বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অতিথি নিয়েই এমসি কলেজের অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ অবরুদ্ধ!
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৩:২০:১০ অপরাহ্ন
এমসি কলেজ প্রতিনিধি: সাড়ে চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর মুক্ত হয়েছেন সিলেটের মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল আনাম মো. রিয়াজ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে কলেজের প্রশাসনিক ভবনের তালা খুলে দিলে তিনি সহ আটকে থাকা কলেজের উপাধ্যক্ষ, অন্যান্য শিক্ষক ও প্রশাসনিক ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মুক্ত হন। এর আগে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে শিক্ষক ও হলের পানি সংকট দূরীকরণের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের তিনটি গেইটে তালা দেন শিক্ষার্থীরা। সূত্র জানিয়েছে, কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠানে অতিথি নির্ধারণ নিয়ে এই আন্দোলন।
জানা যায়, কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক সংকট, বঙ্গবন্ধু হলের পানি সমস্যা, ছাত্রী হলের নামকরণ নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলামকে নিয়ে কলেজ অধ্যক্ষের সাথে বৈঠকে বসেন শিক্ষার্থীরা। দেড় ঘণ্টা ধরে চলা এই বৈঠকে কোন সমাধান না হওয়ায় অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, কয়েকজন শিক্ষক ও প্রশাসনিক ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অফিসে রেখে বাইরে তালা দেয় আন্দোলনকারীরা।
পরে তারা প্রশাসনিক ভবনে উঠার সিঁড়িতে ও সন্ধ্যায় প্রশাসনিক ভবনের প্রধান গেইটে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে। পরে রাত সাড়ে আটটার দিকে প্রশাসনিক ভবনে যান সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা রুহেল আহমদ, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. নাজমুল ইসলাম, এমসি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা দিলোয়ার হোসেন রাহী, হাবিব ও সৌরভ। প্রায় আধা ঘণ্টার বৈঠক শেষে আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করার জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের আহবান জানান অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল আনাম মো. রিয়াজ। তখন তারা আন্দোলন স্থগিত করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের একাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী জানান, আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এ লক্ষ্যে গত ১ ফেব্রুয়ারি কলেজের সকল সংগঠনের সাথে মতবিনিময় করেন কলেজ প্রশাসন। তখন কলেজ ছাত্রলীগ নেতা দিলওয়ার হোসেন রাহী প্রস্তাব তুলেন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট রনজিত সরকারকে করার জন্য।
তখন কলেজের অধ্যক্ষ জানান যে, সিলেটে একজনই মন্ত্রী হয়েছেন; এবার তাকে প্রধান অতিথি করার জন্য এবং অ্যাডভোকেট রনজিত সরকারকে বিশেষ অতিথি করার জন্য। তখন ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ একপ্রকার নারাজ হয়ে সভা ত্যাগ করেন। আর গতকাল বৃহস্পতিবার কলেজ মাঠে চলা খেলা থামাতেও যান কলেজ ছাত্রলীগ নেতারা। সেখানে কলেজের খেলা না থাকায় এবং কয়েকজন শিক্ষকের অনুরোধে তারা চলে আসেন বলে জানান কলেজের এক শিক্ষক। তবে এই অতিথি করাকে নিয়েই এই আন্দোলন বলে কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে কলেজ ছাত্রলীগ নেতা দিলওয়ার হোসেন রাহীকে বারবার ফোন দিলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ধরে কলেজে পানি সংকট আর ইতিহাস বিভাগে শিক্ষক নেই। এ বিষয়ে কলেজে বারবার জানিয়েও শিক্ষার্থীরা কোনো সুরাহা পাচ্ছেন না। আমি এটা বলেছি যে, আপনি যেকোনো মন্ত্রী বা নেতাকে বললেই তারা এই পানি সংকট দূর করার জন্য ২/৩ লাখ টাকা দিয়ে দিবে, আর আপনাকে কেউ না করবে না।
এ বিষয়ে এমসি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল আনাম মো. রিয়াজ জানান, ‘প্রশাসনিক ভবনের তিনটি গেইটেই তালা দিয়ে তারা অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। যার কারণে আমি ভাইস প্রিন্সিপাল সহ আরো টিচাররা অফিসে আটকা পড়ি। হলে পানি সমস্যা দূরীকরণে আমি পানির লাইন লাগিয়ে দিয়েছি। কিছুটা সমস্যা লাঘব হয়েছে। বাজেট না আসলে আমি তো কাজ করতে পারছি না। আগামী রোববারের মধ্যে এটা ঠিক করার চেষ্টা করবো। ইতিহাস বিভাগে টিচার নেই, এ ব্যাপারে আমি সচিব মহোদয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়েছি। এটার সমাধান তো আমার হাতে নেই।’
তিনি আরও জানান, তাদের আরেকটা দাবি হলো- ‘স্যার আপনি আমাদের সাথে কোনো সহযোগিতা করেন না। আপনি তো সবকিছু নিজ প্রশাসন নিয়েই করে ফেলেন।’
অতিথি করা নিয়ে এই অবরুদ্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা আমাকে মুখে কিছু বলেনি। তবে তাদের এক্সপ্রেশনটা এটা বুঝিয়েছে। তারা আওয়াজ করেনি। তবে এটাই মূলত বুঝিয়েছে। তারা বলে যে- আপনাকে তো মন্ত্রীসহ সবাই পছন্দ করেন। বারবার বলে যে আপনার সাথে তো মন্ত্রীর আলাপ হয়। আপনি বলে দিলেই ২ লাখ ৩ লাখ টাকা দিয়ে দিবে।
সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরান (রহ.) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ জানান, প্রশাসনিক অনুমতি না পাওয়ায় আমরা কলেজের বাইরে ছিলাম। তবে কোনো সংঘাত ঘটেনি। রাতে বিষয়টির সমাধান হওয়ায় আমরা সেখান থেকেই চলে আসি। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।