সিলেট বিভাগের ১০ ভোটকেন্দ্রের সামনে অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ৪:১৭:২৪ অপরাহ্ন
ডাক ডেস্ক: সিলেট বিভাগের অন্তত ১০টি ভোটকেন্দ্রের সামনে অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তবে আগুনে কোনো কেন্দ্রের তেমন ক্ষতি হয়নি। গতকাল শনিবার রাত আটটার পর থেকে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে এসব ঘটনা ঘটে। এছাড়া, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে আরো চারটি ভোটকেন্দ্রে আগুন লাগার সংবাদ পাঠিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধিরা।
স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সিলাম, সদর উপজেলার টুকেরবাজার, টুলটিকর এলাকা, নগরের টিবিগেট, ইলেকট্রিক সাপ্লাই এলাকাসহ অন্তত ছয়টি স্থানের ভোটকেন্দ্রের সামনে অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মো. আজবাহার আলী শেখ বলেন, সিলেট নগর ও সদর উপজেলার কয়েকটি স্থানে ভোটকেন্দ্রের সামনে অগ্নিসংযোগ ও বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নাশকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে দুর্বৃত্তরা। তবে সেসব মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারি আছে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোটকেন্দ্রগুলোর সামনে হঠাৎ করে দুর্বৃত্তরা এসে টায়ার, কাঠ কিংবা বিভিন্নভাবে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি একাধিক ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। এতে আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। দুর্বৃত্তরা আগুন দেওয়ার সময় ‘ভোট চোর ভোট চোর, এই সরকার ভোট চোর’, ‘প্রহসনের ভোট মানি না, মানব না’ বলে স্লোগান দেয়।
রাত সোয়া নয়টার দিকে সিলেটের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানান, সিলেট সদর উপজেলার সিরাজুল ইসলাম আলিম মাদ্রাসা ও হাজী আবদুস সাত্তার উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে দুর্বৃত্তরা আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে এতে ভোটকেন্দ্রের কোনো ক্ষতি হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জেলাজুড়ে কড়া নজরদারি রাখছে। শান্তিপূর্ণভাবে ভোট শেষ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে ককটেল নয়, দুর্বৃত্তরা পটকার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এদিকে, গতকাল শনিবার মধ্যনগর উপজেলার গড়াকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ভোর ৪টায় মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। ওই ভোট কেন্দ্রটি মধ্যনগর থানা থেকে ১৫ কি.মি. দূরত্বে অবস্থিত। যাতায়াত ব্যবস্থা হিসেবে শুধুমাত্র মোটরসাইকেল ও নৌকা ব্যবহৃত হয়। ওই ভোটকেন্দ্রটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চান মিয়া জানান, আগুনে প্রাক প্রাথমিক কক্ষে থাকা কার্পেট আংশিক পুড়ে গেছে। আগুনের ধোঁয়ার কালো হয়ে গেছে দরজা জানালা। এছাড়া বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি। মধ্যনগর থানার অফিসার ইনচার্জ এমরান হোসেন জানান, গড়াকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রটি দুর্গম অঞ্চলে অবস্থিত। যেতে বেশ সময় লাগে। ওই কেন্দ্রে পাহারাদার ছিল। গত শুক্রবার রাতে ওই কেন্দ্রের পাহারাদার তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লে দুর্বৃত্তরা পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে। আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগেই গ্রামের লোকজন নিভিয়ে ফেলেন।
ভোটের মাত্র একদিন আগে গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে চুনারুঘাট পৌর এলাকার ধলাইপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে চুনারুঘাট ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলিমা রায়হান জানান, অগ্নিকান্ডের সময় ওই কেন্দ্রে ভোটের কোনো সরঞ্জাম পৌঁছায়নি।
এদিকে, গত শুক্রবার রাত ৮টার দিকে মৌলভীবাজার শহরতলীর সাবিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ৮টার দিকে দুটি মোটরসাইকেলে চারজন যুবক এসে স্কুলের ভিতরে প্লাস্টিকের বোতলে করে স্কুলের দরজায় কেরোসিন ছুঁড়ে মারে। এসময় দরজায় আগুন লাগলে এলাকাবাসী তাৎক্ষণিক আগুন নিভিয়ে ফেলে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসরিন চৌধুরী ও সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ কে এম নজরুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি কে এম নজরুল জানান, ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে বলেও জানান তিনি।
কমলগঞ্জ থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে সরিষকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে পেট্রোল ঢেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। তবে, এতে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। স্কুলের দরজা ও জানালায় আগুন লাগার আগেই এলাকাবাসী তাৎক্ষণিক আগুন নিভিয়ে ফেলে। কারা আগুন দিয়েছে তা জানা যায়নি। কমলগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুর রাজ্জাক জানান, আগুন লাগার খবর শুনে আমরা দ্রুত এসে পৌঁছাই। ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করা হচ্ছে। খবর পেয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রইছ আল রেজুয়ানসহ পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এদিকে, ধর্মপাশা (সুনামগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ধর্মপাশায় তিনটি স্থানে খড়ের গাদায় আগুন দিয়ে নাশকতার চেষ্টা করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাত এগারোটার দিকে ধর্মপাশা উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের ধর্মপাশা-বাদশাগঞ্জ সড়কের পাশে মোদাহরপুর ও আহমদপুর গ্রামে আলাদা আলাদা জায়গায় তিনটি খড়ের গাদায় আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এসময় স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আগুন লাগার খবর পেয়ে ধর্মপাশা ফায়ার সার্ভিসের দমকল বাহিনীর দুটি ইউনিট ও স্থানীয় এলাকাবাসী আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।