ছাতকে প্রচার-প্রচারণা তুঙ্গে : লড়াই হবে দ্বিমুখী
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ৫:৩৬:০২ অপরাহ্ন

সৈয়দ হারুন অর রশীদ ছাতক, (সুনামগঞ্জ) থেকে : সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক-দোয়ারাবাজার) আসনে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা এখন তুঙ্গে। অন্যতম প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও সমমনাদলগুলো নির্বাচনে না এলেও ছাতকের সর্বত্র নির্বাচনী আমেজ পরিলক্ষিত হচ্ছে। কার ভোটের পাল্লা ভারী-এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই ভোটের সমীকরনে যুক্ত হচ্ছে নতুন মাত্রা। ভোট যুদ্ধে লড়াই হবে দ্বিমুখী-এমনটিই পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাই ভোটাররাও দু’ভাগে বিভক্ত বলা যায়। নির্বাচনে অগ্রগণ্য ওই দু’প্রার্থীকে নিয়েই হিসেব-নিকেশে বসেছেন ভোটাররা।
এবারের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দলীয় নেতা-কর্মীরাও দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে প্রচারণায় নেমেছেন। তারা চালাচ্ছেন কৌশলী প্রচারণা। নৌকার কর্মী-সমর্থকরা বলছেন, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা সুনামগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে দলীয় নমিনেশন দিয়ে নৌকা তুলে দিয়েছেন বর্তমান এমপি মুহিবুর রহমান মানিকের হাতে। আর স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা বলছেন, নেত্রী পারমিশন দিয়ে নির্বাচনী মাঠে লড়াই করার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগ নেতা শামীম আহমদ চৌধুরীকে। তাই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। জনপ্রিয়তার দৌঁড়ে যে এগিয়ে যাবে তাকেই নেত্রী সাদরে গ্রহণ করবেন বলে তারা মনে করেন।
এ থিমকে সামনে রেখে নৌকা ও ঈগলের প্রচারণায় উত্তাপ ছড়াচ্ছে ভোটের মাঠে। এখানে মূলত আওয়ামীলীগ বনাম আওয়ামী লীগের লড়াই। নৌকা সমর্থকদের প্রচারপত্র, লিফলেট ও সভা সমাবেশে দাবি, ছাতক-দোয়ারাবাজারে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার এমপিওভুক্তি, সরকারিকরণ, নান্দনিক ভবন, সুরমা ব্রিজসহ বহু ব্রীজ-কালভার্ট নির্মাণ, শতভাগ পল্লীবিদ্যুতায়ন, ট্রমা সেন্টারসহ স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন, দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরে সুরমা নদীর ভাঙ্গনরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ ইত্যাদি কর্মযজ্ঞ নৌকার প্রার্থী মুহিবুর রহমান মানিকের প্রচেষ্টায় সম্পন্ন হয়েছে। অপরদিকে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম আহমদ চৌধুরী সভা-সমাবেশে বলছেন, ছাতক-দোয়ারা এখনো কাংখিত অনেক উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। বিভিন্ন সভা সমাবেশে একে অপরকে আক্রমণাত্মক ভাষায়ও কথা বলছেন। এতে পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছেন অনেকে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর প্রশাসনের সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ছাতক-দোয়ারাবাজার সংসদীয় আসনে স্বতন্ত্রসহ বিভিন্ন দলের ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। প্রার্থীরা হলেন আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী মুহিবুর রহমান মানিক (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম আহমদ চৌধুরী (ঈগল), জাতীয় পার্টি (জেপি)’র প্রার্থী এডভোকেট মনির উদ্দিন (বাইসাইকেল), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ প্রার্থী হাজী আব্দুল জলিল (গামছা), বাংলাদেশ ন্যাশনালিষ্ট পার্টি বিএনএফ’র প্রার্থী আশরাফ হোসেন (টেলিভিশন), জাতীয় পার্টির প্রার্থী এডভোকেট নাজমুল হুদা হিমেল (লাঙ্গল), গণফোরাম প্রার্থী আইয়ূব করম আলী (উদীয়মান সূর্য্য), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি বিএসপি প্রার্থী আবু সালেহ (একতারা) এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টি এনপিপির প্রার্থী আজিজুল হক (আম)। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৯ প্রার্থী হলেও প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন নৌকা ও ঈগলের প্রার্থী। তবে, জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি এডভোকেট আব্দুল মজিদ মাস্টারের পুত্র এবারের জাতীয় পার্টির প্রার্থী এডভোকেট নাজমুল হুদা হিমেল নির্বাচনী মাঠের বিভিন্ন পাড়া- মহল্লা চষে বেড়াচ্ছেন। তিনি জানান, ভবিষ্যতে ছাতক-দোয়ারাকে নিয়ে ব্যাপক উন্নয়নের স্বপ্ন দেখেন তিনি।
এদিকে, নৌকার পক্ষে প্রচারণায় নেমেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, প্যানেল মেয়রসহ বেশ কয়েকজন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন সদস্যবৃন্দ। অপরদিকে ঈগল পাখির সমর্থনে প্রচারণায় নেমেছেন পৌর মেয়র, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, কাউন্সিলরসহ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও মেম্বারবৃন্দ। নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, ওই দু’ প্রার্থীর মধ্যেই ফলাফল নির্ধারিত হবে।
বর্তমানে সভা, সমাবেশ, উঠান বৈঠক, মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা, মিছিল ও মাইকে গানে-গানে প্রচারণায় ছাতক-দোয়ারা জুড়ে বিরাজ করছে এক উৎসবের আমেজ। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত তেমন কোন সংঘর্ষ, সহিংসতা বা অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, প্রার্থীদের নির্বাচনী আচরণ বিধি প্রতিপালনে ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনিক টিম সতর্ক দায়িত্ব পালন করছে।