সিলেটের ১৯ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১১৬ প্রার্থী ॥ শেষদিনে ১৮ জনের প্রত্যাহার
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ৪:৪৭:৩৩ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: সিলেট বিভাগের ১৯ আসনে শেষ পর্যন্ত মাঠে টিকে থাকলেন ১শ’ ১৬ প্রার্থী। গতকাল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে ১৮ জন প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিলে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে। প্রত্যাহার করা গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে সিলেট ১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, হবিগঞ্জ ১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা: মুশফিক হোসেন চৌধুরী উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে, সিলেটে জাতীয় পার্টির সাথে আসন সমঝোতার কারণে দুটি আসনে ছাড় দেয়ার গুঞ্জন থাকলেও শেষ পর্যন্ত ৬ টিতেই আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী বহাল রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সিলেটের ৬ আসনে ৩৪, হবিগঞ্জের ৪ আসনে ৩১, মৌলভীবাজারের ৪ আসনে ২২ জন ও সুনামগঞ্জের ৫ আসনে ২৯ জন প্রার্থী ভোটযুদ্ধে লড়বেন। গতকাল শেষ দিনে সিলেটে ৬, সুনামগঞ্জে ৪, মৌলভীবাজারে ৩ ও হবিগঞ্জে ৫ জন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন।
সিলেটের জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সিলেটের ৬ টি আসনে মোট মনোনয়ন জমা প্রদান করেন ৪৭ জন প্রার্থী। যার মধ্যে যাচাই বাছাইয়ে বিভিন্ন কারণে ১৪ জনের প্রার্থীতা বাতিল করা হয়েছে। বাকি ৩৩ জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা। তবে এরপর নির্বাচন কমিশনের আপিলে মনোনয়ন ফিরে পান ৭ জন। এতে মোট প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০ জনে। এরপর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন গতকাল রোববার ৬ প্রার্থী তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন। এতে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভোটের মাঠে এখনো টিকে আছেন ৩৪ জন।
প্রতীক বরাদ্দের আগ পর্যন্ত সিলেটের চূড়ান্ত প্রার্থীরা হলেন- সিলেট-১ আসনের ৫ জন, সিলেট-২ আসনের ৭ জন, সিলেট-৩ আসনের ৬ জন, সিলেট ৪ আসনের ৩ জন, সিলেট-৫ আসনের ৭জন এবং সিলেট-৬ আসনের ৬ জন। এর মধ্যে সিলেট-১ এ রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, ইসলামী ঐক্যজোটের ফয়জুল হক, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোহাম্মদ সোহেল আহমদ চৌধুরী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) এর ইউসুফ আহমদ, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রার্থী আব্দুল বাছিত।
সিলেট-২ এ গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও জেলার সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও দলীয় প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. মনোয়ার হোসাইন ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. জহির। এই আসনে তৃণমূল বিএনপির দুজন প্রার্থী রয়েছেন মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান খান ও মোহাম্মদ আব্দুর রব। তবে একই দলের দুই প্রার্থী নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
সিলেট-৩ এর ৬ জন প্রার্থীরা হলেন- সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও দলীয় প্রার্থী এবং বর্তমান সংসদ সদস্য হাবিবুবর রহামন, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) এর মহাসচিব মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী, জাতীয় পার্টির সভাপতি ম-লির সদস্য মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আনোয়ার হোসেন আফরোজ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের শেখ জাহেদুর রহমান (মাসুম) ও ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী মো. মইনুল ইসলাম।
সিলেট-৪ এর প্রার্থী ৩ জন। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, তৃণমূল বিএনপির মো. আবুল হোসেন, ইসলামী ঐক্যজোটের মো. নাজিম উদ্দিন।
সিলেট-৫ আসনের প্রার্থী ৭ জন। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দলের প্রার্থী মাসুক উদ্দিন আহমদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও যুবলীগের সভাপতিম-লির সদস্য আহমদ আল কবির, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের প্রার্থী মো. খায়রুল ইসলাম, তৃণমূল বিএনপির কুতুব উদ্দীন আহমদ শিকদার, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. বদরুল আলম ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাব্বীর আহমদ।
সিলেট-৬ আসনে প্রার্থী ৬ জন। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও দলের প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ, তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, স্বতন্ত্র প্রার্থী কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সরওয়ার হোসেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা সেলিম উদ্দিন ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রার্থী আতাউর রহমান।
মৌলভীবাজার থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজারের ৪টি সংসদীয় আসনে লড়ছেন ২২ প্রার্থী। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন রোববার ৩জন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন এবং জাতীয় পার্টির ২জনের মনোনয়ন বাতিল করেছেন জেলা রিটার্নিং অফিসার। ৪টি আসনের মধ্যে ১, ৩ ও ৪ আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় নৌকার প্রার্থীর বিজয় অনেকটাই নিশ্চিত। তবে কঠিন ঘাম ঝরাতে হবে মৌলভীবাজার-২ আসনে নৌকার মনোনীত প্রার্থী আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী’ নাদেলকে। তার সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি এ কে এম শফি আহমদ সলমান। সাবেক এমপি এম এম শাহীনও লড়ছেন এই আসনে।
মনোনয়ন প্রত্যাহারকারীরা হলেন, মৌলভীবাজার-২ আসনে মো: বদরুল ইসলাম (জাসদ), মৌলভীবাজার-৪ আসনে মো: নজরুল ইসলাম (স্বতন্ত্র) ও জাতীয় পার্টির মো: মস্তান মিয়া। এদিকে, দলীয় চূড়ান্ত মনোনয়ন না পাওয়ায় জাতীয় পার্টির মৌলভীবাজার-২ আসনের মো: মাহবুবুল আলম ও মৌলভীবাজার-৩ আসনের রুহুল আমীন এর প্রার্থীতা বাতিল করা হয়েছে।
চূড়ান্ত মনোনয়ন প্রাপ্ত প্রার্থীরা হলেন- মৌলভীবাজার-১ আসনে বর্তমান এমপি মো. শাহাবুদ্দিন (নৌকা), জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে আহমেদ রিয়াজ উদ্দিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ময়নুল ইসলাম এবং তৃণমূল বিএনপির মো: আনোয়ার হোসেন (সোনালী আঁশ)।
মৌলভীবাজার-২ আসনে নৌকা প্রতীকে আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী, স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এ কে এম সফি আহমদ সলমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মো. আব্দুল মতিন, তৃণমূল বিএনপি থেকে সোনালী আঁশ প্রতীকে এম এম শাহীন, ইসলামী ঐক্যজোট থেকে মাওলানা আছলাম হোসাইন রাহমানী, বিকল্পধারার মো. কামরুজ্জামান সিমু এবং ইসলামি ফ্রন্টের এনামুল হক মাহতাব ও জাতীয় পার্টি’র লাঙ্গল প্রতীকে আব্দুল মালিক।
মৌলভীবাজার-৩ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান, জাসদের মশাল প্রতীকে আব্দুল মোছাব্বির, ওয়ার্কার্স পার্টির তাপস কুমার ঘোষ, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে মো. আলতাফুর রহমান, সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের ফাহাদ আলম, ইসলামী ফ্রন্টের আব্দুর রউফ ও এনপিপির আবু বক্কর।
মৌলভীবাজার-৪ আসনে বর্তমান সাংসদ সাবেক হুইপ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ ড. আব্দুস শহীদ (নৌকা), ইসলামি ঐক্যফ্রন্টের আ. মুহিদ হাসানী এবং ইসলামিক ঐক্যজোট মো: আনোয়ার হোসাইন।
সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জের পাঁচটি সংসদীয় আসনে মনোনয়ন যাচাই বাছাইয়ের পর ৩৩ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। তবে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন রোববার ৪ প্রার্থী তাদের মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।
প্রার্থীতা প্রত্যাহারকারীরা হলেন- সুনামগঞ্জ-১ আসনে বিকল্পধারার প্রার্থী মো.রফিকুল ইসলাম চৌধুরী। সুনামগঞ্জ-৩ আসনে জাকের পার্টির প্রার্থী মো.নজরুল ইসলাম। সুনামগঞ্জ-৪ আসনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের প্রার্থী আবু তাহের মো.রুহুল আমিন এবং সুনামগঞ্জ-৫ আসনে জাকের পার্টির প্রার্থী শেখ ইয়াকুব আলী। এর ফলে ভোটের মাঠে সুনামগঞ্জের ৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ২৯ জন প্রার্থী। আগামীকাল প্রতীক বরাদ্দ শেষে শুরু হবে মূল লড়াই।
জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মো.রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানান, চার জন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। আজ সোমবার আমাদের সম্মেলন কক্ষে প্রতিক বরাদ্দ দেয়া হবে প্রার্থীদের।
হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি জানান, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে হবিগঞ্জ থেকে এক নৌকার প্রার্থীসহ ৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। তন্মধ্যে হবিগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ১৪ দলের শরিক হিসেবে আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সরে গেলেন। গতকাল রোববার বিকেলে ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। এর আগে তিনি এই আসনে নির্বাচনে অংশ নিতে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। ওই আসনে এখন জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি মুনিম চৌধুরী বাবু মহাজোটের প্রার্থী হিসাবে লড়াই করবেন। তবে সেখানে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন সাবেক সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি অ্যাডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী।
জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা দেবী চন্দ জানান, ডা. মুশফিক হোসেনসহ পাঁচজন মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। অন্যরা হলেন- হবিগঞ্জ-১ আসনে ইয়াসমিন আক্তার মুন্নি (জাকের পার্টি), মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম চৌধুরী (ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ), হবিগঞ্জ-২ আসনে মো. ছাদিকুর মিয়া তালুকদার (তৃণমুল বিএনপি) ও হবিগঞ্জ-৪ আসনে সৈয়দ আবুল খায়ের (জাকের পার্টি)।