সড়কের অধিকাংশ স্থান জুড়েই খানাখন্দ
সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ ॥ জনদুর্ভোগ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ৯:৩৯:৫১ অপরাহ্ন
আনাস হাবিব কলিন্স :
সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ থাকায় জামালগঞ্জ উপজেলার বিপুল সংখ্যক লোককে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিকল্প সুনামগঞ্জ-সাচনা সড়ক হয়ে লোকজন চলাচল করলেও সংকটের সমাধান হচ্ছে না। কারণ, বেশিরভাগ লোকজন সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কের সুবিধাভোগী।
জেলা সদর থেকে ৩৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের ১৩ কিলোমিটার ভালো হলেও দিরাই সড়কের মদনপুর থেকে জামালগঞ্জ উপজেলা সদর পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার অংশ জুড়ে রয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ। ২০২২ সালের আকস্মিক বন্যায় রাস্তার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও এখন পর্যন্ত সংস্কার হয়নি। সড়কের বেহাল দশার কারণে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ রয়েছে কিছুদিন থেকে। জরুরি প্রয়োজনে মাঝেমধ্যে ভাঙ্গা ও বড় বড় গর্ত ডিঙ্গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে কিছু যানবাহন। তবে, বেশিরভাগ চালক এই সড়কে গাড়ি চালাতে অনীহার কারণে বিপাকে পড়া লোকজনের দুর্ভোগের শেষ নেই।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের জামালগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল মালেক মিয়া জানিয়েছেন, বন্যা পরবর্তী রাস্তা সংস্কার প্রকল্পের জন্য এডিবি প্রতিনিধিরা এ সড়কটি দফায় দফায় পরিদর্শন করলেও শেষ পর্যন্ত কোন বাজেট বরাদ্দ হয়নি। যার কারণে ইমার্জেন্সি বাজেট দিয়ে রাস্তার ভাঙ্গা অংশে মেরামত কাজ চালানো হচ্ছে। আগামী অর্থবছরে এ সড়কে নতুন বরাদ্দ আসবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, সুনামগঞ্জ জেলা সদরের সাথে উপজেলা সদরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি সংস্কার না হওয়ায় জনমনে প্রচন্ড ক্ষোভ বিরাজ করছে। ওই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, বন্যা পরবর্তী সময়ে এ সড়ক সংস্কারের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেলেও বরাদ্দের সময় অজ্ঞাত কারণে সেটি বাদ পড়ে। পরবর্তীতে কম গুরুত্বপূর্ণ সড়কে প্রাপ্ত বরাদ্দ দিয়ে সাচনা-সুনামগঞ্জ সড়ক সংস্কার হলেও অধিকাংশ লোকজন এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
স্থানীয় লোকজনের সাথে আলাপ করে জানা যায়, বর্তমানে জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জে চলাচলকারী লোকজন বাধ্য হয়ে বিকল্প পথ হিসেবে সাচনা-সুনামগঞ্জ সড়ক ব্যবহার করছেন। এতে জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ সড়কে চলাচলকারী ৫টি ইউনিয়নসহ ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলার লোকজনকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এসব ইউনিয়নগুলোর মধ্যে রয়েছে- জামালগঞ্জ সদর, ভীমখালি ও ফেনারবাঁক এবং সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠইর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাক ইউনিয়নের লোকজন। অপরদিকে সুনামগঞ্জ-সাচনা বিকল্প পথে যান চলাচল করায় সাচনা বাজার, উত্তর জামালগঞ্জ ও বেহেলী ইউনিয়নের লোকজন সুবিধা ভোগ করছেন।
জামালগঞ্জ থেকে জেলা সদরের মধ্যবর্তী দিরাই সড়কের কাঠইর পর্যন্ত রাস্তার বেহাল দশায় জনগণের ভোগান্তির অন্ত নেই। মূল সড়কের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় খানাখন্দ। অনেক স্থানেই আরসিসি ঢালাই উঠে ইট সুরকি বের হয়ে আছে। বিপজ্জনক অবস্থায় বেরিয়ে আছে রড, ইট-পাথর। যে কোনো সময় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। উজ্জ্বলপুরের ঝুঁকিপূর্ণ ভাঙ্গাটি আরও ভয়াবহ। এসব রাস্তায় চলাচলকারী লোকজনকে ইটের ঝাঁকুনি সইতে হচ্ছে। মুমূর্ষু রোগীসহ বয়স্ক নারী-পুরুষ নিয়ে চলাচল করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া, জাল্লাবাজ মধ্যবর্তী ও জাল্লাবাজ-বাহাদুরপুর ব্রিজের উভয় অংশে মাটি সরে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
এই সড়কে সিএনজি অটোরিক্সা চালক আলী হোসেন জানান, কাঠইর থেকে সাখাতি এবং নোয়াগাঁও জাল্লাবাজ অংশে চলাচল করতে হচ্ছে খুব কষ্টে। প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে অনেক সিএনজি চালক সাচনা-সুনামগঞ্জ রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
স্থানীয় সমাজকর্মী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, হাওরবেষ্টিত সুনামগঞ্জ জেলার উপজেলা এমনিতেই অবহেলিত। এই জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটি দ্রুত সংস্কার না হলে জনদুর্ভোগ বাড়বে। এডিবি প্রতিনিধিরা শেষ পর্যন্ত এ সড়কে বরাদ্দ না দেয়ার পেছনে কারো কোন ইন্ধন আছে কি না, সেটি খতিয়ে দেখার আহবান জানান তিনি।
সড়কের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সুনামগঞ্জস্থ জামালগঞ্জ সমিতির সভাপতি আব্দুর রব। তিনি বলেন, ওই রাস্তা সংস্কার না হলে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। জনস্বার্থ বিবেচনায় দ্রুত এই রাস্তা সংস্কারে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল মালেক মিয়া আরো বলেন, এডিবি প্রতিনিধিরা এ সড়কে দুটি ব্রিজ নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছেন। এর মধ্যে একটি ৯৯ মিটার ও অপরটি ২০ মিটার। আগামী অর্থবছরে ওই সড়কের জন্য বরাদ্দের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই সংস্কার কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।
জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ বলেন, বিগত বন্যায় জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ রাস্তার ক্ষতি হয়েছে বেশি। সড়ক সংস্কারের বিষয়টি অনেকবার দায়িত্বশীল পর্যায়ে তুলে ধরেছি। কিন্তÍু এ পর্যন্ত কোন বরাদ্দ আসেনি। তাই নিজস্ব ফান্ড থেকে সংস্কার করে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। পরিপূর্ণ সংস্কারের জন্য প্রকল্প তৈরি করে পাঠানো হয়েছে। বর্তমান সংসদ সদস্য এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী কমিউনিটি নেতা সাইফুল ইসলাম। তিনি দ্রুত এই সড়ক সংস্কার করে যান চলাচলের উপযোগী করার দাবি জানিয়েছেন।