কিবরিয়া হত্যার ১৯ বছর
বিচার নিয়ে হতাশ স্বজনরা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ৫:২১:২৭ অপরাহ্ন
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: আজ ভয়াল ২৭ জানুয়ারী। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যার ১৯ বছর পূর্ণ হলো। দফায় দফায় তদন্তের বেড়াজালে আটকে থাকা ভয়ানক এ হত্যাকান্ডের বিচার এখনও আলোর মুখ দেখছেনা। সাক্ষি না আসা, আসামীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় ঠিকমতো আদালতে হাজির না হতে পারাসহ বিভিন্ন জটিলতায় বিচার কার্যক্রম দীর্ঘসূত্রিতায় পড়েছে। এ অবস্থায় বিচার নিয়ে হতাশার পাশাপাশি ক্ষোভ বাড়ছে নিহতদের পরিবার ও স্থানীয়দের মনে।
নিহত আব্দুর রহিমের স্ত্রী আছিয়া খাতুন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ১৯ বছর ধরে শুধু বিচার চেয়েই যাচ্ছি। এখনও পর্যন্ত আমাদের মামলার বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। বিচার আদৌ হবে কি-না জানিনা। তিনি বলেন, আমরা সন্তানাদি নিয়ে এত কষ্ট করছি, কিন্তু কেউ আমাদের খবরাখবর নেননা। কোন সাহায্য সহযোগিতাও করেননা। জনপ্রতিনিধির প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, তার কাছে গেলে আমাদের ধমক দিয়ে বিদায় করেন।
নিহত সিদ্দিক আলীর ছেলে মো. মুখলেছুর রহমান বলেন, আমরা শুধু বিচার চাই। কিন্তু এত বছরেও পাইনি। আর বিচার পাব বলেও বুঝিনা। তবুও আমরা দ্রুত এ হত্যাকান্ডের বিচার চাই।
নিহত আবুল হোসেনের ছেলে মো. আব্দুল মতিন বলেন, আমার বাবা ঘটনার দিন কিবরিয়া সাহেবের সভার আমন্ত্রণ পেয়ে যান। সভা শেষ হওয়ার পর গ্রেনেড হামলায় তিনি মারা যান। আজ পর্যন্তও আমরা কোন বিচার পাচ্ছিনা। আমরা উক্ত হত্যার দ্রুত বিচার দাবি করছি।
নিহত শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, দেশে বর্তমানে আইনের শাসন নেই। এটিই প্রমাণ হয় যে, এত দিনেও একটি সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি, সুষ্ঠু বিচারও হয়নি। বিরোধী দল বিএনপির কিছু নিরীহ লোককে এ মামলায় জড়িত করা হয়েছে। অনেকেই তারা এ মামলা সম্পর্কে কিছু জানেও না। তাদেরকে অন্যায়ভাবে এ মামলায় ঢুকানো হয়েছে। এখনও আসল খুনিরা খুব ভালোই আছে। তিনি বলেন, কার দোষ, কি করে ঘটনাটি ঘটেছে, তা হবিগঞ্জের মানুষ জানে। তবে এ সরকারের শাসন যতদিন চলে ততদিন বিচার পাব এ আশা আমরা কেউ করিনা। এরকম শত শত রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের বিচার মানুষ পাচ্ছেনা। একদিন এসব হত্যাকান্ডের বিচার মানুষ পাবে।
মামলার আইনজীবী সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (সরকারি কৌশলী) অ্যাডভোকেট সরওয়ার আহমেদ চৌধুরী আবদাল বলেন, ১৭১ জন সাক্ষির মাঝে এখনও পর্যন্ত ৫০ জনের সাক্ষ্য নেয়া সম্ভব হয়েছে। বেশ কয়েকবার তদন্ত হওয়ার কারণে এ মামলায় সাক্ষি অনেক বেশি। সাক্ষিগুলোকে নিয়ে আসার জন্য আদালত থেকে ওয়ারেন্টসহ সব ধরণের প্রক্রিয়া নেয়া হচ্ছে। আমি আশা করি এ বছর মামলায় ভালো একটি অবস্থানে যাওয়া সম্ভব হবে। আদালতের প্রক্রিয়ায় কোন ত্রুটি নেই। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি সাক্ষি নিয়ে আসার জন্য। তিনি বলেন, এখানে সাক্ষি আসার উপর নির্ভর করছে মামলা শেষ হতে কতদিন লাগবে। তবে সাক্ষি নিয়মিত আসলে বছর দেড় বছরের মধ্যেই মামলাটি শেষ পর্যায়ে চলে আসবে।
গ্রেনেড হামলায় আহত হবিগঞ্জ সদর আসনের এমপি মো. আবু জাহির বলেন, যেভাবে দেশ জাতি অপেক্ষা করে এ বিচারের জন্য, তেমনি আমি এবং আমার পরিবারও এ ঘটনার বিচারের জন্য অপেক্ষা করি। দেশবাসী জানবে প্রকৃত খুনিদের বিচার হয়েছে। আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতাদের তালিকা করে হত্যার জন্য বিএনপি একটি তালিকা করেছিল। তারই অংশ হিসেবে হবিগঞ্জে এ ঘটনা ঘটিয়েছিল। এ ঘটনার মামলার বিচার অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আশা করি দ্রুতই বিচার সম্পন্ন হবে।
২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারী হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া। সভা শেষে ফেরার সময় দুর্বৃত্তদের গ্রেনেড হামলায় তিনি ও তার ভাতিজা শাহ মঞ্জুর হুদাসহ মোট ৫ জন নিহত হন। এতে আহত হন জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও এমপি অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহিরসহ ৪৩ জন। এ ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করা হয়। কয়েক দফা তদন্ত শেষে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। এরপর লোমহর্ষক এ হত্যাকান্ডের বিচার শুরু হয়েছে প্রায় ৭ বছর পূর্বে। কিন্তু নানা কারণে বিচারকার্যে দীর্ঘসূত্রিতার সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে দিন দিন ক্ষোভ বাড়ছে নিহতদের স্বজনদের মাঝে।