সিলেটে এক বছরে ১৫ শিশু খুন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ৪:২৮:৩৩ অপরাহ্ন
কাউসার চৌধুরী :
সিলেটে বিদায়ী বছরে হত্যার শিকার হয়েছে ১৫ শিশু। পরিসংখ্যান বলছে, এ সংখ্যা আগের বছরের চেয়ে তিনগুণ। ২০২২ সালে এ অঞ্চলে হত্যার শিকার ৫ শিশু। এর মূলে সামাজিক অস্থিরতার পাশাপাশি দাম্পত্য কলহ, বিচারে দীর্ঘসূত্রতাকে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
খুন হওয়া ১৫ শিশুর মধ্যে রয়েছে-সিলেট জেলার ৬ জন, সুনামগঞ্জ জেলার ৫ জন, হবিগঞ্জ জেলার ৩ জন ও মৌলভীবাজার জেলার এক শিশু। দৈনিক সিলেটের ডাক-এ প্রকাশিত সংবাদ ঘেঁটে শিশু হত্যার এমন ভয়াবহ চিত্র উঠে উঠেছে।
জেন্ডার বিষয়ক গবেষক ও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আফরোজা সোমা সিলেটের ডাককে বলেন, শিশু হত্যার জন্যে সামাজিক অস্থিরতা বড় কারণ। যেমন দেখবেন আগের বছর যেসকল শিশুকে হত্যা করা হয়েছিল; ওই হত্যা মামলার বিচার এখনো সম্পন্ন হয়নি। বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহের নজরদারি প্রয়োজন। পাশাপাশি দ্রুত ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা গেলে শিশু হত্যা কমে আসবে বলে তার মন্তব্য।
আর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মনোরোগ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলামও শিশু হত্যার বড় কারণ হিসেবে সামাজিক অস্থিরতাকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে সমস্যাগুলোর সমাধান করা গেলে শিশু হত্যার মতো ঘটনা কমে আসবে। পাশাপাশি মা-বাবার মানসিক চিকিৎসারও প্রয়োজন রয়েছে।
ফিরে দেখা হত্যাকান্ড
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ছোট বাহুলা গ্রামে ১০ জানুয়ারি তিশা আক্তারকে (৯) হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ঘাতক সিরাজুল ইসলাম আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। একই মাসের ২৬ তারিখ বানিয়াচং উপজেলার কদুপুরে ধানক্ষেতে শিশু বিলাল আহমদকে (৯) হত্যা করা হয়।
ওসমানীনগর উপজেলার তাজপুরবাজারে ৯ মার্চ একটি বাসায় অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী দিপা রাণী সিংহের (১৪) রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়।
বালাগঞ্জ উপজেলার নুরপুর গ্রামের পার্শ্ববর্তী জঙ্গল থেকে ২২ মার্চ স্কুল ছাত্রী সুমাইয়া বেগমের (১৫) রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।
চুনারুঘাটের গাদিশালা গ্রামের সূর্যল হক ২৩ মার্চ নিজের বসতঘরে পুত্র ইয়াসিন মিয়াকে (১০) এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে।
জকিগঞ্জের খলাছড়া গ্রামে ৩০ মার্চ রাস্তার বিরোধকে কেন্দ্র করে স্কুল ছাত্র সোহেল আহমদকে (১৫) প্রতিপক্ষের লোকজন হত্যা করে। গোলাপগঞ্জ উপজেলার কালীকৃষ্ণপুরের খাল থেকে ১০ এপ্রিল আরিফা বেগমের (৭) লাশ উদ্ধার করা হয়। একই দিন দিরাই উপজেলার জগদল গ্রামে নিখোঁজের তিন দিন পর আমির হামজার (৫) অর্ধ গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
জগন্নাথপুর কাঠলখইড় গ্রামে ৩ জুন মামার হাতে ভাগনা মোক্তার মিয়া (১৫) প্রকাশ্য দিবালোকে খুন হয়। দিরাই ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার মধ্যবর্তী শরীফপুর থেকে স্কুল ছাত্রী সাজনা বেগমের (১৬) বস্তাবন্দি রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। জকিগঞ্জের গণিপুরে ৩ আগস্ট প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় স্কুল ছাত্রী তামান্না আক্তার তানিয়াকে (১৫) জুসের সাথে বিষ মিশিয়ে হত্যা করে।
রাজনগরে ১৬ আগস্ট মোবাইল আসক্ত পুত্র আবির আহমদ জয়কে (১৫) গর্ভধারিণী মা সেহেনা বেগম গলায় গামছা পেচিয়ে হত্যা করে। দিরাই উপজেলার টংগর গ্রামে বসতবাড়ির সীমানার বিরোধ নিয়ে মাদ্রাসা ছাত্র ইমরান আহমদকে (১২) পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ছাতক উপজেলার দক্ষিণকুরশি গ্রামে আপন বড় ভাই শিশু বোন ইভা বেগমকে (৯) কুপিয়ে শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে হত্যা করে। বিশ্বনাথে ২৩ ডিসেম্বর বলৎকারের পর শিশু শ্রমিক আমির মিয়া সিয়ামকে (১৫) হত্যা করা হয়েছে।