সিলেটের স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশনসমূহে ৬দিন ধরে আমদানি বন্ধ
শুল্ক বৃদ্ধিতে হতাশায় ব্যবসায়ীরা, বেকার হাজারো শ্রমিক
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:২৯:৫১ অপরাহ্ন
ডাক ডেস্ক : পাঁচ মাসের মাথায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আবারও শুল্ক বৃদ্ধি করায় সিলেটের স্থলবন্দর ও শুল্কস্টেশন গুলোতে চুনাপাথর ও পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। ভারত থেকে আমদানিকৃত পাথরের উপর এনবিআর এর অতিরিক্ত শুল্কায়ন মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে তামাবিল স্থলবন্দর সহ সিলেট অঞ্চলের সবক’টি স্থলবন্দর দিয়ে পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন সিলেটের আমদানিকারকরা। গতকাল শনিবার সকালে তামাবিল স্থলবন্দরের শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
একই ইস্যুতে গত ১৬ আগস্ট থেকে এক সপ্তাহ চেলা স্টেশন দিয়ে চুনাপাথর আমদানি বন্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা।
তামাবিল : তামাবিল ডাউকি সীমান্ত থেকে আমাদের জৈন্তাপুর সংবাদদাতা জানান, এনবিআর কর্তৃক শুল্কায়ন মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের কারণে তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় পাথর আমদানি বন্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে মেঘালয়ের ডাউকি এলাকায় বিপুল সংখ্যক পাথর বোঝাই ভারতীয় ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় আটকা পড়ে আছে। সিলেট অঞ্চলের স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন আনুমানিক ৫০ হাজার মেট্রিক টন পাথর আমদানি হয়ে থাকে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। এতে করে প্রতিদিন সরকার অন্তত ১ কোটি টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
তামাবিল স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানীকারকরা গত ৮ জানুয়ারি থেকে ভারতীয় পাথর আমদানি বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন। যার ফলে গত ৬ দিন থেকে তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে পাথর বোঝাই কোন ভারতীয় ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করেনি।
এতে উভয় দেশের সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার শ্রমিক। স্থলবন্দরে ভারতীয় পাথর আমদানি প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখা ও পুনরায় ব্যবসা চালু করতে গতকাল শনিবার সকালে তামাবিল স্থলবন্দরের শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
শ্রমিকদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেন তামাবিল চুনাপাথর, পাথর ও কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি এম লিয়াকত আলী, সহ-সভাপতি মো. জালাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক সিলেট চেম্বার পরিচালক সরোয়ার হোসেন (ছেদু), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক, সাংগঠনিক সম্পাদক রুবেল আহমদ, সদস্য জাকির হোসেন (আর্মি), আব্দুল করিম রাসেল, ইসমাইল হোসাইন, সৈয়দ শামীম আহমদ।
এ বিষয়ে তামাবিল চুনাপাথর ও কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি এম লিয়াকত আলী জানান, এনবিআর ভারত থেকে পাথর ও চুনাপাথর আমদানির উপর এসেসমেন্ট ভ্যালু প্রতি মেট্রিক টনে অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধি করে। এই বাড়তি শুল্ক দিয়ে পণ্য আমদানি করতে হলে আমদানিকারকরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বেন। তাই তামাবিল সহ সিলেটের সবক’টি বন্দর ও শুল্ক স্টেশন দিয়ে পাথর ও চুনাপাথর আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে।
এনবিআর কর্তৃক সিলেট অঞ্চলের স্থলবন্দরগুলোতে ভারত থেকে আমদানি করা বোল্ডার স্টোন প্রতি মেট্রিক টন ১৩ ডলার, স্টোন চিপস প্রতি মেট্রিক টন ১৪ ডলার এবং লাইমস্টোন প্রতি মেট্রিক টন ১৩ দশমিক ৫০ ডলার নতুন করে অতিরিক্ত শুল্কায়ন মূল্যবৃদ্ধি সংক্রান্ত একটি পত্র সিলেট কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কর্তৃক গত ৪ জানুয়ারি প্রেরণ করে শুল্কায়ন মূল্য বৃদ্ধির কথা জানান। এই পত্রে ৮ জানুয়ারি থেকে নতুন এই হারে শুল্কায়ন মূল্য কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।
সিলেট অঞ্চলের স্থলবন্দর ব্যবসা পরিচালনা সংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সহ-সভাপতি মো. এমদাদ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, তামাবিল, সুতারকান্দি (শেওলা), ভোলাগঞ্জ, জকিগঞ্জ, জুড়ি, চাতলাপুর, ছাতক, বড়ছড়া, বাল্লা সীমান্তের স্থল ও শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারতীয় পাথর আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে বোল্ডার স্টোন, চিপস স্টোন, লাইম স্টোন পাথর ছাড়া সিলেট অঞ্চলের স্থলশুল্ক বন্দর গুলোতে অন্যান্য পণ্য আমদানি-রপ্তানী প্রক্রিয়া কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।
দোয়ারাবাজার : দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, পাঁচ মাসের মাথায় এনবিআর আবারও শুল্ক বৃদ্ধি করায় চুনাপাথর আমদানি বন্ধ থাকার ফলে হতাশায় ভুগছেন ছাতক-দোয়ারাবাজারের ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি বেকার হয়ে পড়েছেন বিপুল সংখ্যক পাথর ও বারকি শ্রমিক।
চেলা এলসি স্টেশনে নৌকা দিয়ে চুনাপাথর পরিবহনকারি আব্দুল মোতালিব জানান, ‘বুধবার থেকে এলসি স্টেশন বন্ধ থাকায় আমাদের কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে ছাতক (চেলা-ইছামতী) লাইমস্টোন ইমপোর্টার্স অ্যান্ড সাপ্লায়ার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি সেলিম আহমদ চৌধুরী জানান, ‘এনবিআর ভারত থেকে পাথর ও চুনাপাথর আমদানির ওপর এসেসমেন্ট ভ্যালু প্রতি টনে অতিরিক্ত শুল্ক বৃদ্ধি করে। ওই বাড়তি শুল্ক দিয়ে পাথর আমদানি করতে হলে আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। তাই শুল্ক কমানোর দাবিতে সম্প্রতি চুনাপাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তা বহাল থাকবে।’
কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট সিলেটের কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হক জানান, ‘২০০০ সালের শুল্ক বিধিমালা অনুসারে পাথরের শুল্কমূল্য ধরা হয়। সব স্টেশনেই পাথরের মূল্য ১৩, ১৪, ১৫ ডলার নির্ধারিত আছে।
শুল্ক কমানোর প্রতিবাদে ব্যবসায়ীদের আমদানি বন্ধের ব্যাপারে কাস্টমস কমিশনার জানান, ‘তারা বন্ধ করলে আমাদের কিছু করার নেই। আইনগতভাবে ১৩ ডলারের নিচে নামার কোনো উপায় নেই। এটা আমি আমদানিকারক এসোসিয়েশনের সবাইকে বুঝিয়েছি।’