৪:৫৩ অপরাহ্ন
মাহফুজ আহমদ চৌধুরী, গোলাপগঞ্জ থেকে: গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ সাফল্যের একশ’ ২৫ বছরে পদার্পণ করেছে। শিক্ষা প্রসারে এই বিদ্যালয় গৌরবের সাথে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। হাজার হাজার কৃতি শিক্ষার্থী এ প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা-দীক্ষা নিয়ে নিজেকে সমৃদ্ধির সোপানে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। গৌরব ও সাফল্যের ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা আয়োজন করেছেন পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের। আজ শনিবার লক্ষণাবন্দস্থ আঞ্চলিক স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বর্ণাঢ্য আয়োজনে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা আনন্দ উৎসবে মেতে উঠবেন।
জানা যায়, ১৮৯৮ সালে শিক্ষা বিস্তারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে এই অঞ্চলের মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এ অঞ্চলে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় দত্তরাইল মিডল ইংলিশ স্কুল নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বিদ্যালয়ের প্রথম প্রধান শিক্ষক রাধানাথ চৌধুরী ১৮৯৮ সালে স্কুল প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে টানা ১৯ বছর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৩৮ সালে নীরদ নাথ দাসের সভাপতিত্বে স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের এক সভায় মৌলভী মোজাহীদ আলী চৌধুরীসহ কয়েকজন শিক্ষানুরাগীর প্রস্তাবে ১৯৩৯ সালে বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণী খোলার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ১৯৪৪ সালে এপ্রিল মাসে ঢাকাদক্ষিণ এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বসে হাই ইংলিশ (ঐ.ঊ) স্কুলে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ডিপিআই আসাম কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলে তা গৃহীত হয়। ১৯৪৪ সালে সপ্তম শ্রেণী এবং ১৯৪৫, ৪৬ ও ৪৭ সালে পর্যায়ক্রমে অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির পাঠদান শুরু হয়। বিদ্যালয়টি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচ ই স্কুল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৬৫ সালে সিলেট জেলার প্রথম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে উন্নীত করে মানবিক, বিজ্ঞান ও কৃষি বিজ্ঞান শাখা চালু করা হয়। এসময় নামকরণ করা হয় ঢাকাদক্ষিণ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় দত্তরাইল। ১৯৯৫ সালে বিদ্যালয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান ও মানবিক শাখা চালু হলে নতুন নামকরণ হয় ঢাকাদক্ষিণ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ।
যোগ্য নেতৃত্ব ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় ১৯৯৪ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে সিলেট জেলার শ্রেষ্ঠ মাধ্যমিক বিদ্যালয় নির্বাচিত হয়। প্রাচীন এই বিদ্যাপীঠ থেকে পড়াশোনা করে শিক্ষার্থীরা আজ নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগসহ দেশ-বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় অনেকে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘপথ পরিক্রমায় হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিদ্যাপিঠ থেকে শিক্ষা নিয়ে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়ে সংসদ সদস্য, সচিব, সেনা কর্মকর্তা, পরমাণু বিজ্ঞানী, কারা উপ-মহাপরিদর্শক, সাংবাদিক, লেখক, চিকিৎসক, ডাক বিভাগের মহাপরিচালক, শিক্ষকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বর্তমানে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কৃতিত্বের সাথে ভালো ফলাফল অর্জন করে দেশের ভালো বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিদেশে বিভিন্ন ভালো প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত রয়েছেন।
বিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থা: সবুজের প্রকৃতি ঘেরা বিদ্যালয়টি ৪ দশমিক ৮২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে প্রায় দেড় একরের বেশি জায়গা জুড়ে একটি বিশাল খেলার মাঠ রয়েছে। খেলাধুলাসহ বিভিন্ন ইভেন্ট আয়োজন করা হয় এখানে। এছাড়াও এ মাঠ থেকে খেলে জাতীয় ফুটবল লীগে বিভিন্ন ক্লাবে অনেক খেলোয়াড় খেলছেন। বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থীর শ্রেণীর পাঠ্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন ৪০ জন শিক্ষক।
মহান মুক্তিযুদ্ধ: মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এই বিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। এই প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষার্থীরা প্রবাসে থেকেও মহান মুক্তিযুদ্ধে তহবিল সংগ্রহ করে সহায়তা করেছেন। এছাড়াও ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪ নম্বর সেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধারা এখানে অবস্থান করেন এবং স্কুল মাঠে লাল সবুজের পতাকা উড়িয়েছেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বাংলা ভাষার দাবিতে মিছিল বের করেছিলেন।
১২৫ বছর পূর্তি উৎসবের প্রস্তুতি: গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের অধিকারী বিদ্যালয়ের পূর্তি উপলক্ষে আজ ২ ডিসেম্বর বিদ্যালয় অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের উদ্যোগে নানা প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা দেশ ও প্রবাস থেকে অনলাইনে ফরম সংগ্রহ করে সদস্য হয়েছেন। এদিকে, বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে বাঁধ ভাঙ্গা খুশি আর অনাবিল উল্লাস। অনেক প্রাক্তন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, পূর্তি উপলক্ষে তারা ভিন্ন পোশাকে সাজবেন, অনেকে আবার বিভিন্ন রকম পরিকল্পনা নিয়েছেন নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে। এ যেন তাদের দীর্ঘদিনের অপেক্ষার এক অনাবিল আনন্দের মেলবন্ধন হতে চলেছে। এ সবকিছুই ফুটে উঠেছে তাদের চোখে মুখের ভাষা থেকে।
প্রাক্তন শিক্ষার্থী নবীন, প্রবীণ সবারই প্রত্যাশা যেন শিক্ষার আলোকের বাহন বিদ্যালয় শিক্ষা এবং মানবতার বার্তাও দূরদূরান্তে যেন পৌঁছে দেওয়া অব্যাহত থাকে। শত শত বছর সমৃদ্ধির সাথে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে টিকে থাক প্রাণের প্রতিষ্ঠান ঢাকাদক্ষিণ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের এমন আশা প্রত্যাশা নবীন-প্রবীণ, শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের।
অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সদস্য সচিব শিক্ষক কাজল কান্তি দাস অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, প্রকৃতির মনোরম পরিবেশে লক্ষণাবন্দস্থ আঞ্চলিক স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের উদ্যোগে ১২৫ বছর পূর্তিকে স্বাগত জানিয়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান মিলনমেলায় পরিণত হবে এবং আনন্দ উচ্ছ্বাস-উল্লাসে উদযাপিত হবে।