শীতে জবুথবু জনজীবন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:৩৭:৩৬ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : মাঘ মাস শুরুর আগেই সিলেটে জেঁকে বসেছে শীত। কনকনে বাতাসের সঙ্গে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। গত দুই-তিন দিন ধরে দেখা নেই সূর্যের। কুয়াশায় ঢাকা ছিলো পুরো শহর। একই অবস্থা বিভিন্ন উপজেলাতে। গ্রামীণ মানুষ খড়কুটো জড়ো করে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
পৌষের শেষ দিকে এসে সিলেটে বেড়েই চলেছে শীতের তীব্রতা। পরশু দিনের মতো গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে ছিলো পুরো শহর কুয়াশার চাদরে ঢাকা। সাথে ছিলো হিমেল হাওয়ার তীব্রতা। দুপুরে কিছু সময়ের জন্য মৃদু রোদ উকি দিলেও বাতাসের দাপট কমেনি। এতে জবুথবু জনজীবনে নেমে আসে স্থবিরতা। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার পর কুয়াশা বাড়তে থাকে।
এদিকে, প্রবল শীতে সিলেটে গরম কাপড়ের কদর বেড়েছে। ছুটির দিন বিপণীবিতানগুলো বন্ধ থাকায় ফুটপাতে গরম কাপড়ের দোকানে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সন্ধ্যার পর জিন্দাবাজার থেকে বন্দরবাজারের ফুটপাত ছিলো মানুষের পদচারণায় মুখর।
তীব্র শীতে বেশি দুরবস্থায় পড়েছে হতদরিদ্ররা। ছিন্নমূল মানুষদের ফুটপাতে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতেও দেখা যায়। শীতে শিশু ও বৃদ্ধ মানুষের অবস্থা বেশি খারাপ। শীতজনিত নানা রোগব্যাধি বেড়ে গেছে। শিশুরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এ সংক্রান্ত রোগীর ভিড় বাড়ছে।
শহরের মতো বিভিন্ন উপজেলার গ্রামীণ জনপদেও শীত হানা দিয়েছে। হাওরপাড়ের মানুষজন খড়কুটো জড়ো করে আগুন জ্বালিয়ে শরীরে উষ্ণতার পরশ নিচ্ছেন। ঘন কুয়াশায় পথ চলতে বিপাকে পড়ছেন পরিবহন চালকরা।
তবে আগামী তিন দিনে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হতে পারে বলে আশার বাণী শুনিয়েছে সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এদিকে গতকাল শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কিশোরগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গায়। সকাল ৯টায় কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা নিকলীতে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এদিকে একই সময়ে চুয়াডাঙ্গায়ও ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা : (মৌলভীবাজার) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, দেশের চা বাগান অধ্যুষিত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে গত কয়েকদিন ধরে চলছে শীতের দাপট। তাপমাত্রার পারদ যত কমছে, ততই শীতের তীব্রতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এ উপজেলা। ঘন কুয়াশার সঙ্গে হিম বাতাস থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। এতে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ।
গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। কয়েকদিন থেকে সকাল গড়িয়ে দুপুর হলেও সূর্যের দেখা মিলছে কম। চলমান কনকনে এ ঠান্ডায় বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ। বাড়ছে শীতজনিত রোগবালাইও। আবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সূর্যের তেজ বাড়লে কিছুটা স্বস্তি মেলে। তবে রাতের বেলায় শীতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বৃদ্ধ ও শিশুদের। ফলে হাড় কাঁপানো শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছেন মানুষজন। ঘন কুয়াশা, প্রচ- ঠান্ডা ও মৃদু বাতাসে গরম কাপড়ের অভাবে হাওর পাড়ের মৎস্যজীবী, চা শ্রমিক, নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, তীব্র শীতে শীতকালীন ডায়রিয়া, ঠান্ডা কাশি ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিনই জেলার ৭ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশু ও বৃদ্ধরা এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন।
শাল্লা উপজেলা : হাবিবুর রহমান-হাবিব, শাল্লা (সুনামগঞ্জ) থেকে জানান, শাল্লা উপজেলার হাওরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে প্রচন্ড শীত পড়েছে। ঘন কুয়াশায় সারাদিনেও দেখা মেলেনি সূর্যের। হাড় কাঁপানো শীতে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। গ্রামের লোকজন খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীতে উষ্ণতা খুঁজছেন। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বৃদ্ধ-শিশুসহ সাধারণ মানুষ।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে দেখা গেছে, দিরাই-শাল্লা আঞ্চলিক সড়কে ঘন কুয়াশায় যানচলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে।
সূর্যের দেখা না মেলায় আর হিমেল বাতাসে হাওরের গ্রামগুলোতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে মানুষের জীবন। কনকনে শীতে গরম কাপড়েও ঠান্ড আটকাতে পারছেনা বলে জানান স্থানীয়রা। ঘর থেকে বের হলেই শীত কাটার মতো শরীরে বিধে বলে জানান তারা। শীতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন, নিম্ন আয়ের খেটে-খাওয়া মানুষ। গরম কাপড়ের অভাবে শীতে কাবু হয়ে পড়েছেন দরিদ্র পরিবারের অনেক মানুষ। গ্রামের প্রবীণরা ঠান্ডায় বেশি কষ্ট পাচ্ছেন। অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। আগুনের চারপাশে বসে তারা তাপ পোহাতে থাকে। দরিদ্র লোকজন শীত উপেক্ষা করেই কাজে যেতে হচ্ছে। কোন উপায় না থাকায় শীতের কুয়াশা ভেদ করে গৃহপালিত প্রাণীদের নিয়ে বের হচ্ছেন গ্রামের মানুষ। এদিকে, তীব্র শীতে ঠান্ডাজনিত রোগে বেশী আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু-বৃদ্ধ।
শাল্লা উপজেলা সদরস্থ ঘুঙ্গিয়ারগাঁও বাজারের নাঈম ষ্টোর এন্ড কফি হাউজের পরিচালক রিয়ার পারভেজ নাঈম বলেন, ‘রাত থেকে ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে সবকিছু। আজ হাওরের বুকে কোথাও দেখা মেলেনি সূর্যের।’
শাল্লা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. যশবন্ত ভট্টাচার্য বলেন, হঠাৎ করে শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় জ্বর-সর্দি, কাশি, এলার্জি, শাসকষ্টসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ বৃদ্ধি পেতে পারে। এসব রোগ থেকে রক্ষা পেতে আমাদেরকে সচেতন থাকতে হবে। শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মঞ্জুর আহসান জিসান বলেন, এলাকায় শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে গরম কাপড় পাওয়ার সাথে সাথে শীতে কষ্টে থাকা অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণ করা হবে।