ড. মোমেন : দ্য মিরর অব এ প্যাট্রিয়ট
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ২:৩৩:৪৪ অপরাহ্ন

মো. ছানাওর :
ডিসেম্বর মাস। বিজয়ের এ শুভক্ষণ অর্জনে খাঁটি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ ৩০ লাখ মানুষের নিঃস্বার্থ আত্মদান আর দুই লাখ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে সৃষ্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আজীবন লালিত স্বপ্ন-সাধের বাংলাদেশ আজ পৃথিবীর মানচিত্রে অবিস্মরণীয় চমক। কোন দৃশ্য-অদৃশ্য হাতের ছোয়ায় দেশটির ঈর্ষণীয় এ উন্নয়ন, উপরন্তু ভৌগলিক অবস্থান বিশ্ব মোড়লদের ভাবনায় গোল্ডেন এ প্লাস সংযোজন করেছে।
ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্ব প্রজ্ঞাবান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ যাদের ভাবনা, পরিকল্পনা, পরামর্শ, কর্ম এবং নানান ইতিবাচক কাহিনী বিন্যাস মূলে অগাদ দেশপ্রেমিকের অবদানের ফসল, তাদেরই অংশীদারিত্বের একজন ড. মোমেন।
ক্ষণজন্মা ড. একে আব্দুল মোমেনের জন্মস্থান বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী খ্যাত সিলেটে। পূণ্যভূমি সিলেটের সন্তান মোমেন প্রয়াত সাবেক সফল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের অনুজ পেশায় ছিলেন একজন শিক্ষক এবং কূটনীতিক। কূটনীতিক বিদ্যাসহ নানান বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রীদারী ড. মোমেন যুক্তরাষ্ট্রস্থ বস্টনের অন্যতম বিদ্যাপীঠ নর্থ ইষ্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পি.এইচ.ডি ডিগ্রী আর্জন করেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত জাতির গর্বিত সন্তান ড. মোমেন জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ৩৭ বছর চাকুরীতে নিয়োজিত ছিলেন।
জাতিসংঘে চাকুরীকালীন সময়ে তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নিউইয়র্কে বাংলাদেশ সরকারের জন্য ৫.৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যে একটি ‘স্থায়ী মিশন’ এবং রাষ্ট্রদূতের জন্য ৩.৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যে একটি ‘স্থায়ী আবাস’ ক্রয় করা সম্ভব হয়। যার ফলে প্রদেয় ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে সরকারের প্রায় ৪৫ হাজার ডলার সাশ্রয় হচ্ছে। ড. মোমেন তার প্রখর মেধা, প্রজ্ঞা, কর্মদক্ষতা, কুটনৈতিক বিচক্ষণতা দিয়ে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে এক উজ্জ্বল আস্থা ও বিশ্বাসের স্থানে আসীন করতে পেরেছেন, যার প্রমাণ ২০২০ সনের ভয়ংকর, আতিমারি, কোভিড-১৯ (করোনা)।
সফল কুটনৈতিক ড. মোমেন ২০১৫ সালের নভেম্বরে চাকুরী জীবেনর ইতি টেনে জন্মস্থান পূণ্যভূমি-সিলেটে প্রত্যাবর্তন করেন। সৃজনশীল ভাবনার আঁধার, কালজয়ী ব্যক্তিত্ব ড. মোমেন বাংলাদেশ তথা সিলেটের অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে পরোক্ষভাবে ছায়াসঙ্গী হিসাবে তার অগ্রজ সফল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে সাগ্রহে সহায়তা করেছেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী হয়ে সিলেট-১ আসনে বিজয়ী হন এবং বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তথ্য জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূতের চাকুরী কালীন সময়ে তার দূরদর্শী প্রজাকে কাজে লাগিয়ে বিশ্ব নেতাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেন। যার ফলে করোনাকালীন সময়ে বাংলাদেশের প্রজ্ঞাবান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শে যথাসময়ে আশানুরূপ হারে করোনা ভ্যাকসিন সংগ্রহ করতে সক্ষম হন। বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম মতে যে সময়ে বাংলাদেশে কোটির উপরে মানুষ মারা যাওয়ার কথা- সে সময়ে সেখানে মৃত্যু ছিল ২৯৪৭৭ জনের। বলা হয়েছিল রাস্তাঘাটে লাশ পড়ে থাকবে- কুকর মেকুর ও খেতে বিরক্তবোধ করবে। কি ভয়াবহ চিত্র সামনে, মানুষ আতঙ্কিত, আধমরা।
কিন্তু আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী আর সরকারের দায়িত্বশীলদের সময়োপযোগী পদক্ষেপ এবং প্রচেষ্টা আগাম আতুর সংবাদ মাধ্যমগুলোর পাগলতুল্য মন্তব্য অসার প্রমাণিত হয়। আমি নিজে সাক্ষী সে সময়ে নিউইয়র্কে ডেড বডি ট্রাকে করে নিয়ে গণকবর দেওয়া হয়। ইতালি, ফ্রান্স, ব্রাজিল সহ অন্যান্য দেশেও একই চিত্র। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পররাষ্ট্রনীতির মূল কথা, ‘ঋৎরবহফংযরঢ় ঃড় ধষষ, সধষরপব ঃড় হড়হব’-সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়।
নীতির প্রতি অবিচল বিশ্বাস এবং আস্থাশীলতাই সফলতায় চমক। বিশ্বের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যালেন্সড পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় হোচটহীনভাবে অগ্রসর হওয়ার কৃতিত্বের দাবিদার। ড. মোমেন একজন নিরহংকারী, কর্মঠ ব্যক্তিত্ব। তার সৃজনশীল ভাবনা, পদক্ষেপ এবং প্রচেষ্টা সারাদেশ বিশেষ করে তার নির্বাচনী এলাকা সিলেট-১ বাসীকে আশান্বিত করেছে। সহজ সরল সাধামনের মিতভাষী মোমেন সিলেটকে একটি আদর্শ, আলোকিত, আধুনিক অঞ্চল হিসাবে গড়ে তুলার স্বপ্ন দেখেন।
দেশপ্রেমিক মোমেনের সাথে আমার প্রথম একান্তে সাক্ষাতকালে বারবারই বলেছেন, আমাদেরকে দেশকে ভালবাসতে হবে, দেশের জন্য কাজ করতে হবে, সবার মধ্যে দেশপ্রেম থাকতে হবে। বিশেষ করে শিক্ষিত বেকার যুব সম্প্রদায়কে কাজে লাগাতে হবে। যার জন্য- কারিগরি শিক্ষার বিরাট প্রসার ঘটানোর কোন বিকল্প নেই। কাজে বিরাট বিশ্বাসী ড. মোমেন দলমতের উর্ধে থাকতে বেশ পছন্দ করেন। বিগত ১০ বছর সিসিক এর মেয়র অন্য দলের হওয়া সত্ত্বেও তিনি এবং তার অগ্রজ প্রয়াত মুহিত বিমাতাসুলভ আচরণ না করে জনস্বার্থ বিবেচনায় এনে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিতে কৃপণতা করেন নাই।
জনপ্রশংসিত ড. মোমেন তার নির্বাচনী এলাকায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, রাস্তাঘাট, নদী খনন, সুপেয় পানিসহ সর্বক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রকল্প প্রণয়ন, গ্রহণ, বাস্তবায়ন সহ কিছু কিছু প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রায় ৮০ একর জায়গা নিয়ে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ চলমান। এ খাতে পুরনো গুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং নতুন নতুন বিশেষ আকর্ষণীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।
একটি দেশের প্রক্রিয়াধীন উন্নয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের স্থিতীশিলতা যেমন অপিরহার্য, তেমনি নির্দিষ্ট সংসদীয় এলাকার দক্ষ, সৎ, কর্মঠ সংসদ সদস্যের স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। ড. মোমেন সহ যারা দেশপ্রেমিক, তাদের স্থিতি নিশ্চিত করা সবার নৈতিক দায়িত্ব। এ গুরুদায়িত্ব সম্পাদনে সকলকে একাত্ম হয়ে কথিত ব্যক্তিত্বের দুর্লভ অভিজ্ঞতা এবং বিরল দক্ষতা কাজে লাগানো মহত্বের কাজ।
তাই তো বলতে হচ্ছে, ‘মা তোর বদনখানি মলিন হলে, আমি নয়ন জলে ভাসি’। মাইকেল মধূসুদন দত্তের কবরপাশে লিখা ছিল, ‘জন্ম তব বঙ্গে, তিষ্ঠ ক্ষণকাল এই সমাধি তীরে’। কারণ জানা নেই। আমায়ও বলতে হচ্ছে, ‘জন্ম হোক যত্র তত্র, কর্ম হোক ভালো, কর্মগুণে বেঁচে থাকো, আঁধার ঘরে জ্বালাও আলো’।
লেখক : সহসভাপতি, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ।