সুরমা এখন খেলার মাঠ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ৩:৫১:৫৪ অপরাহ্ন

আহমাদ সেলিম :
‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে।’ এই পংক্তি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমাদের ছোট নদী’ কবিতার। শৈশবে পাঠশালার টেবিলে এই কবিতা পড়েননি, এমন মানুষ পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ। তবে, বাস্তবে সেরকম একটি নদী খুব কম লোকই দেখেছেন। কিন্তু বর্তমানে কবিতার সেই চিত্রকল্পটি যেন ফুটে ওঠেছে সুরমা নদীতে। নদীর বেশ কিছু জায়গায় বহু চর জেগে উঠেছে। সেই চরে রোজ বিকেলে ক্রিকেট খেলে শিশু-কিশোররা।
সর্পিল আকৃতির সুরমা, সিলেটের প্রধান নদী। একসময়কার খরস্রোতা সুরমা এখন যেন অসুস্থ এক নদীর নাম। চর জেগে ওঠেছে নদীর বিভিন্ন স্থানে। কাজিরবাজার, কুশিঘাটসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় এক তৃতীয়াংশ শুকিয়ে গেছে। সেই শুকনো স্থানে প্রতিদিন সকাল, দুপুর কিংবা বিকেলে ফুটবল-ক্রিকেট খেলার ধুম পড়ে। কেউ কেউ সবুজ শাকসবজিও ফলাচ্ছেন চরে।
সরেজমিন সেই চিত্র দেখে অনেকেই থমকে গেছেন। বড় নদীটি শুকিয়ে পাঁচফুট সীমানায় এসে থেমেছে। পানিও হাঁটুর নিচে। ছোট শিশুরা পায়ে হেঁটে দিব্যি সুরমা পাড়ি দিচ্ছে যখন তখন। আবার কাজিরবাজার এলাকায় দেখা গেছে অন্যচিত্র। ময়লা আবর্জনার ছড়াছড়ি সবদিকে। তার মধ্যে পলিথিন, প্লাস্টিক বেশি। দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে। অনেক শিশু ব্যাগভর্তি করছে সেই প্লাস্টিক কুড়িয়ে।
একটি নদীকে ঘিরে থাকে অনেক গল্প। কেউ মাছ ধরে, কেউ নৌকা চালায়। কেউ ফসলের প্রাণ খুঁজে নেন নদী থেকে নিয়ে সেচ সুবিধা। নদীর বালু দিয়েই চলে ইমারত তৈরির কাজ। পাখিরাও আহার খুঁজে এই নদী থেকে। কাজেই নদী অসুস্থ হয়ে গেলে, অনেকগুলো জীবনে আধাঁর নেমে আসে।
কাজিরবাজার এলাকার বাসিন্দা মামুন, আব্বাস মিয়াসহ বেশ কয়েকজন জানান, শহরের ভেতর নদীর সবচেয়ে বেশি সর্বনাশ হচ্ছে কাজিরবাজার এলাকায়। চর জেগে ওঠার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম নদীরপাড় দখল। বছরের পর বছর প্রভাবশালীরা পাড় দখল করে ব্যবহার করছেন, ব্যবসা করছেন।
সুরমা নদীর কুশিঘাট এলাকায় যেখানে ক্রিকেট খেলা চলছে, সেই তরুণরা নদীকে ঘিরে খেলার মাঠ পেয়ে যেমন খুশি তেমনি বিচলিতও। তারা বলছেন, গত দুই মাস থেকে তারা এভাবে খেলছেন শুকিয়ে যাওয়া নদীতে। দিনশেষে আবার মনও খারাপ হয় নদীর করুণ দশা দেখে।
সেলিম, জসিম, তারেক সহ কয়েকজন কলেজ পড়–য়া তরুণ বলেন, ‘একসময় যে জায়গা নৌকা দিয়ে পার হতাম, সেই নদীর বুকে আমরা বল ছুঁড়ে দিচ্ছি এখন।’
কুশিঘাট এলাকার বাসিন্দা গোলজার আহমদ জগলু বলেন, ‘সুরমা নদী হেঁটে পার হবো এটা স্বপ্নেও ভাবিনি। তিনি আরও বলেন, ‘সুরমার সাথে নদীনির্ভর বহু জীবনও যেন শুকিয়ে গেছে। তিনি বলেন, নদীতে খনন কাজও চলছে, সুষ্ঠুভাবে সেই কাজ শেষ হলে নদী হয়তো প্রাণ ফিরে পাবে।’
কথা হলে সারি বাঁচাও আন্দোলনের সমন্বয়ক তরুণ গবেষক আব্দুল হাই আল হাদী জানান, ‘সিলেটের অধিকাংশ নদীর বেহাল দশা। যথাসময়ে খননের অভাবে, প্রভাবশালীদের দখলে সিলেট বিভাগের বহু নদী অসুৃস্থ হয়ে পড়েছে। এগুলোর পরিচর্যা না হলে একসময় মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।’
যোগাযোগ করা হলে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানান, ‘দুইপাড় নদীর স্বাধীনতার জায়গা, নদীর অধিকারের জায়গা। মানুষের আঘাতে সেই পাড়গুলোর স্বাধীনতা সর্বনাশে পরিণত হয়েছে। তবুও আমরা নদীর খনন কাজ শুরু করেছি। সুরমা নদীর কুশিঘাট এলাকায় আমাদের খনন কাজ চলছে। বর্ষার আগেই সেই খনন কাজ শেষ হবার কথা রয়েছে। খনন শেষ হলে নদীর এই দূরাবস্থা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবো।’