স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. দুলালের মতবিনিময়
হাবিবের বিরুদ্ধে কর্মী-সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ৮:৪৭:০৩ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে কর্মী-সমর্থকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও নির্বাচনী কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্রপ্রার্থী ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল। তিনি নিজের কর্মী-সমর্থকদের নিরাপত্তার শঙ্কার কথা জানিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা দুইটায় নগরীর নয়াসড়কের একটি অভিজাত হোটেলের হলরুমে মতবিনিময়কালে তিনি একথা বলেন।
লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশেন (বিএমএ) সভাপতি ডা. দুলাল বলেন, ‘আমি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৩ আসন (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) উপজেলার সর্বস্তরের জনসাধারণের মতামত নিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলাম। আমি দলের মনোনয়ন লাভে সফল হতে পারিনি। দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলের প্রার্থীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সাংগঠনিক বিধিনিষেধ উঠিয়ে নেয়ায় আমার নির্বাচনি এলাকার আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের জনসাধারণের অনুরোধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হই।’
তিনি আরো বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থিতার বিষয়ে মনোনয়ন বাছাইয়ের দিনে ১% ভোটারের সমর্থন তালিকায় ত্রুটি আছে মর্মে আমাকে জানিয়ে কোনো ধরনের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়াই আমার প্রার্থিতা বাতিল করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে ঢাকাস্থ নির্বাচন কমিশনে আপিল করলে কমিশন আমার প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেয়।’
দুলাল বলেন- ‘আমার প্রতীক ট্রাক বরাদ্দ পেয়েই আনুষ্ঠানিক নির্বাচনি প্রচার কাজ শুরু করি। এ সময় সর্বস্তরের মানুষ যে সমর্থন দিচ্ছেন, তাতে আমি অভিভূত। নির্বাচনি মাঠে তারা যেভাবে আমাকে কাছে টেনে নিয়েছেন, তা প্রমাণ করে এই আসনের মানুষ তাদের পাশে একজন আপনজন পেতে চান। তারা এমন জনপ্রতিনিধি চান- যে সুখে-দুঃখে পাশে থাকবে, দুর্যোগে-দুঃসময়ে আগলে রাখবে, তাদেরকে সুরক্ষা দেবে।’
শঙ্কা ও উদ্বেগ প্রকাশ করে ডা. দুলাল বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে নামার শুরু থেকেই আমার প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থীর লোকজন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে অবজ্ঞা করে আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার কর্মীদের সাথে হিংসাত্মক আচার-আচরণ করছেন। তারা আমার পোস্টার, ব্যানার ছিঁড়ে ফেলছেন। আমার কর্মীদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন- আমার পক্ষে কাজ না করার জন্য। উপনির্বাচনে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত দলের নেতাকর্মীদের বিশেষ করে সাবেক সংসদ সদস্য মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরীর কর্মীদের মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়ে ভয়-ভীতি দেখাচ্ছেন।
তিনি নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরেই আমার কর্মীদের সাথে হিংসাত্মক আচরণ করার জন্য তার কর্মীদের লেলিয়ে দিচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৩ ডিসেম্বর বালাগঞ্জের পশ্চিম গৌরীপুর ইউনিয়ন থেকে বালাগঞ্জ সদরে আমার অফিস উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসার পথে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেন স্থানীয় দুই ইউপি সদস্য। তারা কর্মীদের আমার পক্ষে কাজ না করার জন্য হুমকি প্রদান করেন। একইদিনে ফেঞ্চুগঞ্জের উত্তর কুশিয়ারা ইউনিয়নের পাঠানচক গ্রামে আমার ব্যানার লাগাতে দেননি নৌকা প্রার্থীর কর্মীরা। পাঠানচক গ্রামে ট্রাক প্রতীকের সমর্থনে প্রচার-প্রচারণা না চালানোর জন্য আমার কর্মীদের হুমকি প্রদান করা হয়েছে। ঘিলাছড়া ইউনিয়নের মোকামেরতলবাজারে আমার নির্বাচনি কার্যালয়ে ঢুকে আমার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে এবং আমার লোকজনকে হুমকি দেয়া হয়েছে। দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও নৌকার প্রার্থীর বিশ্বস্ত লোক হিসেবে পরিচিত মীর মতিউর রহমান জালালপুরে আমার কর্মীদের প্রকাশ্যে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। এছাড়া, ৩টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নৌকার প্রার্থীর লোকজন আমার কর্মীদের প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে, ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। বিভিন্নভাবে আমার কর্মীদের মানসিকভাবে দুর্বল করার চেষ্টা চলছে।
এছাড়া, আমার প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী তার উছৃঙ্খল কর্মীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে আসছেন। বিষয়গুলো আমি রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের লিখিতভাবে জানিয়েছি। তবে মনে হচ্ছে- তারা এ বিষয়ে উদাসীন। তাই, সার্বিক নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন।’
ডা. দুলাল আরও বলেন, ‘অবহেলিত বালাগঞ্জ উপজেলাকে নিয়ে আমার স্বপ্ন দীর্ঘদিনের। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে পিছিয়ে পড়া এ জনপদকে প্রতিটি সেক্টরে স্বয়ংসম্পূর্ণ করাই হবে আমার প্রথম কাজ। বিশেষ করে শিক্ষা, চিকিৎসা ও যোগাযোগ খাতকে আমি সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেবো। ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় শিক্ষা, চিকিৎসায় অগ্রগতির ব্যাপারে আমি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করবো। দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় শিক্ষা, চিকিৎসা ও যোগাযোগ খাতকে আমি আরও বেগবান করবো। বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা থেকে দক্ষিণ সুরমা উপজেলাটি উন্নয়নে অনেকাংশে এগিয়ে। প্রয়াত সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর সঠিক পদক্ষেপের কারণে এ উপজেলাটিতে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের বিভাগীয় অফিসও হয়েছে। শিক্ষা ও চিকিৎসায় অগ্রাধিকার দিয়ে এ উপজেলাটিকে শতভাগ স্বয়ংসম্পূর্ণ করাই আমার মূল লক্ষ্য থাকবে। সর্বোপরি-সিলেট-৩ সংসদীয় আসনকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং সবক্ষেত্রে সমৃদ্ধ নির্বাচনি এলাকায় রূপান্তরিত করাই হবে আমার লক্ষ্য। কারণ- এই আসনে এক সময় সংসদ সদস্য ছিলেন আমার বড় ভাই মরহুম ইনামুল হক চৌধুরী বীরপ্রতীক।
সবশেষে ডা. দুলাল বলেন- ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সম্পর্কে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর কোনো নির্দেশনাই মানছেন না আমার প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী। বরং প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যেকটি নির্দেশনাকে উপেক্ষা করছেন। নির্বাচনি পরিবেশ বিনষ্ট করছেন তিনি ও তার কর্মীরা। তার কর্মীরা ভোটারদেরকে ভোটে না আসার জন্য বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখাচ্ছেন। তাদের এমন কার্যক্রমে আমি বেশ উদ্বিগ্ন।’