সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে বন্ধ বিআরটিসি বাস সার্ভিস : ক্ষুব্ধ যাত্রীরা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:২১:০৬ অপরাহ্ন
আনাস হাবিব কলিন্স
সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে বিআরটিসি বাস সার্ভিস বন্ধ থাকায় ক্ষুব্ধ যাত্রীরা। স্থানীয় বাসিন্দারা অবিলম্বে এ সার্ভিস চালুর দাবি জানিয়ে বলেছেন, সেবার প্রতিযোগিতা নিশ্চিতে এ সেবা চালু করা জরুরি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিআরটিসি বলছে, আগামী ৩/৪ মাসের মধ্যে তারা এ রুটে বাস সার্ভিস চালুর পরিকল্পনা নিয়েছেন।
ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সুনামগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে বিআরটিসি বাস সার্ভিস শুরু হয়। তবে, গত বছরের শুরুতেই সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে বন্ধ হয়ে পড়ে এ পরিবহন সেবা।
বিআরটিসির সাথে জড়িতরা বলছেন, সিলেট-সুনামগঞ্জ রুটে সার্ভিস চালুর শুরুতেই তারা বৈরী পরিবেশের মুখোমুখি হন। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের আপত্তি আর ধর্মঘটের মধ্যেই শুরু হয় তাদের যাত্রা। এক পর্যায়ে মহামারী করোনাসহ নানান জটিলতায় লোকসান দিতে হয়েছে তাদের। পরবর্তীতে বাধ্য হয়ে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে বিআরটিসি বাস সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়।
এ বিষয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা জানালেন, প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বিআরটিসি তাদের বাস সার্ভিস গুটিয়ে নিয়েছে। বিষয়টি ভিন্নখাতে নেয়ার কোন সুযোগ নেই বলেও সিলেট ও সুনামগঞ্জের পরিবহন নেতাদের মন্তব্য।
বিআরটিসি’র ম্যানেজার (অপারেশন্স) নূর-ই আলম জানান, সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে যাত্রীর চাহিদা বিবেচনায় এ পরিষেবা আরো বিস্তৃত করার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি জানান, আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে কোরিয়া থেকে আরো ৩৪০টি উন্নত মানের বাস দেশে আসবে। তখন হয়তো এ রুটে বাস চলাচলের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হবে।
এ প্রসঙ্গে বিআরটিসি’র সিলেট বাস ডিপোর ম্যানেজার সুহেল রানা বলেন, আমরা যাত্রীদের চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছি। সে অনুযায়ী চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও জানান তিনি।
সিলেট-সুনামগঞ্জ রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা জানান, এ রুটে গণপরিবহন সেবার মান কাক্সিক্ষত না হওয়ায় সিলেট ও সুনামগঞ্জে লাগাতার আন্দোলন শুরু হয়। এর প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ৩ জুন সিলেট-সুনামগঞ্জ রুটে বিআরটিসি বাস সেবা চালু হয়।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর হায়াতুল ইসলাম আখঞ্জি বলেন, যাত্রীদের দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় এই রুটে বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু হয়। এই সার্ভিস অব্যাহত রাখার দাবি জানান তিনি।
সিলেটস্থ সুনামগঞ্জ সমিতির সহ-সভাপতি অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বাবর বলেন, দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে চালু হওয়া বিআরটিসি বাস সার্ভিস বন্ধের বিষয়টি দুঃখজনক। এ ব্যাপারে তিনি সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
বিআরটিসি বাস সার্ভিস বন্ধ না করার দাবি জানিয়ে পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা বলেন, বেসরকারি বাসের পাশাপাশি বিআরটিসি বাস চালু থাকলে বাস সেবার প্রতিযোগিতা নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি সেবার মান আরো উন্নত হবে বলে তিনি জানান।
সিলেট বাস মালিক সমিতির সেক্রেটারি আবুল কাসেম জানান, সিলেট-সুনামগঞ্জ রুটে পুরনো ও লক্কর ঝক্কর মার্কা বাস নিয়ে বিআরটিসি প্রতিযোগিতায় নেমে টিকতে পারেনি। তাদেরকে কোন প্রতিবন্ধকতায় ফেলা হয়নি দাবি করে তিনি জানান, শুরুতে বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও পরবর্তীতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তা নিষ্পত্তি হয়ে যায়।
সুনামগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জহির বলেন, বিআরটিসি বাস সার্ভিস সময়োপযোগী না হওয়ায় জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। পরিবহন মালিক-শ্রমিক নিলাদ্রির মতো উন্নত বাস সার্ভিস চালু করায় জনগণের ব্যাপক সাড়া পড়ে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেট-সুনামগঞ্জ রুটে উন্নত বাস সার্ভিস চালুর দাবিতে ২০১৫ সালে তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান এমপির কাছে স্মারকলিপিও দেয়া হয়। এমনকি, বিআরটিসি বাস চালুর দাবিতে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কয়েকটি সংগঠন মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। ওই আন্দোলনের ফসল হিসেবে সিলেট-সুনামগঞ্জ রুটে বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালুর সিদ্ধান্ত হয়। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের আপত্তি আর ধর্মঘটের মধ্যেই সিলেট-সুনামগঞ্জ রুটে ২০১৯ সালের ৩ জুন বিআরটিসি বাস সার্ভিস আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালুর প্রতিবাদ করেন ওই রুটে চলাচলকারী পরিবহনের মালিক ও শ্রমিকরা। তারা কয়েক দফায় পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেন। অবশ্য প্রশাসনের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে পরিবহন ধর্মঘট স্থগিত করা হয়।
বিআরটিসি সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ভাড়া তুলনামূলক কম হওয়ায় আন্তঃজেলা রুটে বিআরটিসি বাসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তারপরও বেসরকারি পরিবহন মালিকদের চাপে নতুন রুটে বাস সার্ভিস চালু করতে গিয়ে বারবার বাধার মুখে পড়ে সরকারি পরিববহন সংস্থাটি। ১৬ বছর আগের এক চুক্তির সুযোগ নিয়ে পরিবহন মালিকরা বিআরটিসিকে বারবার চাপে ফেলছে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।