জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজে স্মরণসভায় বক্তারা
‘সিলেটের মানুষ বেগম রাবেয়ার অবদান যুগ যুগ মনে রাখবে’
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১:১১:৫৩ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী ছিলেন নিজ গুণে গুণান্বিত একজন মানুষ। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য তথা মানব উন্নয়নে তাঁর রয়েছে অনবদ্য অবদান। সিলেট অঞ্চলের মানুষ তার এই অবদান যুগের পর যুগ মনে রাখবে।
গতকাল বুধবার সকালে সিলেটের প্রথম বেসরকারি মেডিকেল কলেজ জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আয়োজিত স্মরণসভায় বক্তারা এসব মন্তব্য করেন। জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মহীয়সী নারী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর ১৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কলেজের লেকচার গ্যালারিতে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এর আগে গত মঙ্গলবার মেডিকেল কলেজের পক্ষ থেকে কর্মকর্তারা মরহুমার কবর জিয়ারত করেন। দিনভর বেগম রাবেয়া বানু জেনারেল হাসপাতাল ও জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গরীব রোগীদের ফ্রি চিকিৎসা সেবা দেয়া হয় এবং মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের উন্নত খাবার পরিবেশন করা হয়।
রাবেয়ার স্মৃতি আমাকে মানবিক কাজে এগিয়ে যাওয়ার সাহস যোগায় ॥ দানবীর ড. রাগীব আলী
আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ও গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান দানবীর ড. রাগীব আলী প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, শুধু বেগম রাবেয়া নয়, সমাজের যে কোন গুণী মানুষকে স্মরণ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। কারণ বর্তমান যুগে নৈতিক গুণাবলী সম্পন্ন মানুষের অভাব। তিনি বলেন, রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনভুক্ত যেসব শিক্ষা ও স্বাস্থ্যধর্মী যত প্রতিষ্ঠান মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, এর প্রায় সবকটা প্রতিষ্ঠানে জড়িয়ে আছে রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর স্মৃতি। এই স্মৃতি আমাকে অনুপ্রেরণা দেয়। আরো মানবিক কাজে এগিয়ে যাওয়ার সাহস যোগায়। তাকে একদিনের জন্যও ভুলতে পারি না। তাঁর এবং আমার মানবিক চিন্তা চেতনার সম্মিলিত প্রয়াস হচ্ছে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। যেখানে দক্ষ চিকিৎসক তৈরী থেকে নিয়ে মানবিক স্বাস্থ্য সেবা বিলিয়ে দেয়া হয়। দানবীর ড. রাগীব আলী বলেন, এই সেবা বিনিময়ের জন্য মৃত্যুর পর আল্লাহ যেন এর এক মুঠো শান্তি দান করেন।
জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ আবেদ হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় দানবীর ড. রাগীব আলী আরো বলেন, এই মেডিকেল কলেজের প্রতিটি ধূলিকণায় মিশে আছে বেগম রাবেয়ার স্মৃতি। একটি মার্জিত রুচিবোধের জীবন বলতে যা বোঝায়-সবছিলো তার মধ্যে। মানবসেবার ব্রত নিয়ে পথ চলতো সে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে দানবীর ড. রাগীব আলী বলেন, পড়াশোনার মান বৃদ্ধি পেলে, কিংবা আরো উন্নতির দিকে নিয়ে যাওয়া যাবে-বেগম রাবেয়ার আত্মা ততটা শান্তি পাবে।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেটের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী আজিজুল মওলা, লিডিং ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার, সাবেক অতিরিক্ত সচিব বনমালী ভৌমিক, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ. কে. এম. দাউদ, হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মোঃ তারেক আজাদ, রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের ট্রেজারার ও জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য আব্দুল হাই। বক্তব্য রাখেন রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের সচিব ইঞ্জিনিয়ার মো: লুৎফুর রহমান, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের ফিজিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা: রেজিনা মোস্তারিন, বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ আয়েশা বেগম,
জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ সাদিয়া মালিক চৌধুরী, ফিজিক্যাল মেডিসিনের সহকারী রেজিস্ট্রার ডাঃ ফজলুল হক সোহেল, শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন ২৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুর রাজ্জাক আল মাসুম ও নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ১৪ তম ব্যাচের মফতাসিন আফরিন মীম। পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন-২৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহবুবে এলাহী। সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন লেকচারার রাজিব আহসান সুমন ও ২৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নিশাত আনজুম। মোনাজাত পরিচালনা করেন জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ মসজিদের পেশ ইমাম এ বিএম লুৎফুর রহমান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে লিডিং ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী আজিজুল মওলা বলেন, নিজ চোখে না দেখলেও যার রেখে যাওয়া স্মৃতি নিজেকে পরিচয় করিয়ে দেয়, তাঁর নাম বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী। সমাজের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে আছে এই মহীয়সী নারীর অবদান। যার অনন্য প্রমাণ জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও লিডিং ইউনিভার্সিটি। তিনি মহীয়সী নারী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর রুহের মাগফেরাত কামনা করেন।
লিডিং ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার বনমালী ভৌমিক বলেন, সুযোগ্য উত্তরসুরী রেখে গিয়েছিলেন বলেই বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাকে স্মরণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বঙ্গ দানবীর ড. রাগীব আলীর অনুপ্রেরণাধাত্রী ছিলেন বেগম রাবেয়া। তার আত্মার শান্তি কামনা করছি। বনমালী ভৌমিক আরো বলেন, দানবীর ড. রাগীব আলী আমাদের সম্পদ। তার পরিবার চিকিৎসকসহ জাতিকে যে শিক্ষিত প্রজন্ম উপহার দিয়েছেন এই প্রজন্ম দানবীর ড. রাগীব আলী ও তার পরিবারকে কখনো ভুলবে না। দেশ বিদেশে এর সুনাম ছড়িয়ে পড়বে।
জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ. কে. এম. দাউদ বলেন, বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী তার ধ্যানে জ্ঞানে এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালকে লালন করতেন। মানবসেবায় ব্রতী এই মহীয়সী নারীর মতো ক’জন এমন চিন্তা লালন করতে পারেন। যতদিন এই মেডিকেল কলেজ থাকবে; ততদিন বেগম রাবেয়া খাতুন বেঁচে থাকবেন অমর হয়ে। তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মোঃ তারেক আজাদ বলেন, বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী মায়ের মতো ভালোবাসতেন এই মেডিকেল কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী তথা রোগীদের। এখানকার প্রতিটি ধুলিকণায় মিশে আছে তাঁর অমলিন স্মৃতি। রোগীদের ভালোবাসলেই তাকে সম্মান জানানো হবে। আমাদের সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের ট্রেজারার ও জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য মরহুম বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর একমাত্র তনয় আব্দুল হাই বলেন, আমার মা ছিলেন আমার পৃথিবী। বাগানের শ্রমিকরা মায়ের ভালোবাসায় ছিলো মুগ্ধ। কখনো নিজেকে মালিক ভাবেননি। যার জন্য মায়ের মৃত্যুর পর আজ অবধি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজন তাকে স্মরণ করছে। তিনি তার মায়ের জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেন।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যক্ষ ডাঃ আবেদ হোসেন বলেন, মানুষ চিরদিন বাঁচে না, কিন্তু তার কর্ম তাকে চিরজীবন বাঁচিয়ে রাখে মানুষের মনে। তেমনই একজন মহীয়সী নারী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী। এই মেডিকেল কলেজ যত দিন থাকবে; ততদিন উচ্চারিত হবে বেগম রাবেয়ার নাম। তিনি বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর রুহের মাগফেরাত কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী স্মৃতি স্মারক ‘মানবসেবায় অনন্য প্রাণ এক নারী’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়।