রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজে আলোচনাসভায় মেয়র আনোয়ারুজ্জামান
‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্মার্ট দেশ গড়তে সকলের অংশগ্রহণ প্রয়োজন’
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ৪:৫৭:১০ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি পাকিস্তানী হানাদারদের পরাজিত করে ছিনিয়ে আনে লাল সবুজের পতাকা, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এই লক্ষ্য অর্জনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকলের অংশগ্রহণ প্রয়োজন।’
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট, টানেল, মেট্রোরেল যুগে প্রবেশ করেছে। যতদিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত থাকবে; ততদিন বাংলাদেশ পথভ্রষ্ট হবে না। কেউ আমাদের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আপামর জনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল: দানবীর ড. রাগীব আলী
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, দেশবরেণ্য সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী দানবীর ড. রাগীব আলী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশের আপামর জনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু শোষণ ও দারিদ্র্যমুক্ত যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন; তা অর্জনে নিজ অবস্থান থেকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
অসংখ্য স্কুল কলেজ, মসজিদ মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা, মানবকল্যাণে নিবেদিত রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান দানবীর ড. রাগীব আলী আরো বলেন, ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির গৌরবের দিন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পরাজিত পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের এই দিনে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করেছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মহান আত্মত্যাগের আদর্শ অনুসরণ করে সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে সবাইকে কাজ করার আহবান জানান তিনি।
জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আবেদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের শুরুতে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আরমান আহমদ শিপলুর পরিচালনায় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন-জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. একেএম দাউদ, হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তারেক আজাদ।
দানবীর ড. রাগীব আলীর প্রতি ‘আনকন্ডিশনাল রেসপেক্ট’ প্রকাশ করে প্রধান অতিথি আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, পৃথিবীতে অনেক লোক প্রচুর টাকা আয় করেছেন, বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। কিন্তু মানুষের কল্যাণে ব্যয় করেননি। কিন্তু দানবীর ড. রাগীব আলী তাঁর অর্থ-সম্পদ দিয়ে সমাজের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করেছেন। তিনি মানুষের জন্য অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন।
প্রধান অতিথি বলেন, মানুষ তার কর্মের মাধ্যমে বেঁচে থাকে। দানবীর ড. রাগীব আলী তাঁর এসব জনহিতকর কাজের জন্য আজীবন মানুষের মনে বেঁচে থাকবেন। প্রধান অতিথি মহান মুক্তিযুদ্ধে চিকিৎসকদের অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, বায়ান্ন থেকে একাত্তর পর্যন্ত সকল আন্দোলন সংগ্রামে চিকিৎসক ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্রদের অংশগ্রহণ ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা প্রদানের মহান দায়িত্ব পালন করেন আমাদের চিকিৎসকবৃন্দ। চিকিৎসকদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের চিকিৎসকরা করোনা মহামারির সময়ে সকল ভয়ভীতির উর্ধ্বে উঠে রোগীদের সেবা দিয়েছেন। যেখানে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশেই সংকটের সৃষ্টি হয়েছিল। শেখ হাসিনা সরকারের করোনা জয়ে অন্যতম ভূমিকা পালন করেছেন দেশের চিকিৎসকরা।
প্রধান অতিথিকে প্রধানমন্ত্রীর কাছের মানুষ উল্লেখ করলে তিনি বলেন, দেশের ১৮ কোটি মানুষ প্রধানমন্ত্রীর কাছের মানুষ। প্রধানমন্ত্রী দেশের মাটি ও মানুষকে ভালোবাসেন। তাদের জন্য কাজ করতে সকলকে নির্দেশ দিয়েছেন। তাকেও সিলেটবাসীর মেয়র নয়, সেবক হয়ে কাজ করতে পাঠিয়েছেন। তিনি নগরীর উন্নয়নে সকলের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, সিলেট নগরীর যানজট, ফুটপাতসহ যেসব সমস্যা আছে;সেগুলো সমাধান করতে পরিকল্পনা নিয়েছেন। শিগগিরই কাজ শুরু হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ক্লিন-স্মার্ট সিলেট নগরী বিনির্মাণে সমস্ত শক্তি নিয়োগ করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। তিনি চিকিৎসকদের সমাজের ‘অগ্রসর শ্রেণী’ উল্লেখ করে সুন্দর সিলেট শহর উপহার দিতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আবেদ হোসেন বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি পরাধীনতার শেকল ভেঙ্গে প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করে। পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্ন করে জাতির ভাগ্যাকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার নতুন সূর্য। স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণে দলমতনির্বিশেষ সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করার আহবান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. একেএম দাউদ বলেন, পাকিস্তানীরা বাংলাদেশকে নিশ্চিন্ন করে দিতে চেয়েছিল। তারা নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছে, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছিলাম এবং পাকিস্তানীরাই বরং নিচ্ছিন্ন হয়েছে।
হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তারেক আজাদ বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি শোষণমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নে যে যেখানে যে অবস্থায় আছেন; সেখান থেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিব।
সভায় যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক কাওসার আহমদ চৌধুরী, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দ, শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী দেওয়ান নবীবুর রহমান।