বিদায়ী বছরে সিলেট বিভাগে ১৫৯ জন খুন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ৩:১০:৪০ অপরাহ্ন
কাউসার চৌধুরী :
সিলেট বিভাগে খুনোখুনি বেড়েছে। বেড়েছে খুনের সংখ্যাও। সদ্য বিদায় নেয়া ২০২৩ সালে খুন হয়েছেন ১৫৯ ব্যক্তি। এ সংখ্যা আগের বছরের চেয়ে ৫৫ জন বেশি। ২০২২ সালে খুন হন ১০৪ জন । এবার চার জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি খুন হয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলায়। আগের বার এ জেলায় ২৬ জুন খুন হলেও গেল বছর খুন হয়েছেন ৫৬ জন। আগের বছরের তুলনায় এ জেলায় গেলবার ৩০টি খুন বেশি হয়েছে। আর সিলেট জেলায় গেলবার খুন হয়েছেন ৬০ জন। আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ৫১। একইভাবে হবিগঞ্জ জেলায় আগের বছর ১৮ জন খুন হলেও গেল বছর খুন হন ২৪ জন। মৌলভীবাজার জেলায় গেল বছর ১৯ জন খুন হন। আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ৯ জন।
দৈনিক সিলেটের ডাক-এ প্রকাশিত সংবাদ পর্যালোচনা করে গেল বছরের খুনোখুনির এই চিত্র উঠে এসেছে।
ব্যক্তিজীবনে সহনশীলতার অভাব, পারিবারিক বন্ধনে ফাটল আর প্রযুক্তির সহজ লভ্যতায় সামাজিক পরিবর্তনের ফলে খুনোখুনি বেড়েছে বলে মনে করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আল আমিন। খুনোখুনি বেড়ে যাওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগও প্রকাশ করেন তিনি। সমাজকর্মের এই গবেষকের মতে, সমাজ ও পরিবার জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। মানুষের আর্থিক পরিবর্তনের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক পরিবর্তনও এসেছে। মানুষের সাথে মানুষের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। ফলে আমরা ভোগবাদীতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। আগে যখন যৌথ পরিবার ছিল, তখন আমরা সুখে-শান্তিতে ছিলাম। এখন মানুষ আধুনিক সময়ে এসে আপেক্ষিক যন্ত্রণায় ভুগছেন। ঘাটতি দেখা দিয়েছে শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসায়। দ্বন্দ¦-সংঘাত, সন্দেহ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবেগ-অনুভূতি কমে গেছে। মানুষ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। প্রযুক্তিগত সুবিধার কারণে মানুষ নানা অপরাধে জড়াচ্ছে বলে হানাহানির ঘটনাও বেড়ে গেছে। পিতা-পুত্র, ভাই-বোনের সম্পর্ক আর আগের মতো নেই। রক্তের এই সম্পর্কেও ফাটল ধরেছে। মূলত হতাশা থেকেই এসব হচ্ছে।
তিনি বলেন, চাহিদা সীমিত করতে পারলেই সমাজে অপরাধ অনেকাংশে কমে আসবে।
প্রতিযোগিতা বাদ দিয়ে পারিবারিক বন্ধনকে শক্তিশালী করতে হবে। ছোট বেলা থেকেই শেখাতে হবে ধর্মীয় অনুশাসন। শেখাতে হবে সামাজিক বন্ধন। পিতা-মাতাকে সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে, দিতে হবে নৈতিক শিক্ষাও।
সিলেটে সদ্য বিদায়ী বছরে যত খুন
সদ্য বিদায় নেয়া বছর ২০২৩ সালের প্রথম দিনেই কোম্পানীগঞ্জের উৎমা সীমান্তে খাসিয়ার গুলিতে জৈন উদ্দিন (১৮) খুন হন। আর পরদিন কানাইঘাটের চতুলবাজারে জয়নাল আবেদীন (৬০), হবিগঞ্জে ১০ জানুয়ারি তিশা আক্তার (৯), তাহিরপুরে ১৪ জানুয়ারি বিএসএফর গুলিতে দেলোয়ার হোসেন, সুনামগঞ্জ পৌর এলাকায় ১৮ জানুয়ারি প্রতিবন্ধী ফারজানা আক্তার (২২), তাহিরপুরে ১৯ জানুয়ারি নুরুল আমিন (৬০), ওসমানী হাসপাতালে ২৫ জানুয়ারি বাবলু মিয়া (৩২) ও বানিয়াচংয়ে ২৬ জানুয়ারি বিলাল আহমদ (৯) খুন হয়।
কুলাউড়ায় ৬ ফেব্রুয়ারি অজ্ঞাতনামা এক চোর খুন হয় আর মৌলভীবাজারে ১০ ফেব্রুয়ারি উদ্ধার করা হয় এক অজ্ঞাত নারীর গলিত লাশ। ওই দিন ধর্মপাশায় কবির মিয়া (৬০) এবং সিলেট নগরীর শেখঘাটে ১২ ফেব্রুয়ারি খুন হন টিকটকার তরুণী সোনিয়া আক্তার (২৩)। দক্ষিণসুরমা থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি দুবাই প্রবাসী সাজ্জাদ আলী (৩৫) ও একই দিন নগরীর করেরপাড়ায় খুন হন আব্দুর রহমান।
ছাতকে ১ মার্চ সাইফুল ইসলাম ও একই দিন নগরীর বন্দরবাজারে আমিরুল ইসলাম (৩০), কানাইঘাটে ৬ মার্চ আব্দুল আলী (৬৫) ও গোলাপগঞ্জে ৮ মার্চ শামসুল ইসলাম খুন হন। ওসমানীনগরের তাজপুর বাজারে ৯ মার্চ স্কুল ছাত্রী দিপা রাণী সিংহ (১৪) ও বড়লেখায় দিনমজুর জাবের আহমদ (২২) খুন হন। দোয়ারাবাজারে ১০ মার্চ আব্দুল খালিক (৩৫), তাহিরপুরে ১৪ মার্চ আব্দুল হাই (৭০), হবিগঞ্জ জেলা সদরে ১৮ মার্চ খুন হন গৃহবধূ ফরিদা বেগম (৪৪)। সিলেট নগরীর শাহপরান এলাকায় ১৯ মার্চ আশিক মিয়া (৩৪), বালাগঞ্জে ২২ মার্চ স্কুল ছাত্রী সুমাইয়া বেগম (১৫), চুনারুঘাটের ২৩ মার্চ গৃহবধূ জেসমিন আক্তার (৩৫) ও তার পুত্র ইয়াসিন মিয়া (৯), কোম্পানীগঞ্জে ২৫ মার্চ গৃহবধূ হাফছা বেগম (১৯) ও একই দিনে বানিয়াচংয়ে বিষ্ণু সরকার (২২), শায়েস্তাগঞ্জে ২৬ মার্চ আয়াত আলী (২০) ও তাহিরপুরে খোরশেদ আলম (৩৮), ছাতকে ২৮ মার্চ লায়েক মিয়া একই দিন সুনামগঞ্জে শুক্কুর আলী (৪৫), জকিগঞ্জে ৩০ মার্চ সোহেল আহমদ (১৬) ও একই দিনে মৌলভীবাজারে রাজু মিয়াকে (৩০) হত্যা করা হয়।
জৈন্তাপুরে ১ এপ্রিল সমছু উদ্দিন (৪২), সুনামগঞ্জে ৬ এপ্রিল ফারুক মিয়া (৩২) ওই দিনে জৈন্তাপুরে মোহাম্মদ আলী (৩৫) ও রাজনগরে বৃদ্ধা আখলিবুন বেগম (৬০) খুন হন। বানিয়াচংয়ে ৮ এপ্রিল জাহাঙ্গীর মিয়া (৩৫), ১০ এপ্রিল গোলাপগঞ্জে আরিফা বেগম (৭), দিরাইয়ে আমির হামজা (৫) ও আজমিরীগঞ্জে ফয়েজ মিয়া (২০), বিয়ানীবাজারে ১২ এপ্রিল গৃহবধূ স্বপ্নারা বেগম, কোম্পানীগঞ্জে ১৩ এপ্রিল নুর উদ্দিন (২৬) ও বানিয়াচংয়ে সুব্রত দাস (৩০) ও ছাতকে মকবুল আলী খুন হন। আর ওসমানীনগরে ১৭ এপ্রিল অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার করা হয়। জাফলংয়ে ১৭ এপ্রিল আলে ইমরান (৩৩), ছাতকে ২২ এপ্রিল আব্দুল আলীম (৩০), দোয়ারাবাজারে ২৩ এপ্রিল আবুল কাশেম (৩০) ও মাধবপুরে ইরফান আলী, ২৪ এপ্রিল মাধবপুরে মিনারা বেগম (৪৭), তাহিরপুরে সাকিব রহমান (২৫) ও দোয়ারাবাজারে তাজ্জুদ আলী (৪০), লাখাইয়ে ২৬ এপ্রিল জহিরুল ইসলাম, জগন্নাথপুরে ২৯ এপ্রিল সৈয়দ জামাল মিয়া (৪৫), কমলগঞ্জে ৩০ এপ্রিল রবি ঘাষীকে (৫৫) হত্যা করা হয়।
ওসমানীনগরে ৪ মে আনহার আলী (৪২), ছাতকে ৫ মে আব্দুস সালাম খান (৩৫) ও ওসমানীনগরে ব্রজেন্দ্র শব্দ কর, কুলাউড়ায় ৯ মে সুনীল গোয়ালা, গোয়াইনঘাটে ২২ মে জিন্দার আলী (৪০), পরদিন ২৩ মে বানিয়াচংয়ে মঈনুল ইসলাম (২২), ৩০ মে জামালগঞ্জে নুর মিয়া (৪০), ছাতকে জাহির মিয়া (৩৫), গোলাপগঞ্জে সিরাজ উদ্দিন (৭৫) খুন হন। এর ঠিক তিন দিন আগে জামালগঞ্জে প্রকাশ্যে আরেক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়।
সিলেট নগরের ধোপাদিঘীরপাড়ে পহেলা জুন গোবিন্দ দাস খুন হন আর পরদিন দক্ষিণ সুরমায় উদ্ধার হয় এক ব্যক্তির গলিত লাশ। বিয়ানীবাজারে ৩ জুন জয়নুল ইসলাম (৩৮), একই দিন জৈন্তাপুরে সাধু পাত্র (৬০) ও জগন্নাথপুরে মোক্তার মিয়া (১৫) খুন হন।
ওসমানী হাসপাতালে ৯ জুন নয়ন মিয়া (২০), জগন্নাথপুরে ১১ জুন জুয়েল মিয়া (২৫), বালাগঞ্জে ১২ জুন আতিকুর রহমান (২০), বানিয়াচংয়ে ২৬ জুন রাবেয়া খাতুন (৫৪), পরদিন শাল্লায় হাবিবুর রহমান (৫৪) ও হেলাল মিয়া (২৫), একই দিন দক্ষিণ সুরমায় দুলু মিয়া (৪৮), জুড়ীতে আব্দুল হামিদ কালা এবং ২৭ জুন ফেঞ্চুগঞ্জে লিটন মিয়াকে (৩০) হত্যা করা হয়।
চুনারুঘাটে ৯ জুলাই জ্যোৎ¯œা আক্তার (২২), শান্তিগঞ্জে বাবুল মিয়া (৫৮), নুরুল ইসলাম (৪২), শাহজাহান (৩৬) ও মুখলেসুর রহমান (৬০), বিয়ানীবাজারে ১২ জুলাই ফাহমিদা আক্তার (২৪), মাধবপুরে ১৮ জুলাই বাবুল মিয়া (৪০), জৈন্তাপুরে ২০ জুলাই রুবেল হোসেন (৩০), নগরীর মেজরটিলায় ২১ জুলাই সিমলা রাণী নাথ (২১), শান্তিগঞ্জে ২২ জুলাই সাজনা বেগম (১৬), আজমিরীগঞ্জে ২৩ জুলাই সেলিম মিয়া (৩০) ও কুলাউড়ায় রুবেল আহমদকে হত্যা করা হয়। আর ২৫ জুলাই জগন্নাথপুরে উদ্ধার হয় অজ্ঞাত যুবক এবং কুলাউড়ায় অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই দিন শ্রীমঙ্গলে খুন হন শান্ত দেবনাথ (১৯)। গোয়াইনঘাটে ২৮ জুন সালেহ আহমদ (২৫) ও লাক্কাতুরায় ৩১ জুন আতাউর রহমান (৩৮) খুন হন।
দিরাইয়ে ২ আগস্ট আবুল হোসেন (৩০) পরদিন জকিগঞ্জে তামান্না আক্তার তানিয়া (১৫), কোম্পানীগঞ্জে ৩ আগস্ট ছালেখা বেগম (৫২) ও একই দিনে গোয়াইনঘাটে আয়শা সিদ্দিকা জুলি (৩০), চুনারুঘাটে ৮ আগস্ট শাপলা আক্তার (৩০),বালাগঞ্জে ৯ আগস্ট সোহেল মিয়া (৩০), রাজনগরে ১৬ আগস্ট আবির হোসেন জয় (১২), ছাতকে ১৮ আগস্ট ইছকন আলী (৬০),কানাইঘাটে ২২ আগস্ট কামিল আহমদ (৩৫), গোয়াইনঘাটে ২৪ আগস্ট রিপা বেগম (২৩) ও একই দিন শ্রীমঙ্গলে শরীফুল ইসলাম (৪০) ও চুনারুঘাটে ২৬ আগস্ট খুন হন আকলিমা বেগম (৩৫)।
ছাতকে ২ সেপ্টেম্বর মাসুম মিয়া (৩৭) ও একই উপজেলায় ৫ সেপ্টেম্বর সাদির আহমদ (৩০), বড়লেখায় ১০ সেপ্টেম্বর রিয়াজ উদ্দিনকে খুন (২৫) ও শান্তিগঞ্জে অজ্ঞাত কিশোরের লাশ উদ্ধার হয়। জগন্নাথপুরে ১১ সেপ্টেম্বর রেজাউল কবির (৩৫), দিরাইয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর ইমরান আহমদ (১২) ও বড়লেখায় ওইদিন বাবুল চাষা (৫৫), দক্ষিণ সুরমায় ১৬ সেপ্টেম্বর সাদির আহমদ (২৮) ও মাধবপুরে একই দিনে সঞ্চিতা সাওতাল খুন হন। ছাতকে ২১ সেপ্টেম্বর উদ্ধার হয় এক অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ। জকিগঞ্জে ২২ সেপ্টেম্বর আবুল হোসেন লিচু (৪০), সিলেট নগরে ২৫ সেপ্টেম্বর আদিল আহমদ (২৯) ও একই দিনে সিলেট নগরীতে জেসমিন আক্তার (২২) খুন হন। জকিগঞ্জে ২৯ সেপ্টেম্বর উদ্ধার করা হয় অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ। কুলাউড়ায় ৪ অক্টোবর ফেরদাউস (১৪), ছাতকে ৭ অক্টোবর ইভা বেগম (৯), গোলাপগঞ্জে ২০ অক্টোবর তাজেল আহমদ (১৭) ও দিরাইয়ে ২৫ অক্টোবর খুন হন দুলাল মিয়া (৪৫)।
শ্রীমঙ্গলে ৩ নভেম্বর দিলীপ দেব, গোয়াইনঘাটে ৭ নভেম্বর নাজিম উদ্দিন (২০) একই দিন মৌলভীবাজারে রেজাউল করিম নাঈম (২১), জকিগঞ্জে ১৯ নভেম্বর আব্দুল হামিদ (৩১), সিলেট নগরীতে ২১ নভেম্বর আরিফ আহমদ (১৯) ও সীতেশ চন্দ্র গোপ এবং জৈন্তাপুরে ২৫ নভেম্বর হাফিজ মাওলানা আব্দুস শুকুরকে (৪৩) হত্যা করা হয়।
কোম্পানীগঞ্জে ৩ ডিসেম্বর আব্দুল্লাহ (৫০), দক্ষিণ সুরমায় ৫ ডিসেম্বর শায়েদুল হক চৌধুরী (৪৮), শ্রীমঙ্গলে ৬ ডিসেম্বর ইন্তাজ আলী মীর (৫২), দিরাইয়ে ৯ ডিসেম্বর সুজিত বর্মন (৩০), সিলেট নগরীতে ১২ ডিসেম্বর রনজিত দাস (৫৮), নবীগঞ্জে ১৯ ডিসেম্বর শৈলেশ বর্মণ (৭০) ও একই দিনে বিশম্ভরপুরে খুন হন নাজিরা আক্তার (২৭) আর শান্তিগঞ্জে উদ্ধার করা হয় অজ্ঞাত যুবকের লাশ। শান্তিগঞ্জে ২১ ডিসেম্বর জুনু মিয়া (৩২), বিশ্বনাথে ২৩ ডিসেম্বর আমিন মিয়া সিয়াম (১৬), বাহুবলে ২৬ ডিসেম্বর অজ্ঞাত নারীকে আগুনে পুড়িয়ে এবং ২৯ ডিসেম্বর গোয়াইনঘাটে কাওছার আহমদকে (২৬) হত্যা করা হয়।