জালালাবাদ গ্যাসে মতবিনিময়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার
দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস উৎপাদনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে সিলেট
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৭:৫৩ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সরকার দেশীয় উৎস থেকে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার। গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে পরবর্তীতে আবাসিক গ্যাস সংযোগ প্রদানের চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।
গতকাল শনিবার সিলেটে পেট্রোবাংলা আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। পেট্রোবাংলার শুদ্ধাচার কৌশল কর্মপরিকল্পনা ২০২৩-২৪ এর আওতায় অংশীজনদের নিয়ে এ মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়। জালালাবাদ গ্যাস টি এন্ড ডি সিস্টেম কনফারেন্স হলে আয়োজিত এ মতবিনিময়ে সভাপতিত্ব করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ আলতাফ হোসেন।
সারাদেশে চাহিদার তুলনায় প্রতিদিন ঘাটতি এক হাজার এমএমসিএফডি
সিলেটকে পবিত্র ভূমি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখান থেকে আমরা যে গ্যাস পাই, এখন সেখানে তেল প্রাপ্তিরও যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস উৎপাদনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে সিলেট অঞ্চল। হরিপুর ১০ নং কূপের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি একটি অদ্ভূত কূপ। এ কূপের দুটি স্তরে গ্যাস, একটি স্তরে তেল পাওয়া গেছে। এ কূপে বিপুল গ্যাসের মজুদ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, মাটির নিচের ইতিহাসে এ কূপ বিরল। তিনি বলেন, কালেকশন (সংগ্রহ) ওপেন হলে গ্যাসপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে সিলেট অগ্রাধিকার পাবে।
পেট্রোবাংলার সহকারী ব্যবস্থাপক ফারজানা রহমানের উপস্থাপনায় এতে-বিশেষ অতিথি ছিলেন-জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের যুগ্ম সচিব মো: হাফিজুর রহমান চৌধুরী, সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো: জসিম উদ্দিন, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো: মিজানুর রহমান ও জালালাবাদ গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মনজুর আহমদ চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন-পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী বিশ^জিৎ সাহা।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান তার বক্তব্যে আরো বলেন, বর্তমানে গ্যাস ঘাটতি নিয়েই আমাদের চলতে হচ্ছে। এ অবস্থায় দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ৪৯টি কূপ খননের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ২০২৬-২৮ সালে ১০০ কূপ চিহ্নিত করা হবে। পাশাপাশি গভীর ও অগভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের লক্ষ্যে প্রণীত খসড়া ‘ড্রাফট বাংলাদেশ অফসোর মডেল প্রোডাকশন শেয়ারিং কনট্রাক্ট’ (পিএসসি) অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সরকারের অতিরিক্ত সচিব জনেন্দ্র নাথ সরকার আরো বলেন, দেশীয় উৎস থেকে বর্তমানে যে ২১৫০ এমএমসিএফডি (মিলিয়ন কিউবিক ফিট পার ডে) গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হচ্ছে, তা সিলেট অঞ্চলের। ভোলা অঞ্চলে প্রাপ্ত গ্যাস এখনো জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হয়নি। কিন্তু, বর্তমানে চাহিদা প্রায় ৪ হাজার এমএমসিএফডি। এই মুহূর্তে দেশীয় উৎসের গ্যাসের সাথে দুটি এলএনজি টার্মিনাল থেকে ৮শ’ বা সাড়ে ৮শ’ এমএমসিএফডি যোগ হচ্ছে। সবমিলিয়ে বর্তমানে পেট্রোবাংলার গ্যাসের সঞ্চালনের কিংবা বিতরণের সক্ষমতা হচ্ছে প্রায় তিন হাজার এমএমসিএফডি। অর্থাৎ আমাদের চাহিদার প্রায় এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট শর্টেজ (ঘাটতি) থেকে যাচ্ছে। এই শর্টেজ গ্যাস নিয়েই আমাদের চলতে হচ্ছে। যার ফলে সব চাহিদা রাতারাতি পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এই মুহূর্তে দেশীয় ২১৫০ এমএমসিএফডি বাদে এলএনজি-পার কিউবিক মিটার ৬০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৬০ টাকার গ্যাস কিনে নিয়ে এসে ১৮ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে, দেশীয় গ্যাসের দাম কম থাকায় গড়ে প্রতি কিউবিক মিটার গ্যাসের মূল্য ২৪/২৫ টাকা পড়ছে বলে তার মন্তব্য।
গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে বর্তমানে শিল্প, সার ও বিদ্যুৎ খাতকে প্রায়োরিটি (অগ্রাধিকার) দেয়া হচ্ছে। এ তিনটি প্রায়োরিটি ঠিক রেখে অবশিষ্ট গ্যাস বণ্টন করতে হচ্ছে। এই ব্যবস্থাপনার কারণে আবাসিক চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না। যে কারণে আবাসিকে সংযোগ আপাতত বন্ধ রয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্যাস পেলে পরবর্তীতে আবাসিক কানেকশন প্রদানের চিন্তা-ভাবনা করা হবে। তবে, গ্রাহকদের কথা চিন্তা করে সরকার আবাসিক গ্রাহকদের গ্যাসের দাম বাড়ায়নি বলেও তিনি উলে¬খ করেন। ভবিষ্যতে শতভাগ আবাসিক গ্রাহকে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।
পেট্রোবাংলা সিস্টেম লসকে কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, চুরিরোধে পাইপলাইনে গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। জালালাবাদ গ্যাসে সিস্টেম লস একেবারে কম। জালালাবাদ গ্যাসে অবৈধ সংযোগ নেই, সবাই যেন এটা ফলো করেন। ঢাকা থেকে এই রোগ সিলেটে ঢুকবে না বলেও তার প্রত্যাশা। সৎ মানসিকতার জন্য জালালাবাদ গ্যাসের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এ প্রতিষ্ঠান একটি স্ট্যান্ডার্ড ও শুদ্ধাচারী প্রতিষ্ঠান। গ্রাহকদের সেবার সন্তুষ্টিকে আরো বাড়াতে হবে।
অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন-বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন এন্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স এসোসিয়েশনের সিলেট বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান মানিক, সহ-সাধারণ সম্পাদক সাজওয়ান আহমদ, ফুলকলি ফুড প্রোডাক্টসের ডিজিএম জসিম উদ্দিন, দৈনিক ইত্তেফাকের ব্যুরো প্রধান হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, যুগান্তরের ব্যুরো প্রধান সংগ্রাম সিংহ, ঢাকা ট্রিবিউনের সিলেট বিভাগীয় প্রতিনিধি মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, দৈনিক ভোরের কাগজের ব্যুরো প্রধান ফারুক আহমদ ও দৈনিক সমকালের স্টাফ রিপোর্টার ফয়সল আহমদ বাবলুসহ বিভিন্ন পর্যায়ের স্টেক হোল্ডারগণ।