সমুদ্রপথে হজযাত্রী পরিবহনের বিষয়টি বিবেচনার তাগিদ
প্যাকেজের দাম কমলেও সিলেটে বাড়েনি হজযাত্রী
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:০৯:৩৩ অপরাহ্ন
আনাস হাবিব কলিন্স :
সরকারি ও বেসরকারি খাতে গত বছরের তুলনায় প্যাকেজের দাম কমলেও এবার সিলেট অঞ্চলে হজযাত্রী বাড়েনি। অতিরিক্ত খরচের কারণে হজ করা অনেকের সামর্থ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে মন্তব্য ভুক্তভোগীদের। বিকল্প হিসেবে অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান ওমরাহ পালনের দিকে ঝুঁকছেন বলে তাদের মন্তব্য।
হজ এজেন্সির সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হজ যাত্রীদের বিমান ভাড়া না কমিয়ে অন্যান্য সার্ভিসে ব্যয় হ্রাস করা ‘শুভংকরের ফাঁকি’। পবিত্র হজের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে সরকারকে আরো নমনীয় হওয়ার পরামর্শ তাদের। এ ক্ষেত্রে হজযাত্রী বহনে সকল এয়ারলাইন্সকে অনুমোদন এবং সমুদ্রপথে হজযাত্রী বহনের বিষয়টি বিবেচনার তাগিদ দেন তারা।
হজ এজেন্সিস অব বাংলাদেশ (হাব) সিলেট চ্যাপ্টারের সভাপতি ও লতিফ ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী জহিরুল কবির চৌধুরী শীরু জানান, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এ পর্যন্ত সিলেট অঞ্চলের প্রায় ২৪শ’ হজযাত্রীর নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল প্রায় ৩ হাজার। ইসলামিক ফাউন্ডেশন সিলেট জেলা সূত্রে জানা গেছে, এবার সরকারিভাবে হজের জন্য নিবন্ধিত হয়েছেন ১৮ জন।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবার হজে যাওয়ার সর্বনি¤œ প্যাকেজ ধার্য হয় ৫ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। আর, বেসরকারিভাবে সর্বনি¤œ প্যাকেজ ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা। ২০২৩ সালে সরকারিভাবে হজ প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছিলো ৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। বেসরকারি প্যাকেজে খরচের সর্বনিম্ন সীমা ছিল ৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা।
হাব সূত্র জানায়, সিলেট অঞ্চলের ৩৫টি ট্রাভেল এজেন্সির হজযাত্রীর নির্ধারিত কোটা পূরণ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দু’তিনটি এজেন্সি মিলে একটির নামে হজের নিবন্ধন চালাচ্ছে। করোনা মহামারির কয়েক বছর আগ থেকেই সিলেট অঞ্চলের হজ এজেন্সিগুলো তাদের নির্ধারিত হজযাত্রীর কোটা পূরণ করতে পারছে না। প্রাক নিবন্ধন সংক্রান্ত অসচেতনতাসহ নানা কারণে কমে যায় হজযাত্রীর সংখ্যা। এর মধ্যে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) সরবরাহ সংক্রান্ত জটিলতাও রয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি সিলেট মহানগর শাখার সভাপতি মাওলানা হাবিব আহমদ শিহাব বলেন, অতিরিক্ত খরচের কারণে হজ করা অনেকের সামর্থ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে সিলেটেও। বিকল্প হিসেবে অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলিম ওমরাহ পালন করছেন। ওমরাহ যাত্রীরা তাদের পছন্দসই বিমানকে বেছে নিতে পারছেন। হজের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে সরকারকে আরো নমনীয় হওয়ার আহবান জানান তিনি।
ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি সিলেটের উপ-পরিচালক মাওলানা শাহ নজরুল ইসলাম বলেন, জাহাজে করে কম খরচে হজ যাত্রী বহনে ‘হিজবুল বাহার’ চালু করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সে ব্যবস্থা পুনরায় চালু হলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে আটাব সিলেট চ্যাপ্টারের সাবেক সভাপতি আব্দুল জব্বার জলিল বলেন, হজ যাত্রীদের বিমান ভাড়া না কমিয়ে অন্যান্য সার্ভিসে ব্যয় হ্রাস করা ‘শুভংকরের ফাঁকি’ বলে তার মন্তব্য।
এফবিসিসিআই-এর সাবেক পরিচালক ও সিপার এয়ার সার্ভিসের স্বত্বাধিকারী খন্দকার সিপার আহমদ বলেন, বর্ধিত খরচের কারণে ইচ্ছা থাকা সত্বেও অনেকেই হজে যেতে পারছেন না। সিলেট অঞ্চলের হজযাত্রীদের মধ্যে অনেক প্রবাসী রয়েছেন। এনআরবি কোটায় তাদের সম্পৃক্ত করা না গেলে সিলেটের হজযাত্রীর সংখ্যা আরো কমে যেত। সরকার হজযাত্রী বহনে সকল এয়ারলাইন্সকে অনুমোদন দিলে হজযাত্রা অনেকটা সহজ হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
হাব সূত্রে জানা যায়, সিলেটে হজের জন্য ৩৫টি ট্রাভেল এজেন্সির মধ্যে বিশটি এজেন্সি রয়েছে সক্রিয়। বাকীগুলো নামকাওয়াস্তে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব ট্রাভেল এজেন্সির মধ্যে রয়েছে আকাবা ট্রেডিং করপোরেশন, আল মনসুর এয়ার সার্ভিস লিমিটেড, বাংলাদেশ ওভারসীজ সার্ভিসেস, যাত্রীক ট্রাভেলস, জোনাকী ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড, কানিজ ট্রাভেল লিমিটেড, আলম ট্রাভেলস, মাহফুজ ট্রাভেলস, শিমন ওভারসীজ এক্সপ্রেস, সিপার এয়ার সার্ভিস, সিটি ওভারসীজ, কুহেতুর ওভারসীজ প্রাইভেট লিমিটেড, এলাইট ট্রাভেলস, সেন্ট্রাল এয়ার সার্ভিস, আলফা ট্রাভেল ইন্টারন্যাশনাল, নিউ মর্ডার্ন ইন্টারন্যাশনাল, লতিফ ট্রাভেলস প্রাইভেট লিমিটেড, মৌরী এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, শিপলু ওভারসীজ, ট্রাভেলন এয়ার সার্ভিসেস, আল ইহসান ট্রাভেলস, আবাবিল এয়ার সার্ভিস, আল শরীফাইন ট্রাভেল এন্ড ট্যুরস, ডিসকভারী সিলেট ট্রাভেল এন্ড ট্যুরস, ইকরা ট্রাভেল এন্ড ট্যুরস, মনসুর এন্টারপ্রাইজ, মারভেলাস মিডিয়া সার্ভিস, সোমা ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিসেস, সানশাইন ট্রাভেল এন্ড ট্যুরস, তাসফিক ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস, নিবরাস ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলস, ইউরোপা ট্রাভেলস, রব্বানী ওভারসীজ এভিয়েশন, এয়ার শাহপরাণ ইন্টারন্যাশনাল এবং আল মারওয়ান ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস।
সূত্র মতে, চলতি বছরে হজে যেতে ইচ্ছুকদের নিবন্ধনের অবশিষ্ট টাকা জমা দেওয়ার সময় নয় দিন এগিয়ে আনা হয়েছে। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিবন্ধনের বাকি টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। নিবন্ধনের অবশিষ্ট টাকা জমা দেওয়ার জন্য ২৯ ফেব্রুয়ারি দিন নির্ধারণ করেছিল মন্ত্রণালয়। এ বছর বাংলাদেশিদের জন্য হজ কোটা রাখা হয় ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮টি। তবে, গত ৬ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধনের শেষ দিনে মোট নিবন্ধিত হজ যাত্রীর সংখ্যা দাড়িয়েছে ৭৮ হাজারের কাছাকাছি। এর মধ্যে সরকারি মাধ্যমে ৪ হাজার ১৬৫ জন আর বেসরকারিভাবে ৭৪ হাজার ৪৫৫ জন নিবন্ধন করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।