সিলেট-৬ আসনে ভোটার ৪৭২৭৪৯ : প্রার্থী ৬
আলোচনায় নাহিদ, শমসের মুবিন ও সরওয়ার হোসেন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০২ জানুয়ারি ২০২৪, ১:০৩:১৫ অপরাহ্ন
ছাদেক আহমদ আজাদ :
আর মাত্র পাঁচদিন পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইতোমধ্যে সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) আসনে নির্বাচনী প্রচারণা বেশ জমে উঠেছে। চা-স্টল থেকে শুরু করে সর্বত্র চলছে প্রত্যাবর্তন না পরিবর্তন এই আলোচনা। সময়ে সময়ে পাল্টাচ্ছে ভোটের গতিপথ। এজন্য জয়-পরাজয়ের চিত্র অনেকটা জটিল হয়ে উঠছে। বিএনপি-জামায়াতবিহীন ভিন্ন আঙ্গিকের এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির হেভিওয়েট দু’প্রার্থীসহ ৬ জন। এরমধ্যে নৌকা প্রতীকের নুরুল ইসলাম নাহিদ, সোনালী আঁশ’র শমসের মুবিন চৌধুরী বীরবিক্রম ও ঈগল প্রতীকের প্রার্থী সরওয়ার হোসেন এর মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে।
এ আসনে নারী ও পুরুষ মিলে মোট ভোটার ৪ লাখ ৭২ হাজার ৭৪৯ জন। এরমধ্যে গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ২ লাখ ৬৬ হাজার ৭১১ জন। তন্মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৩৪ হাজার ৯২৬, মহিলা ভোটার এক লাখ ৩১ হাজার ৭৮৪ ও হিজড়া ১ জন। বিয়ানীবাজার উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৬ হাজার ৩৮ জন। এরমধ্যে পুরুষ এক লাখ ২ হাজার ৫৮৩ ও মহিলা এক লাখ ৩ হাজার ৪৫৫ জন। এবার বিয়ানীবাজার থেকে গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ৬০ হাজার ৬৭৩ ভোট বেশি।
সিলেট-৬ সংসদীয় আসনে এবার ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং শমসের মুবিন চৌধুরী ছাড়া অপর চারজন নতুন মুখ। এ আসনে নুরুল ইসলাম নাহিদ পরপর ছয়বার নির্বাচন করে চারবার বিজয়ী ও দু’বার পরাজিত হন। তিনি দু’বার শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। শমসের মুবিন চৌধুরী বিগত একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনের একপর্যায়ে তিনি ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ান। অপর চার প্রার্থীর কেউই অতীতে এ আসনে নির্বাচন করেননি।
এ আসনে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর প্রথম দিকে সভা-সমাবেশের কারণে নৌকার নুরুল ইসলাম নাহিদ ও ঈগল প্রতীকের সরওয়ার হোসেনের নাম ছিলো ভোটারদের মুখে মুখে। আওয়ামী লীগের সিংহভাগ নেতা এমপি নাহিদের পক্ষে থাকলেও কিছু নেতা ছিলেন সরওয়ার হোসেনের সাথে। ভোটের হিসেবেও ঈগল-নৌকা ছিলো একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। একটি সংস্থার জরিপে এমন তথ্য উঠে আসে। তবে, শুরু থেকেই মাঠে না থাকলেও তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপার্সন, সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত শমসের মুবিন চৌধুরী ছিলেন আলোচনার শীর্ষে। তাঁকে ঘিরেই এ আসনের জয়-পরাজয় নির্ধারিত হবে এমন খবরও রটে।
গত শুক্রবার রাতে হঠাৎ করে গোলাপগঞ্জ পৌরশহরের একটি হলরুমে শমসের মুবিন চৌধুরীকে নিয়ে প্রকাশ্য সভা করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এতে নেতৃত্ব দেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদির সাফি চৌধুরী এলিম। মূলত এরপর থেকেই ভোটের মাঠে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে নেন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা শমসের মুবিন চৌধুরী। এক্ষেত্রে সোনালী আঁশ অগ্রসর হওয়ায় গোলাপগঞ্জে অনেকটা প্রভাব পড়েছে ঈগল প্রতীকের উপর। নৌকা’র ভোটেও যে প্রভাব পড়েনি তা কিন্তু নয়।
বিয়ানীবাজারে এতোদিন ঈগল এগিয়ে থাকলেও বর্তমানে সেই অবস্থানের কিছুটা পরিবর্তন ঘটেছে। বিপরীতে নৌকার পালে দক্ষিণা হাওয়ার আভাস মিলেছে। এতে মুখ্য ভূমিকা রাখছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট মো. নাসির উদ্দিন খান। সচেতন মহল ও ভোটারদের সাথে কথা বলে নির্বাচনী মাঠের এমন তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে।
সিলেট-৬ আসনে দু’টি উপজেলা ও দু’টি পৌরসভা রয়েছে। বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গোলাপগঞ্জে নৌকার প্রার্থী ও বিয়ানীবাজারে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচিত হন। আবার, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা মেয়র নির্বাচিত হন। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার হোসেন এর সাথে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আব্দুল বারী ও বিয়ানীবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব এবং তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী শমসের মুবিন চৌধুরীর সাথে গোলাপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদির সাফি চৌধুরী এলিম ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রুহেল আহমদ রয়েছেন। তবে, ক্লিন ইমেজের প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি’র সাথে দু’উপজেলা চেয়ারম্যান না থাকলেও বিয়ানীবাজার পৌরসভার মেয়র ফারুকুল হক ও গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল রয়েছেন।
এছাড়া দুই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ বেশিরভাগ দায়িত্বশীল নেতারা তাঁর সাথে রয়েছেন। বর্তমানে প্রচার-প্রচারণা, সভা-সমাবেশ কিংবা গণসংযোগে এ তিন প্রার্থীর মধ্যে কেউ কারো চেয়ে পিছিয়ে নেই। ভোটের হিসেবেও যুদ্ধ চলছে নৌকা-ঈগল-সোনালী আঁশ এর মধ্যে।
এ আসনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের মো. সেলিম উদ্দিন প্রচারণা চালাচ্ছেন। নির্বাচনী এলাকায় তাঁর উল্লেখযোগ্য পোস্টার, ব্যানার রয়েছে। বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের ছড়ি প্রতীকের আতাউর রহমান আতা ও ইসলামী ঐক্যজোটের মিনার প্রতীকের প্রার্থী সাদিকুর রহমান এর তেমন কোন প্রচারণা চোখে পড়েনি।
গত রোববার রাতে এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তৃণমূল বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শমসের মুবিন চৌধুরী বলেন, ‘এখনো নির্বাচনী পরিবেশ খুব ভালো। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাকে সহযোগিতা করছেন। একজন খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভোটাররা আমাকে কাছে টেনে নিচ্ছেন। আমি আশাবাদী, সুষ্ঠু ভোট হলে জয়ী হবো।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার হোসেন সমর্থক বিয়ানীবাজার উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মো. আব্দুল বারী বলেন, আমরা ঈগল প্রতীকে অবিশ্বাস্য সাড়া পাচ্ছি। সাধারণ মানুষের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস বলেই দিচ্ছে সরওয়ার হোসেন বিজয়ী হবেন। কারণ, তিনি দীর্ঘ একযুগ থেকে মানুষের সাথে সুসম্পর্ক রেখে চলেছেন।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান বলেন, এ আসনে আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক রয়েছে। এছাড়া, স্বচ্ছ রাজনীতির পথিকৃৎ নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি’র সাথে দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ রয়েছেন। তিনি সকল প্রপাগা-া পরিহার করে প্রধানমন্ত্রীকে নৌকা’র বিজয় উপহার দিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
সিলেট-৬ আসনে আলোচিত তিন প্রার্থীর মধ্যে শেষ পর্যন্ত কে পরবেন জয়ের মালা? ৭ জানুয়ারি ভোটের আগে তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারবেন না। এমনকি শেষ মুহূর্তে তাদের কোন একজন মূল লড়াই থেকে ছিটকে পড়তে পারেন-এমনটাও মনে করছেন কোন কোন ভোটার।