‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রসঙ্গ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ৮:০০:২৯ অপরাহ্ন
গোলাম সারওয়ার :
পিক আওয়ারেই জিন্দাবাজার পয়েন্টের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে গেল সিএনজি। শিশুসহ একটা পরিবারকে উঠতে দেখা গেল। পেছন দিক থেকে মোটর বাইক রাইডার সিএনজি ড্রাইভারকে কড়া ধমক দিয়ে বলল সাইড করে প্যাসেঞ্জার নেয়া যায় না? এরকম দৃশ্য আমাদের শহরসহ সারা বাংলাদেশেই লক্ষ্য করা যায়। যানজট এড়াতে বা সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে ড্রাইভার যেমন সচেতন হচ্ছে না, পাবলিকও তেমন সচেতন হচ্ছে না। এমনকি দায়িত্বেরত ট্রাফিক পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও দৃষ্টি দিচ্ছে না।
প্রচন্ড জ্যামে রিকশা গাড়ি সবই আটকে আছে। কিন্তু হর্ণ বেজেই চলেছে। শব্দদূষণ হচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত ছিল শব্দদূষণের জন্য জরিমানা করার। কিন্তু জরিমানা হচ্ছে না। ফলে শব্দদূষণ বেড়েই চলেছে শহরে, এমনকি গ্রামেও। কোনো কোনো মোটর সাইকেলওয়ালা সাইলেন্সার পাইপে জোরে শব্দ হওয়ার সিস্টেম করে রাখে। কিন্তু এদের কোনো সিস্টেমের মধ্যে আনতে পারছে না ট্রাফিক বিভাগ। এদের সিস্টেমে আনার জন্যে সাহস দরকার, সততা দরকার, দক্ষতা দরকার। সাহস, সততা বা দক্ষতা কি এদের নেই?
লক্ষ্য করলে দেখবেন, পাবলিক টয়লেটগুলো বেশ পরিচ্ছন্ন, পরিপাটি থাকে। কারণ কি? এখানে পয়সার বিনিময়ে টয়লেট ব্যবহার করা যায়। পয়সা খরচ করাতে হয় এদেশের সিটিজেনকে। পয়সা খরচ করলে এদেশের সিটিজেন আইন মানে। বিনা পয়সায় এদেশের সিটিজেন আইন মানতে চায় না। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নও থাকতে চান না। দেখুন না, কী সুন্দর করে সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বানানো হয়েছে। বানানো হয়েছে শৌচাগারও। কিন্তু শৌচাগারের কী অবস্থা। বিনা পয়সায় তো। তাই নাকে রুমাল দিয়েও প্রবেশ করা যায় না। ঠিক এমনিভাবে ঝকঝকে তকতকে ওসমানী মেডিকেলের টয়লেটগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
এদেশের শহরগুলোতে যানজট পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। যানজট আরো প্রকট হবে আমাদেরই কারণে। এক নম্বরে দায়ী ট্রাফিক পুলিশ। ট্রাফিক বিভাগকে দায়ী করতে পারি না। যথাযথ কর্তব্য কর্ম সম্পাদন করার জন্যই ট্রাফিক বিভাগ প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি যদি কর্তব্যে অবহেলা করেন, তাকেই আমরা দায়ী করতে পারি। ট্রাফিক পুলিশ তার নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে করেন না। পিক আওয়ারে ৩/৪ জন পুলিশ একত্রে জটলা হয়ে আড্ডা দেন। আইন অমান্যকারীকে তিনি জরিমানা করেন না।
তিনি নিজের পকেটে কিছু অসাধু অর্থ গ্রহণ করে জরিমানা থেকে অব্যাহতি দেন। ফলে যেই লাউ সেই কদু। সিলেট শহরে প্রচুর লাইসেন্সবিহীন সিএনজি চলে। প্রচুর রিকশা, মোটর সাইকেলও আছে লাইসেন্সবিহীন। ট্রাফিক পুলিশের অসাধু কর্মকান্ডে এরা পার পেয়ে যায়। অনেক ট্রাফিক পুলিশ আছে ট্রাফিক আইন জানে না। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বে আছে। রেড সিগনাল বা হাত উঠিয়ে রাখলে বাম দিকে মোড় নিতে পারে যে কোনো যানবাহন। সেটা ওরা জানে না। ওরা জানে, হাত উঠালে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। এতেও কিন্তু যানজট লাগে। যেহেতু বাম দিক দিয়ে চলাচলের সুযোগ আছে, বাম দিকে চলাচলের সুযোগ দিলে যানজট কিন্তু অনেকটাই প্রশমিত হয়। বাম দিকে চলাচলের সুযোগ আছে বললে ট্রাফিক পুলিশ তখন কাগজপত্র দেখতে চায়। কাগজপত্র দেখালেও বাম দিকে চলাচলে বারণ করে। এইসব আইন না জানা ট্রাফিকের কারণেও যানজট দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।
বছরের শেষ দিকে অর্থাৎ ২০ ডিসেম্বর জননেত্রী শেখ হাসিনা সিলেটে এসে ‘স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্ণমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি’ গড়ার লক্ষ্যে আবারও নৌকায় ভোট চাইলেন। স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট সিটিজেন বা স্মার্ট গভর্ণমেন্ট প্রতিষ্ঠার যে বিকল্প নেই সেটা আশা করি পাঠক বুঝতে পেরেছেন। বিষয়টি অনুধাবনের জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ এবং তাঁকে আমরা অভিনন্দন জানাই। তাঁর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সফল হবে যদি আমরা নিজেকে পরিবর্তনের জন্য সচেষ্ট হই। আসলে নিজেকে পরিবর্তনের জন্য আমাদের সদিচ্ছাই যথেষ্ট। সদিচ্ছা আসে অবশ্য সাহস থেকে। সেই সাহস আমাদের অবশ্যই আছে। কারণ আমরা বীরের জাতি।
চর্চা বা অনুশীলন করার কোনো বিকল্প নেই। নিজের কাজটা সবচেয়ে ভালোভাবে করতে পারাটাই হচ্ছে পরিবর্তনের প্রথম শর্ত। নিজের কাজ সবচেয়ে ভালোভাবে করা দেশপ্রেমেরও একটা অংশ। আসুন না আমরা যে যেখানেই কর্ম করি সেখান থেকেই শুরু করি ভালোভাবে কাজটি করার। আপনি-আমি ভালো থাকলে আমার আপনার চারপাশটাও ভালো থাকবে। তবেই আমরা হয়ে উঠব এক একজন স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট নাগরিক। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ অনেক আগেই পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে রেখে এসেছে। আমাদের দেখে পাকিস্তান শুধু হতাশাই করছে না, আমাদের এখন ওরা অনুসরণও করছে। সবাই মিলে যদি ভালো মানুষ হওয়ার চর্চা করি, সদাচরণ করি, যথাযথ স্থানে ময়লা ফেলি, আইন মেনে চলি তাহলে আমাদের স্মার্ট সিটিজেন হতে বেশি সময় লাগবে না।
নিঃসন্দেহে আমাদের ইকোনমি এগুচ্ছে। আমাদের অর্থনীতি বা ইকোনমি এগিয়ে যাচ্ছে বলেই আমাদের গ্রামগুলোতে এখন আর ছনের ঘর বা কুঁড়ে ঘর খুব একটা দেখা যায় না। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটা গ্রামেই এখন পাকা সড়ক চলে গেছে। বিদ্যুত পৌঁছেছে প্রায় ঘরেই। মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে নিঃসন্দেহে। মানুষের হাতে হাতে পয়সা আছে এখন। কিন্তু স্মার্ট ইকোনমি বা মজবুত অর্থনীতি গড়ে ওঠেনি এখনও। তাই সময়ের দাবিতে আমাদের অর্থনীতিকে স্মার্ট অর্থনীতিতে রূপান্তর করতে হবে।
গ্রামে বসেই কিছু মানুষ স্মার্ট ইকোনমির স্বাদ পাচ্ছে। প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে বাস করেও কেউ কেউ আমেরিকার কোম্পানীতে কাজ করে স্মার্ট ইকোনমি গড়ে তুলছে। কিন্তু দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী এখনও স্মার্ট ইকোনমি গড়ার লিংক পাচ্ছে না। দেশের রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো আরো সুদৃঢ় করতে হবে। দেশের সাধারণ মানুষের নাগালে নিয়ে আসতে হবে। সেজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দূরদর্শী লক্ষ্য স্থাপনের জন্য স্মার্ট ইকোনমি গড়ার স্বপ্ন দেখছেন এবং কাজ করে যাচ্ছেন।
টাঙ্গুয়ার এক্সপ্রেস নামে নতুন একটি ট্রেন ঢাকা-সিলেট গন্তব্যে চালু হতে যাচ্ছে। এটা নিয়ে কেউ কেউ ফেসবুক পেইজে সমালোচনা করেছেন কেন এর নাম হাকালুকি বা জৈন্তিয়া হলো না? বিষয়টা হলো গভর্ণমেন্ট এখন স্মার্ট গভর্ণমেন্টের দিকে ধাবিত হচ্ছে। টাঙ্গুয়ার হাওর এখন আর নির্দিষ্ট অঞ্চলের নয়। এটা এখন বিশ্বের ঐতিহ্য। বিশ্বের অনেক মানুষ টাঙ্গুয়ার হাওর দেখতে আগ্রহী। ওখানকার বনজ, জলজ উদ্ভিদ বা নানান পরিযায়ী পাখী পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বিশ্ব পর্যটক বা দেশীয় পর্যটক যাতে টাঙ্গুয়ার এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়ে আসতে পারে, সেজন্য এই নামকরণ। এছাড়া টাঙ্গুয়া পর্যন্ত রেললাইন যেতে পারে- সুদূরপ্রসারী ভাবনা থেকেই টাঙ্গুয়ার এক্সপ্রেস নামকরণ হয়েছে। এতে দোষের কিছু নেই বরং স্মার্ট গভর্ণমেন্টের একটা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়ন করে দেশের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশে স্মার্ট গভর্ণমেন্ট প্রতিষ্ঠিত হোক- এটা আমাদের সকলেরই আশা।
যেভাবে নাশকতা হচ্ছে বাসে-ট্রেনে, এগুলো স্মার্ট সোসাইটি নয়। যে কোনো মূল্যে আমাদেরকে স্মার্ট সোসাইটি গড়ে তুলতে হবে। উন্নত মন-মানসিকতার চর্চা করতে হবে। হিংসা-প্রতিহিংসা ত্যাগ করতেই হবে। ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ করতেই হবে। নিজের কাছে নিজেই অঙ্গীকার করতে হবে। তবেই গড়ে উঠবে স্মার্ট সোসাইটি।
লেখক: কলামিস্ট