শীতের দাপট
সিলেটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কমছে উপস্থিতির হার
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:২৬:৩৮ অপরাহ্ন
এনামুল হক রেনু :
মাঘের হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে পুরো সিলেট। একদিকে কনকনে ঠান্ডা বাতাস অন্যদিকে কুয়াশার দাপট।
এই দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের যে উপস্থিতি ছিল, ধীরে ধীরে তা কমতে শুরু করেছে। অনেক অভিভাবককে সন্তানদের নিয়ে সকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটতে দেখা গেলেও কেউ কেউ সন্তানের সুস্থতার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে স্কুল-কলেজে পাঠাচ্ছেন না । তারা বলছেন, তীব্র শীতের কারণে কিছুদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা উচিত। আর শিক্ষকরা বলছেন, তারা অধিদপ্তরের নির্দেশনার বাইরে যেতে পারবেন না। যতক্ষণ নির্দেশ না পাবেন ততক্ষণ তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখতে হবে।
জানা গেছে, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর আগে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রির নিচে নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয় মাউশি।
এদিকে, সারাদেশের মতো সিলেটেও দিনের একেক সময় একেক ধরনের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সিলেটে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি মৌসুমের মধ্যে সবচেয়ে কম বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর আগে গত বুধবার সিলেটের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। আর মঙ্গলবার তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৫০ ডিগ্রি। কিন্তু বেলা বাড়ার সাথে সাথে রৌদ্রের দেখা মিললেও দিনভর হিমশীতল অবস্থা বিরাজ ছিল সারা সিলেট জুড়েই। গতকাল বৃহস্পতিবার স্কুল কলেজ খোলা থাকলেও উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম।
নগরীর মিরাবাজারস্থ কিশোরী মোহন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুরাইয়ার মা সুমাইয়া বেগম জানান, প্রচুর ঠান্ডা। সকাল বেলা আসতে অনেক কষ্ট হয়। অনেক শিশুদের ঠান্ডা জনিত সর্দি-কাঁশি-জ্বর হচ্ছে। ঠান্ডা লাগলে শ্বাসকষ্টও বেড়ে যায়। তাছাড়া শীতে ঘুম থেকে উঠতেও দেরি হয়। তাই শিশুদের নিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। এ অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ কিংবা সময় পরিবর্তনের দাবি তুলে ধরেন তিনি।
নগরীর পূর্ব শাহী ঈদগাহস্থ সিলেট সরকারি মডেল স্কুল ও কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আবু তাহের বলেন, বাইরে অনেক ঠান্ডা। ক্লাস করতে খুব কষ্ট হয়। ঠান্ডা বেশি হলে বাসা থেকে বের হইনা।
শিবগঞ্জ সেনপাড়াস্থ প্রেসিডেন্সী স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল নাজমুল করিম জানান, শীতে উপস্থিতির হার প্রায় ২০ ভাগ কমেছে। আগে ৯০-৯৫ ভাগ উপস্থিতি থাকলেও এখন শতকরা ৬০-৬৫ ভাগ শিক্ষার্থী স্কুলে আসছে। অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের খোঁজ নিতে গেলে অভিভাবকেরা বলছেন, ঠান্ডা লেগেছে অসুস্থ।
মিরাবাজারস্থ শাহজালাল জামেয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল গোলাম রব্বানী বলেন, শীতের কারণে বিদ্যালয় বন্ধ রাখার একটি পরিপত্র জারি হয়েছে। শীতের প্রকোপ বেশী হলে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে, অতিরিক্ত শীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতি কিছুটা কমেছে বলেও জানান তিনি।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)’র সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক প্রতাপ চৌধুরী বলেন, ঠান্ডায় শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমেছে বলে অনেক শিক্ষক জানিয়েছেন। কিন্তু অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা রয়েছে দিনের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নীচে নামলে ডিডি ও ডিইও এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। নতুন নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের কিছুই করার নেই।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের আব্দুল মুহিত বলেন, সিলেটে প্রতিদিনই তাপামাত্রা কমছে। গতকাল বৃহস্পতিবার মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো এখানে। আরও কয়েকদিন শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানান তিনি। তিনি জানান, সিলেটে গত পাঁচদিন ধরে তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রির উপরে উঠছে না।