চিরনিদ্রায় শায়িত জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার আব্দুল মালিক
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ৪:৫৩:২১ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সিলেটের কৃতি সন্তান, বাংলাদেশে হৃদরোগ চিকিৎসার পথিকৃৎ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা প্রথিতযশা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) ডা. আব্দুল মালিক। গতকাল বুধবার বাদ আসর তাঁর গ্রামের বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কুচাই পশ্চিমপাড়া (নেয়াগাঁও) গ্রামে সৈয়দা নুরুন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সর্বশেষ নামাজে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
জানাজায় শিক্ষক, চিকিৎসক, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ সিলেট সর্বস্তরের বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এরপূর্বে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় তার মরদেহ সিলেটের হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে পৌঁছে। সেখানে চিকিৎসক, রাজনীতিবিদ, প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সর্বস্তরের মানুষ তাকে শেষবারের মতো দেখার সুযোগ পায়। পরে দুপুর ১২টায় হাসপাতাল প্রাঙ্গণে মরহুমের চতুর্থ নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীসহ নগরীর বিশিষ্টজনেরা অংশ নেন। পরে তার লাশ তার গ্রামে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে গত মঙ্গলবার ঢাকায় তাঁর তিনটি নামাজে জানাজা অনু্িষ্ঠত হয়।
গত মঙ্গলবার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে বার্ধক্যজনিত কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। প্রখর মেধাশক্তির অধিকারী জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) ডা. আব্দুল মালিক ১৯২৯ সালের ১ ডিসেম্বর সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কুচাই ইউনিয়নের পশ্চিমভাগ (নয়াগাঁও) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবনের প্রতিটি পরীক্ষায় তিনি কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। ১৯৪৯ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় পুরো দেশের মধ্যে ১১তম স্থান অর্জন করেন তিনি। ১৯৫৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৫৫ সালে পাকিস্তান আর্মি মেডিকেল কোরে যোগ দেন। পরে বিলেতে হৃদরোগ চিকিৎসায় উচ্চতর ডিগ্রি ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ১৯৭০ সালে মিলিটারি হসপিটাল ও আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ রাওয়ালপিন্ডিতে শিক্ষক ও কার্ডিওলজিস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সিলেটের কৃতিসন্তান মরহুম ডা. আব্দুল মালিক বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে হৃদরোগ চিকিৎসার জনক হিসেবে পরিগণিত হন। তাঁর নেতৃত্বে পাকিস্তানে ১৯৭০ সালে ও বাংলাদেশে ১৯৮২ সালে প্রথম ওপেন হার্ট সার্জারি চিকিৎসা সম্পন্ন হয়। তাঁর প্রচেষ্টায় ১৯৭৮ সালে ঢাকায় জাতীয় হৃদরোগ ইনিস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি ১৯৭৮ সালে চিকিৎসকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষদের নিয়ে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৪ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার পান এবং ২০০৬ সালে জাতীয় অধ্যাপক পদে ভূষিত হন। ২০০১ সালে তিনি তত্ত্বাধায়ক সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন।
শোক প্রকাশ অব্যাহত ॥ সিলেটের এ ক্ষণজন্মা কৃতী মানুষের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ অব্যাহত রয়েছে। শোকপ্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের (বি.এম.এ) মহাসচিব ও আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ও সর্বইউরোপীয় বঙ্গবন্ধু পরিষদের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মনির হোসাইন, বিশিষ্ট লেখক-কলামিস্ট হোসেন তৌফিক চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী, ইবনে সিনা হাসপাতাল সিলেট, দৈনিক ইত্তেফাকের ব্যুরো প্রধান হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী প্রমুখ। পৃথক শোকবার্তায় তারা মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।