স্বাগত ২০২৪
শান্তির সুবাতাস ছড়িয়ে পড়ুক
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ৫:১১:৩৩ অপরাহ্ন
আহমাদ সেলিম :
পৃথিবীটা যেন একটা যুদ্ধক্ষেত্র। নিজের সামনে চেয়ে চেয়ে শুধু নিজের সর্বনাশ দেখা, যেমন দেখছে ফিলিস্তিনের মানুষ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে তবু লড়ে যাচ্ছে হামাস। আরেকদিকে, জাতিসংঘকে বৃদ্ধঙ্গুলি দেখিয়ে হামাস নির্মূলে কঠোর ইসরায়েল।
গাজার কপাল এতটাই পুড়েছে যে, মানুষের সাথে গাজার জীবন ও সংস্কৃতি সব কিছুই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে। শহরের অনেক রতœ ইসরায়েলি বোমা হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন ইট, পাথর আর সুরকি ছাড়া যেন আর কিছু অবশিষ্ট নেই। ক্ষমতাশালীরা সবকিছু চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছে।
গাজায় অন্তহীন বোমা হামলায় সব গেছে। ইসরায়েলি বাহিনী রাস্তাঘাট, মসজিদ, গির্জা, উদ্যান কোনো কিছুই ছাড়েনি। ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে সব। এই চিত্র হৃদয় ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে বিবেকে মোড়ানো মানুষগুলোকে।
গাজায় কেয়ামতের মতো যেসব দৃশ্য আমরা দেখতে পাচ্ছি এর থেকে পরিত্রাণ কোথায়? সেই খবর কারো হাতে নেই, এমনকি জাতিসংঘের কাছেও না।
রাশিয়াও মারছে ইউক্রেনকে। ২২ মাস ধরে চলছে ইউক্রেন যুদ্ধ। এক শীত শেষে আরেক শীতে গড়িয়েছে সংঘাত। মিয়ানমারে সেনা সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়ে যাচ্ছেন বিদ্রোহীরা। বিশ্বব্যাপী সশস্ত্র সংঘাতের তথ্য দেওয়া ওয়েবসাইটগুলো জানাচ্ছে-সরাসরি যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলা ইত্যাদি মিলিয়ে বিশ্বের ৩২টি দেশ বর্তমানে সশস্ত্র সংঘাতের মধ্যে রয়েছে।
এভাবে দেশে দেশে চলছে আধিপত্যের লড়াই। এই যুদ্ধের সমাপ্তি কোথায়? যুদ্ধ না থামলে আমরা কেউ ভালো থাকতে পারবোনা। যুদ্ধের প্রভাব হাঁড়ে হাঁড়ে ঠের পাচ্ছে, সারা পৃথিবীর মতো বাংলাদেশের মানুষ। এই সংঘাত আর বর্বরতার মধ্যে আমরা নতুন একটি বছরকে বরণ করেছি, সেইসাথে কান্নাভেজা, রক্তভেজা, কাফনমোড়ানো ২০২৩ বছরকে বিদায় জানিয়েছেন বিশ্ববাসী। বিশ্বের বিরানভূমিতে দাঁড়িয়ে তবু বলছি-স্বাগত ২০২৪।
বলা যায়, ২০১৯ সাল থেকে বিশ্বের কোমর ভাঙ্গা শুরু হয়েছিলো। তারপর আর দাঁড়ানো যাচ্ছে না। একটার পর একটা দু:সংবাদ লেগেই আছে আমাদের জীবনজুড়ে, বছরজুড়ে। এক্ষেত্রে অবশ্য বাংলাদেশ অনেকটা ব্যতিক্রম। শত ঝড়-তুফানের মধ্যেও আমরা একেবারে রিক্ত নই। কঠিন ইস্পাত সময়কে মোকাবেলা করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, সম্ভাবনার অযুত স্বপ্ন বুকে ধারণ করে।
তবে দেশের মানুষ সবচেয়ে বেশী নিষ্পেষিত দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে। ইউক্রেন যুদ্ধের দোহাই দিয়ে গোটা পৃথিবীর মতো বাংলাদেশের বাজার অস্থির, লাগামছাড়া। সেই লাগাম এখনো টেনে ধরা যায়নি। সেই সাথে রয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। বছরজুড়ে মাঠে আন্দোলন করে গেছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। আন্দোলনে মাঠে সরব থাকলেও নির্বাচনের মাঠে তারা আসেনি। জ্বালাও-পোড়াও অনেক হয়েছে, সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে। থেমে নেই তবু বিএনপির হরতাল অবরোধ কর্মসূচি। এই আন্দোলন, এই কর্মসূচি আন্দোলনকারীদের কতটা সফলতা দিয়েছে, কতটা ব্যর্থতা দিয়েছে সেই হিসেবের খাতা দীর্ঘ। আন্দোলনকে প্রতিহত করতে মাঠে রয়েছে আওয়ামীলীগও।
২০২৩ সালে সারা দেশে ৪০০টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় ৪২ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আর এসব ঘটনায় ৪ হাজার ৭৭১ জন আহত ও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। একইসঙ্গে বিদায়ী বছরে মুখোশ পরে গুপ্ত হামলার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের নতুন ঘটনারও আবির্ভাব হয়েছে।
গতকাল রোববার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০২৩: এমএসএফ-র পর্যবেক্ষণ‘ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরেন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা কামাল।
অপরদিকে, সাংবাদিকের জন্য সবচেয়ে প্রাণঘাতী ছিলো গত বছর। গাজা উপত্যকায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০৫ জনে। গাজার কর্মকর্তারা বলছেন, নিহত সংবাদকর্মীর সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
২০২৩ সালের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনাটি দেখে বিশ্ববাসী। তুরস্ক ও সিরিয়া সীমান্তে ভয়াবহ এক ভূমিকম্পে ৬০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ৫১ হাজার তুরস্কে এবং বাকি ৯ হাজার মানুষ মারা যায় সিরিয়ায়। পশ্চিমা বিশ্বের ব্যাংকিং খাতে ধস নামে, দেউলিয়া হয়।
গত বছরের এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনকে টপকে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশের তকমা পায় ভারত।
আমরা প্রত্যাশা করি গাজা একদিন ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠবে। ভস্ম থেকে আবারও তার পুনরুত্থান হবে। গাজায় আবারও শোনা যাবে প্রাণের স্পন্দন।
আমাদের বিশ্বাস বাংলাদেশ রাজনীতির অস্থিরতার বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসবে একদিন। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের উন্নয়নের আগে দরকার দেশের রাজনীতির উন্নয়ন। রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরে না আসা পর্যন্ত আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে স্থিতিশীলতা আসবে না। স্থিতিশীলতা না আসলে নতুন বছরেও আমরা নতুন আশা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবোনা। সেই পুরনো সংকট, সংঘাত আমাদের তাড়া করবে। আমরা এর থেকে উত্তরণ চাই। নতুন বছরের নতুন আলো সবার ঘরে ছড়িয়ে পড়–ক। সেই আলোতে উদ্ভাসিত হোক ধনী-গরিব সবাই। মানুষ সব সময় আশা নিয়ে বাঁচে। মানুষ আশা নিয়ে বাঁচুক। আশা থেকেই বেঁচে থাকার ভরসা তৈরী হয়। আনন্দ-উচ্ছ্বাস ও ভালোবাসায় ভরে উঠুক মানুষের মন। জয় হোক মানুষের, জয় হোক মানবতার।